শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

উজাড় হচ্ছে মীরসরাইয়ের বনাঞ্চল লোকালয়ে ছোটা বন্যপ্রাণী আটকা পড়ছে শিকারির ফাঁদে

প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে

সাম্প্রতিক সময়ে মীরসরাইয়ের বনাঞ্চলের অভয়ারণ্য বিলীন হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র। উত্তর চট্টগ্রামের এই মীরসরাই অঞ্চলে বিরল প্রজাতির বিভিন্ন বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। আবার এসব প্রাণী জনগণের হাতে ধরা পড়ে নির্বিচারে বিপন্ন হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও কখনো কখনো কিছু উপজাতি ও অসচেতন গোষ্ঠী কর্তৃক বন্যপ্রাণী নিধনের ঘটনাও ঘটছে। আর এর সবার আগে প্রয়োজন বনবিভাগ কর্তৃক আরো কঠোর নজরদারি এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধি। পাশাপাশি মীরসরাইয়ের মহামায়া লেক এলাকায় বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ মিউজিয়ামসহ নো ম্যান এরিয়া এখন সময়ের দাবি। কারণ এখানেই লেক পাহাড় ও প্রকৃতি মিলে অনন্য স্থান একটি। বন বিভাগের অভয়ারণ্য সৃষ্টির জন্য এটি আদর্শ অঞ্চল বলে ও অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত। দিনে দিনে অভয়ারণ্য নির্বিচারে জনমানুষের হাতে বিপন্ন হতে হতে বন্যপ্রাণীদের জন্য আর বাসযোগ্য নেই বনভূমি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে পূর্ব দিকে তাকালেই দৃশ্যমান সারি সারি সুউচ্চ পর্বত। এই পর্বতের ভেতরেই ছিল নির্জন গহীন অরণ্য। এই বনাঞ্চলে একসময় বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির বানর, ঝাঁকে ঝাঁকে বন মোরগ, শুকর, শৃগাল, অজগরসহ হরেক রকমের প্রাণীর গল্প রুপকথার মতোই আজ। সেখানে গহীন বনে আমলকি তলায় দুষ্ট শিকারিরা গভীর রাতে ওঁৎপেতে শিকারের গল্প করতো। সেই সব শিকারিদের অনেকে এখনো সেই নেশা মাথা চাড়া দেয়। কিন্তু বিলুপ্ত প্রায় এই সব বণ্যপ্রাণীরা এখন আর বনে পাচ্ছে না নিরাপত্তা, পাচ্ছে না খাবার তাই ছুটে আসছে লোকালয়ে। সরকার শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য বন সংরক্ষণের নীতিকথা বলেই যাচ্ছে কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। উদাসীন প্রশাসনও। অন্তত কিছু এলাকা তো এখনো বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য না থাকলে ওরা বাঁচবে কিভাবে। নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। যেভাবে এই অঞ্চলের বন্যপ্রাণীরা আশ্রয়হীন ও অসহায় হয়ে পড়ছে তাতে একদিন এই পাহাড়ি অঞ্চল বিরানভূমিতে পরিণত হবে নিশ্চিত। গত এপ্রিল মাসেই উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের আমবাড়িয়া গ্রামে একটি বড় জাতের বানর লোকালয়ে চলে এলে বন বিভাগে খবর দিলে বনকর্মীরা বানটিকে উদ্ধার করে সুস্থভাবেই বনে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। গত মার্চ মাসে সোনাপাহাড় এলাকায় লোকালয়ে আসে ২টি মেছো বাঘ। শুধু তাই নয় ইতোমধ্যে হরিণ, লজ্বাবতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বানর, লক্ষি পেঁচা, অজগর, বাঘের ছানা, শুকরসহ নানান প্রজাতির বন্যপ্রাণী ছুটে আসছে লোকালয়ে। আর বিভিন্ন সময় বন বিভাগে খবর দিলে তারা কখনো গাফেলতি করলেও কখনো কখনো সাথে সাথেই ছুটে আসছেন। কিন্তু এরপরও মাঝেমধ্যে ভিন্ন রুপও দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে মীরসরাইয়ের গোভানিয়া ঢালা দিয়েই তালবাড়িয়া উপজাতি পাড়ার কয়েকজন উপজাতিকে একটি শুকর নৃশংসভাবে গাছের সাথে বেঁধে তাদের পাড়ায় ভোজনের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় এর ছবি ও তোলা হয়। কিন্তু বনকর্মীরা অজ্ঞতা বা অসচেতনতা যেভাবেই হোক এর কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা গেল না। কখনো কখনো বড়তাকিয়া, করেরহাট, হিঙ্গুলী এলাকা দিয়ে একটি হরিণ শিকারি চক্রকে হরিণ শিকারের কথা ও শোনা যায়। শুধু তাই নয় উপকূলীয় বনে ও হরিণ এবং পাখি শিকারের ঘটনা ঘটছে অনায়াসেই। এভাবেই কি চলবে বন্যপ্রাণী নিধন বা বধ! এই বিষয়ে জানতে চাইলে মীরসরাই উপজেলার করেরহাট রেঞ্জ এ দায়িত্বরত সহকারী বন সংরক্ষক চট্টগ্রাম উত্তর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা যে কোথাও বন্যপ্রাণীর খবর পেলেই দ্রুত সকল উদ্যোগসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। তবে সরকারিভাবে সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেয়া গেলে আরো ভালো সুফল পাওয়া যেতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) মতে, বর্তমানে বিভিন্ন জাতের বন্য প্রাণী পৃথিবীতে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এই বিপন্নতা ঠেকানোর দায়িত্ব বনবিভাগের থাকা সত্ত্বেও তাদের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ আছে। তবে সকলের সহযোগিতায় বনবিভাগ, প্রশাসনসহ সম্মিলিত নিয়মনীতির মাধ্যমেই এই সংকট নিরসন সম্ভব। এসিএফ মোহাম্মদ হোসেন আরো বলেন, আমরা শীঘ্রই মহামায়া এলাকায় একটি সাফারি পার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, আশা করছি এরপর থেকে বন্যপ্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণে আর সমস্যা হবে না। এছাড়া তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে জনগণকে ও বনায়নে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, অতঃপর সকলে মিলেই বনাঞ্চল রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে কাঠচোরদের শনাক্ত করে এদের সর্বভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। সর্বোপরি এই অঞ্চলের উপকূলীয় ও পাহাড়ি বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র রক্ষা করতে নির্বিচারে বন উজাড় কঠোরভাবে বন্ধ করে মীরসরাই তথা মহামায়া অঞ্চলে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্য তথা নো ম্যানস এরিয়া ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি। কঠোর কার্যকর উদ্যোগ না হলে এই পৃথিবী একসময় জীববৈচিত্রতা হারাবেই। প্রাকৃতিক বিশেষজ্ঞ ড. আনোয়ারা শেলী জানান, এই মহামায়া ফিশ মিউজিয়ামসহ বন্য অভয়ারণ্যের জন্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র সমৃদ্ধ একটি এলাকা। সরকার এখানেই গড়তে পারে বন্যপ্রাণী মিউজিয়াম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন