চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় একযুগ ধরে পড়ে থাকতো ইসলামপুর ও রাজানগরে অবস্থিত ইছামতি জেগে ওঠা বিস্তির্ণ চর। বর্তমানে জেগে ওঠা এই বালু চরে আবাদ করা হয়েছে মিষ্টি আলু। এর পাশাপাশি উপজেলার তৃণমুলেও এই মিষ্টি আলুর আবাদ জমির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। প্রবীণ কৃষকও উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকরা অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই লাভের মুখ দেখেছে। ধান, সবজি পাশাপাশি মিষ্টি আলুতে বাড়তি আয় গুনছে কৃষকরা।
রাঙ্গুনিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ হয়েছে। যার অধিকাংশ চাষ হয়েছে উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুর এলাকায়। মিষ্টি আলু অত্যন্ত পুষ্টিকর ফসল। সাধারণত বালু মাটিতে আলু/কন্দাল জাতীয় ফসল ভাল হয়। তাই চরাঞ্চলের মতো জমি আবাদের আওতায় এনে ভবিষ্যতে এই ধরণের আবাদ আরও বাড়ানো হবে।’
সরেজমিনে, রাজানগরের কৃষক মোহাম্মদ ইসলাম জানান, আগে এই এলাকায় ইছামতির চরগুলো খালি পড়ে থাকতো। এবার উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে এখানকার কৃষকরা এসব চরে মিষ্টি আলু চাষাবাদ করেছেন। ইতিমধ্যেই ফলন আসতে শুরু করেছে এবং এই চরে উৎপাদিত মিষ্টি আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে এবছর আমরা বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
উপ-সহকারী সহিদুজ্জামান সাহেদ বলেন, এলাকার কোথাও যাতে কোন পতিত জমি না থাকে সেই লক্ষ্যে সকল পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগে এসব নদীর চর পতিত থাকলেও এবছর এসব চরে মিষ্টি আলুসহ, মুলা, আলু, বেগুন ও মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা এর সুফলও পেয়েছেন।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ থেকে জানা যায়, ‘মিষ্টি আলু চাষাবাদে তেমন একটা সার প্রয়োগ করতে হয় না বলে খরচ কম। তাছাড়া এ ফসলে তেমন কোন রোগ বালাইও দেখা যায় না। তাই এই আবাদে অল্প পুঁজি ও শ্রমে অধিক লাভ পাওয়া যায়। বিশেষ করে চর এলাকায় মিষ্টি আলুর চাষাবাদ বেশ লাভজনক।
জানা যায়, উপজেলার এই দুই ইউনিয়নে এ বছর নতুনভাবে মিষ্টি আলু চাষাবাদ সৃষ্টি হলেও রাঙ্গুনিয়ার তৃণমুলে নিয়মিত বিভিন্ন নদীর চরাঞ্চল ছাড়াও কৃষি জমিতে চাষ হয়ে আসছে মিষ্টি আলুর। এসব উৎপাদিত আলু রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ছোট-বড় হাট বাজারের পাশাপাশি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। স্বপ্ল পুজিতে অধিক লাভের মুখ দেখতে স্থানীয় কৃষকরা মিষ্টি আলু চাষের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
উপজেলার পৌর এলাকার ঘাটচেক গ্রামে অবস্থিত কর্ণফুলী নদীতে জেগেওঠা দাঙ্গা চরে মিষ্টি আলু চাষ করছেন কৃষক আয়ুব, আব্দুর সবুর ও জাহাঙ্গীর। শীত মৌসুম এলেই এই ধরণের চাষাবাদ করে থাকেন বলে জানান তারা। উৎপাদিত এসব মিষ্টি আলু বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে ছেলে মেয়েদের স্কুল, মাদরাসাসহ ছয় মাস সংসার চলে।
উপজেলার রাণীরহাট বাজারে পাইকারী সবজি ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, আমি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের সবজি পাইকারী কিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম শহরের আড়তে বিক্রি করে থাকি। প্রতি মৌসুম এলে আমি রাঙ্গুনিয়ার বড় বাজার রোয়াজারহাট ও রাণীরহাট থেকে ট্রাকে করে মিষ্টি আলু সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্নস্থানে সরবরাহ দিয়ে আসছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন