খন্দকার আছাদুজ্জামান, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) থেকে
মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু বৈশিষ্টের কারণে অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে আলাদা। এ লিচু মুখে দিলেই গোলাপী ঘ্রাণ আর মিষ্টি রসে মন-প্রাণ ভরে যায়। দেশব্যাপী খ্যাত মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচুতে এখন মেতে উঠেছে পুরো গ্রাম। মঙ্গলবাড়িয়ার প্রতিটি বাড়ির বসত ভিটায় বা আঙ্গিনায় গাছে গাছে লাল লিচুতে রঙিন হয়ে গেছে পুরো গ্রাম। পুরো গ্রামজুড়ে এখন গাছ ভর্তি লিচু। থোকায় থোকায় বাহারি লিচু সবার মন কাড়ছে। সেই সাথে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট ছোট পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে এলাকা মুখরিত। এবার সুস্বাদু ফল লিচুর ফলন গত বছরের চেয়ে অনেক ভাল হলেও কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। বাগান থেকে লিচু তোলার শেষ সময় পর্যন্ত যদি প্রাকৃতিক আর কোন দুর্যোগ না আসে তবে লিচু চাষিরা আর্থিকভাবে অনেকটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে অনেকে মনে করছেন। এবারও গাছে মুকুল আসার আগেই বেপারীরা অনেক লিচু গাছ আগাম কিনে নিয়ে গেছেন। চাষিরা আর্থিকভাবে বেশি লাভের আশায় লিচুর গুটি রক্ষার জন্য গাছে নিয়মিত ভিটামিন ওষুধ স্প্রে এবং গাছের গোড়ায় পানি ও সার দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও পাকা লিচু রক্ষার জন্য চাষিরা সারা রাত সজাগ থেকে বাগান পাহাড়া দিচ্ছেন। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামটি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। অনেকেই লিচুর গ্রাম হিসেবে চিনে মঙ্গলবাড়িয়াকে। এ গ্রামের লিচু সুস্বাদু ও আগাম জাতের হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিটি লিচুই গোলাপী রঙের, শাঁস মোটা ও রসে ভরপুর। খেতে ভারি মজা। গন্ধও অতুলনীয়। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচু চাষি শামছুদ্দোহা ও মো. শাহজাহান মিয়া জানান, দিনে বিভিন্ন পাখি ও কিশোর-কিশোরীদের অত্যাচার এবং রাতে বাদুড়ের উপদ্রব থেকে লিচু রক্ষা করতে দিনরাত তাদের বাগান পাহাড়া দিতে হচ্ছে। মুকুলের সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও কালবৈশাখী ঝড়ে এ বছর লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে লিচুর দানা ও আকার গতবারের চেয়ে অনেকটা ছোট হবে বলে মনে হচ্ছে। লিচুর পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, গাছে লিচু পাকা শুরু হলেও ব্যাপক হারে এখনও লিচু বিক্রি শুরু হয়নি। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যেই পুরো দমে গাছ থেকে লিচু পাড়ার কাজ শুরু হবে। তবে বর্তমানে যারা লিচু বিক্রি শুরু করেছেন তারা অনেকটাই অভাবের তাড়নায় বিক্রি করছেন। তৌহিদুল ইসলাম আরও জানান, গত বছর ১০০ লিচুর দাম ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। এবার লিচুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রবীণ লিচু চাষি মুখলেছুর রহমান দাদা ভাই জানান, মঙ্গলবাড়িয়ায় শতাধিক বছর ধরে লিচুর চাষাবাদ হলেও অন্য কোন জাতের লিচু এ গ্রামে নেই। ‘মঙ্গলবাড়িয়া জাত’ নামেই পরিচিত এ গ্রামের লিচু। পর্যায়ক্রমে এ গ্রামে সম্প্রসারিত হতে থাকে লিচু চাষ। বর্তমানে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় কমপক্ষে ৮/১০টি করে লিচু গাছ আছে। পাইকাররা প্রতি বছর এখান থেকে লিচু কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রপ্তানি করে থাকে। অন্যান্য এলাকার লিচুর চেয়ে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর স্বাদ আলাদা হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে ভিড় জমায় লিচু কেনার জন্য। এমনকি প্রবাসীরাও মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু নিয়ে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গাছে মুকুল আসার আগেই গাছের মালিককে অগ্রিম টাকা দিয়ে লিচু গাছ কিনে নিয়ে যায় স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বেপারীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন