সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিউবো’র আওতায় কুমিল্লায় প্রায় সোয়া লাখ গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহক ঘিরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারি কয়েক লাখ মানুষ লোডশেডিংয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে। দিনে-রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে কুমিল্লাবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ছন্দপতন ঘটছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। বিঘিœত হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়া। শিল্প, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। কুমিল্লা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বলছেন লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এবারে বৈশাখের শুরুতেই প্রতিদিন কমবেশি বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ঘটনায় কুমিল্লা বিউবো’র বিক্রয় ও বিতরণের তিনটি বিভাগের প্রায় সোয়া লাখ গ্রাহক চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। একই সাথে এসব গ্রাহকের পরিবার-পরিজন, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানায় নিয়োজিত কয়েক লাখ মানুষ লোডশেডিংয়ের ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। কুমিল্লা শহরও শহরতলীকে ঘিরে কুমিল্লায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণের তিনটি বিভাগ কাজ করে থাকে। তারমধ্যে ১ নম্বর বিভাগের আওতায় রয়েছে কুমিল্লা শহরের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চল। শহরের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা ২ নম্বর বিভাগের আওতায় রয়েছে। আর ৩ নম্বর বিভাগের আওতায় রয়েছে শহরের দক্ষিণাঞ্চলের টমসনব্রিজ থেকে জাঙ্গালিয়া, পদুয়ারবাজার, চৌয়ারা বাজার, সোয়াগাজী বাজার ও কোটবাড়ি এলাকা। এছাড়াও লাকসাম, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রামেও রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কার্যক্রম। বিউবো কুমিল্লা অঞ্চলের অধীনে নগরীর জাঙ্গালিয়ায় রয়েছে ১লাখ ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের (কেভি) গ্রীড সাব-স্টেশন। এখান থেকে ফিডারের মাধ্যমে ট্রান্সফরমার হয়ে সঞ্চালন লাইনে গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছে। কুমিল্লার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ তিনটিতে রয়েছে ২২টি ফিডার। আর তিনটি বিভাগের প্রায় সোয়া লাখ গ্রাহক গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকেই বিদ্যুতের যথাযথ সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। এ নিয়ে প্রতিদিন স্থানীয় বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নেই। গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা-৮টা পর্যন্ত, দুপুরে এক থেকে দেড় ঘণ্টা, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা আবার রাত বারটার পরও লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন তারা। বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং পরিস্থিতি অসহনীয় করে তুলছে। ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে বাসাবাড়িতে পানি সংকট চরম আকার ধারণ করছে। লোডশেডিংয়ের কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, অনার্স ও ডিগ্রি পরীক্ষার্থীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটছে, বেকায়দায় পড়ছে এসব শিক্ষার্থীরা। ঘনঘন লোডসেডিংয়ে ব্যবসায়িদের বেচাবিক্রিতেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পত্রিকা অফিস, ছাপাখানা, ডিজিটাল সাইনের ব্যবসায় যেমন মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে তেমনি পোলট্রি ফার্ম ও শিল্প কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাচ্ছে। জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী এডিএম আবদুল্লাহ বলেন, ‘এপ্রিলের ২২ তারিখ থেকে কুমিল্লা অঞ্চলে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এটা সাময়িক। যেকোন সময় স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে কবে নাগাদ হবে তা বলা যাচ্ছে না। লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। গ্রাহকরা ধৈর্যের সাথে বিষয়টি দেখবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন