আদালত আর অফিস পাড়া নয়, চান্দিনার শহর ও শহরতলী-গ্রাম সবর্ত্রই রয়েছে শীতের প্রভাব। তবে নির্বাচনের গরমে কিছুটা হার মানছে পৌষের শীত। এখন চায়ের দোকানগুলোতে বইছে নির্বাচনী ঝড়। সকাল থেকে শুরু চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। নির্বাচনী আমেজে ধূমায়িত চায়ের কাপে চুমুকে চুমুকে চলে ভোট বিশ্লেষণ। সকল প্রতীক নিয়ে আলোচনা থাকলেও সবচেয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে। কথায় কথায় বের হয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো ও নেতাদের কর্ম-অপকর্ম সমূহ। নৌকা কত আসন পাবে? ধানের শীষ কত আসন পাবে? অন্য প্রতীকগুলোর ভাগ্য কী হবে?
কুমিল্লার হাড়িখোলা এলাকা, এখানে মিশ্র মানুষের বসবাস। প্রবাসী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক সকল পেশার মানুষ রয়েছে এই এলাকায়। একটি চায়ের দোকানে দেয়ালে স্টিকারে লিখা আছে, রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ। তবে কার নিষেধ কে শুনে? তরুণ মধ্যবয়সী আর বৃদ্ধা সবাই নিজের দেখা রাজনীতির চিত্র অঙ্কন করছেন কথার মাধ্যমে।
মো. আবেদ আলীর চায়ের চুমুকে বলেন, দেশের উন্নতি হইছে, বহুত উন্নতি হইছে। এই যে ঢাকা গেলাম দেখলাম সুন্দর রাস্তা-ঘাট, ফ্লাইওভার সব তো আ.লীগ করছে। আগে যে চাকরিজীবীর বেতন ছিল ১৫ হাজার তার বেতন হইছে ৩০ হাজার। আবেদ মিয়াকে থামিয়ে দিয়ে আলমগীর হোসেন বলেন, কাক্কু তুমি সরকারি চাকরি করোনা? আমিও না। শতে ৫ জন মানুষ তো সরকারি চাকরি করে না, তাদের কথা বইলা লাভ কী? তবে দু’জনের কথা শেষ না হতেই তৃতীয় ব্যক্তি আ.লীগ জিতুক আর বিএনপি জিতুক আমি সিএনজি ড্রাইভার সিএনজির ড্রাইভারই থাইকাম, আর আপনি কামলাই থাকবেন। গাড়ি চালাই ১৭ বছর, যে দলই ক্ষমতায় আসুক সে দলের নেতারাই আমাদের থেকে চাঁদাবাজি করে। নেতারা যে ২৪ ঘন্টা রাজনীতি করে তাদের পরিবার চালায় কীভাবে এই চাঁদার টাকা দিয়া। এভাবেই চলছে তর্ক-বিতর্ক। তারা রাজনীতিক না হয়েও তাদের কথার ধারাবাহিকতা আর যুক্তি দেখে মনে হয়, চায়ের দোকান নয়, মনে হয় মিনি পার্লামেন্ট।
রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ এমন স্টিকার কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে দোকানি কফিল উদ্দিন জানান, কিছুদিন আগে রাজনীতির আলাপে দু’পক্ষ মারামারি লেগে যায়, দোকানের জগ, বসার টেবিলসহ আসবাবপত্র ভেঙেছে। তাই এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ। স্টিকার লাগানের পর আলাপ বন্ধ হয়েছে কিনা? এ প্রশ্নে হাসি দিয়ে কফিল উদ্দিন বলেন, বন্ধ হয়নি বরং আরো বেড়েছে। এটা বন্ধ হলে ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যাবে। আগে চা বিক্রি হতো ৩শ কাপ, এখন বিক্রি হয় ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ কাপ।
এ চিত্রের বাইরে নয় উপজেলার অন্যান্য গ্রামের চা দোকানগুলোও, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার রড়ইকৃষ্ণ গ্রাম অজপাড়া এ গ্রামটিকে কুমিল্লা-চাঁদপুরের বর্ডার বললে হয়তো ভুল হবে না। কারণ এ গ্রামের পর রয়েছে ৫-৬ মাইল নিয়ে ঘুঘরার জলা, এরপর শুরু হয়েছে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা। ঘুঘরার জলার সড়কের টং দোকানে কথা হয়েছিল। পিপুয়া গ্রামের বেশী সংখ্যাক মানুষ কৃষক অল্প কিছু মানুষ প্রবাসীসহ অন্য পেশায় আছে। অজপাড়ার এ টং দোকানটিতে রাজনীতির আলাপ বেশ সরগরম। রাজনীতির কথার শুরুতে কিবরিয়া বলেন, বাজার ঠিক রাখতে পারবো যে, আমরা সে সরকারকে ভোট দেবো। মাছের দাম, তরকারির দামের দিক দিয়ে বর্তমান সরকার ভাল করেছে। তবে রকিব নামে অন্য এক কৃষক বলছিলেন, ঠিক হইলো কই? বিএনপির আমলে নুন কিনছি ১০ টাকা কেজি, এখন কিনি ৩৮ টাকা। আগে তেলের দর ছিল ৩৫-৪০ টাকা, এখন ১০০ টাকা। আমরার আয়তো সে হারে বাড়ে নাই, আগে দিন মজুরি করছি ১৮০/২০০ টাকা, এখন পাই ৪০০ টাকা সব কিছুর দাম বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন