নেপালী দুই ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসপাতালের অদূরস্থ সুমাইয়া কমপ্লেক্স নামক মার্কেটের সামনে এ সংঘর্ষও ঘটনা ঘটে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে আহত হয়েছেন পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। পরে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষ থামাকে ফাঁকা করে এবং দুপক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। অপরদিকে সংঘর্ষে আহত ৮-১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ সুরমা থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মাঈন উদ্দিন খান। বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। এছাড়াও নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের হামলায় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজে অধ্যরনরত নেপালিয়ান দুই ছাত্রী চন্ডিপুলের ফুলকলি মিষ্টির দোকানে গেলে আসার সময় স্থানীয় এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক তাদের উদ্দেশ্য অশালীন কথা ছুড়েন। ওই অটোরিকশা চালক নর্থ ইস্ট হাসপাতালের অদূরস্থ সুমাইয়া কমপ্লেক্স নামক মার্কেটের নিচ তলার বাদশা টেলিকম নামক ফ্লেক্সিলোডের দোকানের মালিক গুলজার আহমদের আত্মীয়। অপরদিকে, ইভটিজিংয়ের শিকার দুই ছাত্রী কলেজে গিয়ে সহপাঠীদের বিষয়টি জানালে কয়েকজন শিক্ষার্থী বাদশা টেলিকমে এসে বিচারপ্রার্থী হন। এসময় দুপক্ষের মাঝে বাবকবিতন্ডার সৃষ্টি হয় এবং একপর্যায়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শামিল হয়ে এসময় শিক্ষার্থীদের মারধর করেন স্থানীয় অটোরিকশা চালকরা।
এদেিক, নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ করে বলছেন- প্রতিনিয়ত তাদের সহপাঠী নারী শিক্ষার্থীরা চন্ডিপুল এলাকার অটোরিকশা শ্রমিক এবং ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। বেশিরভাগ ছাত্রীই এসব বিষয় কারো সঙ্গে শেয়ার করেন না, মান সম্মানের ভয়ে বিষয়টি চাপিয়ে রাখেন। বিদেশি দুই ছাত্রীকে উত্যক্ত করায় তারা সাহস করে সহপাঠীদের কাছে এসে বলেছেন। এই ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায়ই অটোরিকশা শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছেন। শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন- এই সময়ের মধ্যে উত্যক্তকারী যুবক ও হামলাকারীদের গ্রেফতার না করলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে তারা। এছাড়াও মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের উত্যক্ত করা স্থায়ীভাবে বন্ধে পুলিশকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।
অপরদিকে, এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক বৈঠকে বসে শুরুতে বাদশা টেলিকমে এ ঘটনা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারা। অভিযুক্ত যুবককে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ানো হয়। কিন্তু এরপরও শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে হামলা করেন। তাদের মার্কেটের অনেক দোকানে ভাঙচুর চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এখন তারা বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ বিষয়ে এসএমপির দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পরিস্থিতি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি চলছে মামলা দায়েরের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন