অভ্যন্তরীণ ডেক্স
গাইবান্ধা ও সোনারগাঁওয়ে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নিহত হয়েছে ১ জন ও আহত হয়েছে ৩৫ জন। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাটানো রিপোর্ট-
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নওশার (ঘোড়া) কর্মী-সমর্থকদের সাথে পুলিশ, বিজিপি আনসার ব্যাটালিয়নদের সংঘর্ষে একজন নিহত ও ইউএনও, এএসপি এবং ওসিসহ ৩০ জন আহত হয়েছে। রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট বন্দরের ফাইভ স্টার মোড় এলাকায় শনিবার রাত ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত লেবু ম-ল (৩২), স্থানীয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী (নৈশ্য প্রহরী) ও পার্শ্ববর্তী রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা জামদানি গ্রামের আদুল কাদের ম-লের ছেলে। আহতরা হলো, ভারপ্রাপ্ত ইউএনও আবু রায়হান দোলন, এএসপি রবিউল ইসলাম, ওসি ফরহাদ ইমরুল কায়েসসহ কমপক্ষে বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩০ সদস্য। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ধাপেরহাট ইউনিয়নের ১২টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১০টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থানীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অপর দুটি মধ্য নিজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আরাজী ছত্রগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা না করে বিকাল থেকে ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মোস্তাফিজের নেতৃত্বে উপজেলা সদরে কন্টোল রুমে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু স্থানীদের প্রতিরোধে তা ব্যর্থ হয়। পরে উপজেলা সদরে ফলাফল ঘোষণা করতে বিলম্ব করায় কারচুপি করার গুজব উঠে। এতে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নওশার কর্মী-সমর্থকরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট বাজার এলাকায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। খবর পেয়ে রাত ৯টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রায়হান দোলনের নেতৃত্বে বিজিবি, পুলিশ ও আনছারা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এসময় অবরোধকারীরা বিক্ষোভ করে পুলিশের দুটি গাড়ি ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও গুলি নিক্ষেপ করে। বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরাও। ওই সময় মহাসড়কের পশ্চিম ধারে অবস্থিত স্থানীয় রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের দোতালায় অবস্থানরত লেবু ম-ল গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাত ১১টায় মারা যায়। এছাড়াও আহত হয় আরও ৩০ জন। ওসি ফরহাদ ইমরুল কায়েস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিক্ষোভকারীরা ইউএনও ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা করায় এ ঘটনা ঘটে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, রাত সাড়ে ১২টায় ফলাফল ঘোষণা করা হলে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নওশা আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী মিন্টুর চেয়ে ১ হাজার ১৮৯ ভোট বেশি পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার ও সমর্থনকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁয়ের সনমান্দি ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামে শনিবার রাতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (বর্তমান চেয়ারম্যান) সাহাবুদ্দিন সাবুর সমর্থক ওই ইউপির ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য জয়নাল আবেদীনের ঘরবাড়ি ও অফিস ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী জাহিদ হাসান জিন্নাহর সমর্থকরা। এ সময় তাদের হামলায় ৫ জন আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে রাত ২টার দিকে জিন্নাহর সমর্থকরা ফের সাহাবুদ্দিনের বাসায় হামলা চালায়। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসী জানান, উপজেলা সনমান্দি ইউনিয়নের নাজিরপুর এলাকায় শনিবার রাত ৯টার দিকে সনমান্দি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদ হাসান জিন্নাহর সমর্থক নাজিরপুর গ্রামের গোলজার হোসেনের নেতৃত্বে মাছুম, মোখলেসুর রহমান তার ভাই জয়নাল মিয়া, জাকির হোসেন, জালাল মিয়া, নূর নবী ও বাবুলের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জনের একটি দল সাহাবুদ্দিন সাবুর সমর্থক ও সনমান্দি ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীনের ঘরবাড়ী ও অফিসের হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এসময় তাদের বাধা দিতে এসে সাবুর সমর্থক দুলাল, মিজান, সোহেল, রাজু ও মামুনসহ ৫ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বিভিন্ন হাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে রাত ২টার দিকে জিন্নাহর সমর্থকরা ফের সাহাবুদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়ে তার অফিসে ভাংচুর চালায়। এ ব্যাপারে সাহাবুদ্দিন সাবু জানান, জিন্নাহর লোকজন নৌকা প্রতীকের জোড়ে আমার সমর্থক জয়নাল মেম্বারের বাড়ীঘর ভাংচুর করেছে এতে বাধা দিতে গিয়ে আমার ৫ কর্মী আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি রিটার্নিং অফিসার ও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সমর্থিত দলীয় প্রার্থী জাহিদ হাসান জিন্নান জানান, হামলার ঘটনা সঠিক না বরং সাবুর লোকজনই আতর্কিতভাবে আমার সমর্থদের উপর হামলা চালিয়েছে বলে শুনেছি। সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, উভয়পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন