মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি, অবৈধ কর্মে জড়ানো, নিজ দলের কর্মী খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ এনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সালেহ আহমদ সেলিমের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিলেট মহানগর যুবলীগের সদস্য জাকিরুল আলম জাকির।
বুধবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাকির বলেন- কাউন্সিলর সেলিম একাধারে একজন বির্তকিত কথিত রাজনীতিক, অপরদিকে একজন আইনজীবী। রাজনীতির নামে গ্রুপবাজির কূটকৌশলে নিরীহ উদীয়মান রাজনীতিক কর্মী সমর্থকদের কোনঠাসা করে নিজের অবৈধ-কর্মে জড়াতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন, অপরদিকে আড়ালে থেকে আইনজীবী হওয়ার সুবাধে তার জ্ঞাপ পাপী মানসিকতায় মামলার গ্যাঁড়াকলে তছনছ করেছেন তাদের সম্ভাবনাময়ী ভবিষ্যত। সেলিম বলয়ের সক্রিয় বর্তমান অনুসারীরা হামলা-মামলার মারপ্যাচ থেকে রক্ষা পেতে গিয়ে অন্ধকার জীবনে হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বলয় ছাড়লেই নির্ঘাত জীবনের ঝুঁকিতে পড়তে হবে তাদেরকে। পেশী শক্তি তার অলংকার, অহংকার। সেকারনে মোহগ্রস্থ সেলিম উপশহরের এক মূর্তিমান আতঙ্ক।
জাকির বলেন- নগরীর উপশহরের বাসিন্দা হওয়ার সুবাধে সালেহ আহমদ সেলিমের সাথে একসময় রাজনীতিক কারণে শ্রদ্ধাশীল সর্ম্পক গড়ে উঠে। প্রায় এক যুগ তার সাথে মিলেমিশে উপশহর কেন্দ্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় থাকি আমরা। কিন্তু যখন জানতে পারি রাজনীতিক পরিচয়ে মুখোশের আড়ালে যে একজন মাফিয়া তিনি, তখন তার সংস্পর্শ থেকে সড়ে যেতে চাই। তখনই তিনি আমাকে তার জুনিয়র রাজনীতিক কর্মী না ভেবে প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করেই এমন নেক্কারজনক কাজে চালিয়ে যান কাছে রেখেই। রাজনীতিক স্বাভাবিক আচরণের বিপরীতে মামলাবাজির ফাঁদে ফেলে অতিষ্ট করে দেন আমাদের জীবন-মান। এর বাস্তব কিছু উদাহরণ বিগত তিনি আমি এবং আমার সহকর্মীদের উপর ষড়যন্ত্রমূলক মামলা।
জাকিরুল আলম জাকির অভিযোগ করে বলেন- কয়েকমাস আগে বিভিন্ন ঘটনায় তাকে এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করিয়েছেন সেলিম। এরমধ্যে একটির বাদি উপশহরের ব্যবসায়ী মার্জিয়া বেগম রুমা (৪২)। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওয়ান টু হান্ড্রেড-এ ভাংচুর, লুটপাট ও চাঁদাবাজি ঘটনায় এই মামলা দায়ের করেন রুমা। এ মামলায় আসামী করা হয় আমি সহ দলের ১৬ জন নেতাকর্মীকে। এজহারের বর্ণিত ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। এনিয়ে আমি এই মামলার বাদী রুমা বেগমের সাথে একপর্যায়ে যোগাযোগ করে জানতে পারি ২ লাখ টাকার প্রলোভনে পড়ে তিনি এ মামলায় আসামী করেছেন আমাকে। যদিও মাত্র ৪৭ হাজার টাকা তাকে প্রদান করেন কাউন্সিলর সেলিম। আমার কাছে রুমা বর্ণিত স্বীকারোক্তির ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
উপশহরে এবিসি পয়েন্টে হত্যার উদ্দেশ্যে মারামারি ঘটনায় ৩০ অক্টোবর ২০১৭ইং মামলা নং ১৪ দায়ের করে জনৈক রাহয়ান আহমদ (২২)। সে সুনামগঞ্জ দিরাইয়ের বাসিন্দা। এই মামলায় আমাকে প্রধান আসামী করে ১০জনের মামলা দায়ের করা হয়। সম্প্রতি রাহয়ান আহমদ নিজেই হঠাৎ করে আমাকে ফোন করে জানায়, আমার বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলার ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। সালেহ আহমদ সেলিম সবকিছু করিয়েছেন। উপশহরের সচেতন সকলেই জানে রায়হান, সেলিম বলয়ের সক্রিয় কর্মী। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাসুদ রানার অতীত বির্তকিত। তিনি নিজেইে চাঁদাবাজির মামলায় জেল খেটেছেন। এই কর্মকর্তা অপরাধিদের সাথে মিশে ফরাময়েসী অভিযোগপত্র দিয়েছেন আমাদের বিরুদ্ধে।
এছাড়া তেররতন বাজারে কথিত প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র ১৩ মার্চ ২০১৮ইং সশস্ত্র সজ্জিত হয়ে গতিরোধ ও হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ও জখম, হুকুমের অপরাধে মামলা নং- ১২ দায়ের করা হয় শাহপরান (রহ.) থানায়। এই মামলার বাদি তেররতনের মালিক মিয়ার কলোনীর বাসিন্দা মিন্নত (২৮)। এই মামলায় আমাকে প্রধান করে ১৩জনকে আসামী করা হয়। কিন্তু এ মামলায়ও সালেহ আহমদ সেলিমের রোষানলের পড়ে আসামী আমি। মামলার বাদি নিজেই স্বীকার করেছে সে নিজেই জানে না কিভাবে অভিযোগ লেখা হয়, কাদের আসামী দেয়া হচ্ছে।
এভাবেই সালেহ আহমদ সেলিম আর্থিক ফায়দা অর্জনের একটি খাত হয়ে উঠছে ফরাময়েসী এ মামলগুলো। এই মামলার জালে ফেলে কাউকে আর্থিকভাবে লুটছেন, কাউকে অপরাধের ধারাবাহিক সিরিয়াল সক্রিয় রাখছেন।
জাকির বলেন- কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিমের রাজনীতিক পরিচয়, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এই সংগঠনের আদর্শ-বিশ্বাস জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। কিন্তু সেলিম গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরই এক সভায় দম্ভোক্তি দেখিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, ‘ডোন্ট মাইন্ড আমার রাজনীতির উস্তাদ সুলতান মুহাম্মদ মনসুর। তিনি যে শিক্ষা দিয়েছেন সেই শিক্ষায় এখনও চলি।’ আমার জানা মতে সুলতান মুহাম্মদ মনসুর নামের কোন নেতা এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নেই। যে ব্যক্তি নেই, সে যদি হয় কাউন্সিলর সেলিমের রাজনীতির উস্তাদ, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, তাহলে সেলিমের রাজনীতিক আর্দশ কি হতে পারে?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন