শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

যশোরের যশ খেজুরের রস হারিয়ে যাচ্ছে গুড় পাটালি

‘ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটতি যাবো’

যশোর থেকে শাহেদ রহমান | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

‘ঠিলে ধুয়ে দে বউ গাছ কাটতি যাবো
খাজুরগাছে চোমর বারোইছে তোরে আইনে দেবো
নস গুড় পাটালি বেঁচে গয়না গড়ে দেবো ...’।
খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ, গুড়, পাটালি, পিঠা তৈরি নিয়ে যশোর অঞ্চলের একটি বিখ্যাত লোকসঙ্গীত এটি। শীত এলেই দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেনো, বাঙালির মনে পড়ে যায় যশোরের খেজুর রস, গুড়-পাটালি আর পিঠার কথা। কিন্তু মানুষের লোভের আগুনে পুড়ে গেছে যশোর অঞ্চলের লাখো খেজুরগাছ। অবশ্যম্ভাবী ফল হলো, চৌকষ গাছিও বেঁচে থাকার তাগিদে পেশা বদলে ফেলেছেন। যা কিছু খেজুরগাছ এখনো যশোরের ঐতিহ্যের জানান দিচ্ছে, শীত এলে সেগুলো থেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছি পাওয়া দুষ্কর। ফলত রস তথা গুড়-পাটালির উৎপাদন কমেছে আশঙ্কাজনক। কিন্তু যশোরের গুড়-পাটালির চাহিদা থেকে গেছে আগের মতোই। এই সুযোগে কিছু অসাধু কারবারি খেজুড়গুড়ের সঙ্গে ভেজাল মিশিয়ে দেদারছে বিক্রি করছে।

সরকারিভাবে যশোর জেলাকে যেভাবে ব্রান্ডিং করা হয়েছে, সেখানেও রয়েছে খেজুর গুড়ের কথা- ‘নানা রঙের ফুলের মেলা, খেজুর গুড়ের যশোর জেলা’। এসব কারণেই যশোরের খেজুররস, গুড়-পাটালির পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে যশোরের উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ এগিয়ে আসছেন। তাদের মধ্যে এই মুহূর্তে শীর্ষে রয়েছে যশোররোডডটকম (jessoreroad.com)।

যশোর রোডের প্রধান নির্বাহী আহসান কবীর বলেন, ‘আমাদের জেলার প্রধান যে ঐতিহ্য খেজুরগাছের রস, গুড়, পাটালি, তাকে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায় তা নিয়ে প্রথমে আমরা একটি সমীক্ষা করি। আমরা দেখতেই পাই, এই ঐতিহ্যটি হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাওয়া। দ্বিতীয় কারণটি হলো, খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের ব্যাপারটি বেশ কষ্টকর। নিপুণতা, দক্ষতা না থাকলে ভালো মানের রস-গুড়-পাটালি উৎপাদন করা যায় না। একসময় যেসব দক্ষ গাছি তাদের নিপুণ হাতে এই কাজটি করতেন, তাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। আগে গাছিদের সন্তানরাই বাবার কাছ থেকে শিখে এই কাজ করতেন। এখন অন্যকাজে অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা আয়ের সুযোগ হওয়ায় গাছিদের সন্তানরা আর খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের কষ্টসাধ্য কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এ অবস্থায় যশোরের এ ঐতিহ্য বিলুপ্তির দিকে এগুচ্ছে।’

‘আমাদের পরিকল্পনা, রস সংগ্রহ, গুড়-পাটালি তৈরির কাজকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করে তুলতে হবে। তা না হলে কোনোভাবে নতুন প্রজন্মকে গাছ কাটা, রস-গুড় উৎপাদনে আগ্রহী করা যাবে না। কেবল স্থানীয় বাজারে গুড়-পাটালি বিক্রি করলে গাছিরা ভালো দাম পাবেন না। দরকার আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আমরা ঠিক এই কাজটিই করছি। যশোরে উৎপাদিত গুড়-পাটালি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। গাছিরা যাতে ভালো দাম পান, সেই দিকেও দৃষ্টি রাখা হয়েছে। প্রায় ছয় বছর আগে কিনে রাখা ডোমেইন-হোস্টিংয়ের মাধ্যমে আমরা jessoreroad.com নামে একটি ই-কমার্স সাইট তৈরি করি; যা চলতি শীত মৌসুমে যশোরের গুড়-পাটালি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষ করে নগর-মহানগরগুলোতে পৌঁছে দিচ্ছে,’ বলছিলেন আহসান কবীর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন