মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

পোশাক খাতে নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিঞা মুজিবুর রহমান
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের এক সাম্প্রতিক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে গার্মেন্ট তথা তৈরি পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে এত দিনের শক্ত অবস্থান থেকে সরে আসছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে পণ্যের মানের বিচারে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
তৈরি পোশাকের রফতানি বাজারের ৪১ শতাংশ রয়েছে গণচীনের দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের অংশ ছয় দশমিক চার শতাংশ। তা সত্ত্বেও চীনের অভ্যন্তরে মজুরি বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে বলে চীনকে তার পণ্যের দাম বাড়াতে হচ্ছে। ফলে বিশ্ববাজারে চীনা পোশাকের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশ সহজেই তার বাজার বাড়াতে পারে। কিন্তু যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের চাইতে পিছিয়ে রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বিশাল রাষ্ট্র ভারতও।
কারখানার পরিবেশ ও শ্রমিকের নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে সন্তোষজনক অবস্থানে থাকলেও কমপ্লায়েন্স ও সাসটেইনেবিলিটির মতো কিছু বিষয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রশ্ন ও অসন্তোষ রয়েছে। এসব বিষয়ে ক্রেতা রাষ্ট্রগুলোর সন্তুষ্টি ও প্রশংসা অর্জন করতে পারলে চীনের হারানো বাজার দখল করা বাংলাদেশের জন্য সময়ের বিষয়ে পরিণত হবে। তেমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পোশাকের দাম যদি এক শতাংশ বাড়ে তাহলে বাংলাদেশী পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাবে প্রায় দেড় গুণ- এক দশমিক ৩৬ শতাংশ। সেই সাথে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে দশমিক ৪৪ শতাংশ হারে বাড়বে নারী শ্রমিকের চাহিদা। আর চীনের পোশাকের দাম ১০ শতাংশ বাড়লে বাংলাদেশী পোশাকের চাহিদাই শুধু আনুপাতিক হারে বাড়বে না, একই সঙ্গে দেশের শ্রম বাজারে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের কর্মসংস্থানও বাড়বে চার শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের রফতানি আয় তো বাড়বেই, একযোগে চাকরি পাবে আরো হাজার হাজার শ্রমিক।
বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি রাষ্ট্রের জন্য এ ধরনের সুযোগ সব সময় তৈরি হয় না। সে কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্ট মালিকসহ ও রফতানিকারকদের উচিত পরিস্থিতির সুযোগ নেয়া। এ ক্ষেত্রে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কমপ্লায়েন্স ও সাসটেইনেবিলিটির মতো যে বিষয়গুলোর কথা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে অনতিবিলম্বে নজর দেয়া এবং ক্রেতাদের অসন্তোষ দূর করার ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কারখানার পরিবেশ ও শ্রমিকের নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতেও লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে কোনো ক্রেতা রাষ্ট্র বা আইএলওর মতো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষে অভিযোগ উত্থাপন করা সম্ভব না হয়। এ প্রসঙ্গে রানা প্লাজার মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি এবং এর মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার কথা মনে রাখতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে গার্মেন্ট শিল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা দরকার। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান এই খাতে এখন ২৬ দশমিক ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে বলে বিজিএমইএর সভাপতি দাবি করেছেন। এ আয়কে সহজেই দ্বিগুণ পরিমাণে উন্নীত করা সম্ভব। এটা একটি দিক। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রয়েছে কর্মসংস্থানসহ অর্থনৈতিক কর্মকা-। এই শিল্পে ইতিমধ্যে ৬০ লাখের বেশি মানুষের চাকরি হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী। এর মাধ্যমে শুধু বেকার সমস্যারই অনেকাংশে সমাধান হয়নি, একযোগে অন্য অনেক শিল্পেরও বিকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে নারীদের কারণে দেশে স্নো-পাউডার ও লিপস্টিক ধরনের প্রসাধন সামগ্রীর শিল্প-কারখানা বিকশিত হয়েছে, দেশে উৎপাদিত শাড়ি-কাপড়ের বাজারকেও তারাই চাঙ্গা রেখেছেন। টেক্সটাইল ও রঙসহ গার্মেন্ট শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের কারখানাও একই কারণে বিকশিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে। অর্থাৎ গার্মেন্ট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নানামুখী ইতিবাচক অবদান রেখে চলেছে। এজন্যই গার্মেন্ট শিল্পের সুষ্ঠু ও বাধাহীন বিকাশ নিশ্চিত করা দরকার।
অন্যদিকে বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু মোটেই সন্তোষজনক নয় বরং কিছু বিশেষ কারণে ভীতিকরও। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট এবং সময়ে সময়ে মন্দার কারণে অর্ডার কমে যাওয়ায় অনেক গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো অনেক কারখানা সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ না পাওয়ায় অনেক কারখানা এখনো উৎপাদনই শুরু করতে পারেনি। ফলে গার্মেন্ট খাতে আয়ও কমছে আশংকাজনক হারে।
উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামের আড়ালে মইন-ফখরুদ্দিনদের অসাংবিধানিক সরকারের আমলে রফতানির অর্ডার ৩৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। টাকার অংকে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। উদ্বেগের কারণ হলো সে অবস্থা কমবেশি এখনো চলছে, গার্মেন্ট খাতে আয় ও বিক্রি বাড়ছে না যথেষ্ট পরিমাণে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত নতুন সংযোগ দেয়াসহ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা নেয়া, যাতে প্রতিটি কারখানাই সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারে। অন্যদিকে গার্মেন্ট মালিকদের উচিত নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্রেতা রাষ্ট্রগুলোর আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালানো, যাতে চীনের হারানো বাজারের একটি বড় অংশ বাংলাদেশ নিজের দখলে আনতে পারে।
ষ লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মিডিয়া এন্ড ম্যানেজম্যন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন