রাজবাড়ী শহরের সবচেয়ে জনবহুল ও ব্যস্ততম রেলগেট এলাকার রেলওয়ের ওভারব্রিজের সিঁড়ি দীর্ঘ দিন ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এতে করে নামতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারীরা। মেরামতের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন যাত্রীবাহী ট্রেন ছয়ে জোড়া এবং দুই থেকে তিন জোড়া মালবাহী ট্রেন রাজবাড়ীর এক নম্বর রেলগেট এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে। এ ছাড়াও ট্রেনের ইঞ্জিন পরিবর্তন ও বগি সংযোগের সময় ওই ক্রসিং ব্যবহার করা হয়। এ সময় প্রতিবন্ধক নামিয়ে দেয়া হয়। যে কারণে পথচারীরা ওভারব্রিজ বা উড়াল সেতু ব্যবহার করেন। উড়াল সেতুটি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ১০০ মিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত।
সরেজমিন দেখা যায়, মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে রাজবাড়ীর প্রধান বাজারে প্রবেশের দুটি গেট। কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল করতে না পারলেও হাজার হাজার মানুষ রেলওয়ের ওভারব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করছেন। ওভারব্রিজের দক্ষিণ দিকের সিঁড়ির কয়েকটি ধাপ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। সিঁড়ির পাটাতনগুলো নড়বড়ে। ব্রিজের উত্তরদিকে ফলমূলের দোকান দিয়েছেন এক ব্যবসায়ী। দোকানের উপরে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হয়েছে। ছাউনিতে পথচারীদের মাথা ছুঁয়ে যাচ্ছে।
দোকান মালিক গোলাম মোস্তফা (৫০) বলেন, আমি ছোটকাল থেকেই এখানে দোকান করি। কখনো সিড়ির পাশে রেললাইনের ওপর করি। কখনোবা এই স্থানটিতে ব্যবসা করি। তবে চলাচলের কোনো সমস্যা করি না। কেউ সমস্যার কথা বললে মালামাল সরিয়ে রাখি। বেরাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, কিছুদিন আগে বিকেলে মালবাহী গাড়ি যাচ্ছিল। এ সময় ওভারব্রিজ দিয়ে পারাপার হচ্ছিলাম। কিন্তু সিঁড়িটি ভাঙার কথা জানতাম না। নামতে যাওয়ার সময় আমার বন্ধু পড়ে যায়। এতে তার পা মচকে যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এখানে মাঝে মধ্যেই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকার ওভারব্রিজটির বেহাল দশা দেখলে খুব খারাপ লাগে। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ নেয়া উচিত।
রাজবাড়ী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, এ কথা সত্য জনসচেতনতা না থাকায় অনেকেই ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন না। তবে এখন অনেকেই এ বিষয়ে সচেতন হয়েছে। কিন্তু ওভারব্রিজের কয়েকটি সিঁড়ি অনেকদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। এতে করে সিঁড়ে বেড়ে নামার সময় অনেকেই অসাবধানতাবশত পড়ে যান। আর বয়সী মানুষদের এই ভাঙা সিঁড়ি অতিক্রম করা খুব কষ্টকর।
শহরের বড়পুল এলাকার বাসিন্দা অভিজিৎ সোম বলেন, অনেকদিন ধরে দেখছি সিঁড়িগুলো ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। যখন গেটের বেরিয়ার নামিয়ে দেয়া হয়, তখন অনেক মানুষ ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন। কিন্তু সিঁড়ি ভাঙা থাকায় অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হন। কেউবা দাঁড়িয়ে থাকেন। তবে মালগাড়ি আসলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। কারণ মালগাড়িতে অনেকগুলো বগি থাকে। এতে করে সময়ও অনেক বেশি লাগে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, সিঁড়ি ভাঙা থাকার ফলে অনেকের খুব সুবিধা হয়। কারন সিঁড়ি ভাঙা থাকায় রাতের বেলায় কেউ ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন না। এতে করে ওভারব্রিজটি মাদকসেবীসহ অসামাজিক কাজে জড়িতদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। রাতে ওভারব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করলে বিব্রত হতে হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেতু) মো. হাসান আলী বলেন, ওই ওভারব্রিজটি দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। অনেক দিন ধরে সেটি সংস্কার করা হয় না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ওভারব্রিজটি মেরামত করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন