সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে
সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ডস্থ তেতইয়্যা ছড়া প্রভাবশালীদের ক্রমবর্ধমান দখলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। পাহাড় থেকে সৃষ্ট সুদীর্ঘকালের প্রাচীন এই ছড়াটির উভয়পাশে বেপরোয়া দখলের কারণে কোনো কোনো অংশে এটি শীর্ণকায় নালার আকৃতি ধারণ করেছে। এতে বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়ে আশপাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করলেও ছড়াটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মহলের কোন পদক্ষেপই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাড়বকু- ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি তেতুইয়্যা ছড়াটির চারপাশে নির্বিচারে দখল করছে প্রভাবশালী মহল। কোথাও ছরা ভরাট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হচ্ছে, কোথাও ভরাট করে বসতভিটার সীমানা বৃদ্ধি করা হচ্ছে আবার কোথাও চাষাবাদ করতে গিয়ে ভরাট করা হচ্ছে এই ছড়া। ফলে ২৪ ফিটেরও বেশি আয়তনের এই ছড়া এখন অনেকাংশে সরু নালায় পরিণত হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি পয়েন্টে অনেকটা প্রকাশ্যেই বাড়বকু-ের তৈতইয়্যা ছড়াটি ভরাটের কাজ চলছে। দেখা যায় বাড়বকু- বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন সেবা ফিলিং স্টেশান নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীন নির্মাণ করা হচ্ছে তেতইয়্যা ছড়ার একেবারে মাঝামাঝি এলাকায়। এতে এই অংশে ছড়াটি একেবারে অর্ধেক হয়ে ভাগ হয়ে গেছে। ছড়ার ভেতরে ইটবালি, রড দিয়ে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। সেবা ফিলিং স্টেশান ছড়ার উত্তর পার্শ্বে। দক্ষিণ অংশে গড়ে উঠেছে একটি স-মিল। দেখা গেছে, স-মিল মালিকও ছড়ার ভেতরে মাটি ফেলে অনেকটা জায়গা দখলে নিয়েছে।
বর্তমানে এই অংশে ছড়াটি ১৪/১৫ ফুটও আছে কিনা সন্দেহ এলাকাবাসীর। পরিদর্শনকালে ছড়ার আশপাশের কয়েকজন এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যারা ছড়া রক্ষা করার তারাই যদি ভরাট করতে সহযোগিতা করে তাহলে এসব সম্পদ বাঁচানো যাবে কিভাবে? ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ বলেন, সেই ছোটবেলায় দেখেছি ছড়াটি অনেক বড় ছিলো। বর্ষাকালে পাহাড় থেকে ছড়ার পানি নেমে যেত সাগরে। এতে আমরা পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা পেতাম। ফসলহানি ঘটত না। কিন্তু এখন পাহাড় থেকে সাগর পর্যন্ত পুরো ছড়া এলাকায় ঘুরে দেখেন, চারিদিকে দখলের মহোৎসব চলছে। এখন বিভিন্ন স্থানে ছড়াটি ছোট হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এই স-মিল, সেবা ফিলিং স্টেশান থেকে শুরু করে যতগুলো প্রতিষ্ঠান কিংবা বাড়িঘর ছড়ার পাশে গড়ে উঠেছে সবগুলোর মধ্যেই কিছু না কিছু ছড়ার জায়গা দখল হয়েছে। ছড়ার তো মুখ নেই যে প্রতিবাদ করবে। যারা প্রতিবাদ করার তারাই তো রহস্যজনক কারণে চোখ বন্ধ রেখেছেন! স্থানীয়রা আরো জানান, যে গতিতে এই ছড়াটি দখল হচ্ছে তাতে এখনই দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া না নিলে অদূর ভবিষ্যতে ছড়াটি শুধু নথিপত্রে থাকলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। সরকারি ছড়া এভাবে দখলের কারণ জানতে চেয়ে সেবা ফিলিং স্টেশান কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে সেখানে গেলে ক্যাশিয়ার পরিচয় দানকারী এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে ম্যানেজার আকামত আলী ভালো বলতে পারবেন বলে জানান। তবে তার প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়বকু- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী ইনকিলাবকে বলেন, তেতইয়্যা ছড়াটি কেউ কেউ দখল করলেও আমরা যখন জানতে পারি উদ্ধারের চেষ্টা করি। তিনি বলেন, সেবা ফিলিং স্টেশান কর্তৃপক্ষ ওই ছড়ার মধ্যে ৪/৫ ফুট দখল করে ফেলেছিলো। সেটা জানতে পেরে আমরা লোক পাঠিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দিই। পরে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একটা পরিমাপ করে তাদের দখলকৃত জায়গা ছেড়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। এখন তারা নিজেদের জায়গাতে কাজ করছে বলে শুনেছি। তবে এর উত্তরপার্শ্বে স-মিল মালিকও মাটি ফেলে ছড়ার কিছু অংশ দখলে নিয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ। তিনি বলেন, তাদেরও আমি দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দিতে বলেছি। তারাও ওই দখল ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছে। এভাবে প্রকাশ্যে সরকারি ছড়া দখল বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া ইনকিলাবকে বলেন, এভাবে সরকারি ছড়া দখলের ঘটনা আমার জানা ছিলো না। অতিসত্বর খোঁজ নিয়ে দখলের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন