ঝিনাইগাতীর বিল এলাকা সারি কালিনগরের আলহাজ শরিফ উদ্দিন সরকার, নামাপাড়ার আলহাজ আব্দুর রহিম, আবু হানিফ, হায়দর আলী, জড়াকুড়ার (অব.) সেনাসদস্য ও কৃষক অনোয়ার হোসেন মুকুল, বন্দভাট পাড়ার রুস্তম আলী, ছুটি মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, ময়দান আলী, কালিনগর গ্রামের আ. ছাত্তার, লিটন মিয়া, চাঁন মিয়া প্রমুখ জানান, ধানের আবাদের চেয়ে সবজির আবাদ লাভজনক হওয়ায় তারা এবার সবজির আবাদের দিকেই বেশী করে ঝুঁকে পড়েছেন। তাই এই বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ ছেড়ে সবজির আবাদ করেছেন তারা। তারা আরো বলেন, তাইতো এবার বিল এলাকায় দরিদ্র কৃষকরা মিলে সবজি আবাদে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছি আমরা।
প্রসঙ্গত: এক সময় এ সব বিল ছিল ওই এলাকার কৃষকদের বড় দুখের কারণ। এখন ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিলের বুকে ইরি-বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে অভাব দূর করছেন অনেক কৃষক। কৃষকরা এখন বিলের বুকে ফসল ফলিয়ে অনেকেই অভাব দূর করেছেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে অসম্ভবকে সম্ভব করে আয়ের স্বপ্ন দেখছে বিল এলাকার শত শত কৃষক পরিবার। বিলের বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসল বুনে ঘরে তুলছে খেটে খাওয়া মানুষ। বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির সাথে পলি ও বালি এসে ওই সব বিল ভরাট হয়ে এখন উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। আবাদ হচ্ছে ইরি-বোরো ধান, শশা, ঝিঙে, ঢেরস, মিষ্টি লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাক-সবজি।
এক কথায় গোটা বিল এলাকা এখন সবুজে ভরে গেছে। বিল এলাকার কৃষক প্রতাব নগরের চাষী আবু সায়েম প্রতিবারের মতো এবারও প্রায় ৩ একর জমিতে শশা, চিচিঙ্গা এবং কুমড়ার আবাদ করেছেন। সারি কালিনগরের কৃষক জিয়াউল, সিদ্দিক, দরিকালি নগরের মিস্টার, আইয়ুব আলী, ছানা মিয়া, ইব্রাহিম আমেজ উদ্দিন সবাই প্রান্তিক চাষী। ভাল লাভের মুখ দেখেছেন সবজি বিক্রি করে। আবার যারা মাত্র ১০ থেকে ৪০ শতক জমিতে শশা এবং চিচিঙ্গার চাষ করেছেন, তারা জানালেন ভিন্ন কথা, জমি তৈরী, মাদা তৈরী, বীজবপন, মাচা বা জাংলা তৈরী, নিড়ানী, সেচ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কীটনাশক-এবং ছত্রাক নাশক কেনার পর এখন বলতে গেলে তারা নিঃস হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন এনজিও হতে অতিরিক্ত সুদে ঋণ নিয়েও খরচ চলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে আবারো অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিতে দ্বারস্থ হচ্ছেন গ্রাম্য সুদখোর মহাজনদের নিকট। কেউ কেউ দাদনে নিচ্ছেন সার-বিষ। দাম ধরা হচ্ছে দ্বিগুণ। টাকা দিতে হবে ধান বা সবজি বিক্রির পর।
জানা যায়, এভাবে চড়া সুদে সার বিষ সরবরাহে এগিয়ে রয়েছে পাইকুড়া বাজারের সুদখোর ব্যবসায়ী রুস্তম আলী। সে নাকি লাখ লাখ টাকার সার-বিষ চড়া সুদে সরবরাহ করে ফি-বছর। আর এভাবে সুদি কারবার করে তিনি অল্প দিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। এ অবস্থায় সবজির আবাদ করতে গিয়ে ক্ষুদ্র চাষিরা নিসহ্য হয়ে পড়েছেন। তারা জানান, আসলে আমাদের মতো গরিবের যত মরা।
প্রসঙ্গত এ সব বিল এলাকার জমি নিচু হওয়ায় বছরের ৬ মাস পানি জমে থাকায় আমন ফসল হয়না। তাই ইরি-বোরোর, অর্থাৎ এক ফসলী জমি এগুলো। সে সব জমিতেই বর্তমানে সবজির আবাদও হচ্ছে। তাই কৃষকরাও বেজায় খুশি। খবর নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছরে সবজি চাষে অনুকুল আবহাওয়ার জন্য অনেকেই লাভের মুখ ও দেখেছেন। আর সে আশায়ই এবারও হাত দিয়েছেন, শশা, চিচিঙ্গা ও কুমড়া চাষে। অথচ আজ থেকে মাত্র ৮-১০ বছর পূর্বেও বিলে এ ভাবে ফসল ফলানো যাবে তা কল্পনাও করেনি কৃষক। এখন বিলের জমিতে ফসল রোপন করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন । খবর নিয়ে দেখা গেছে প্রতি বছর বাড়ছে বিল জমির পরিধি। সেই সাথে বাড়ছে ফলন। সবজির আবাদ লাভজনক হওয়ায় বাড়িয়ে দিয়েছে সবজির আবাদ। লাভের টাকা হাতে পেয়ে স্বাবলম্বী ও হচ্ছে অনেক কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, বিল এলাকায় সবজি আবাদ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায়, অনেকেই সবজির আবাদ করছে এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তা ছাড়া কৃষক যে আবাদ লাভজনক, সে আবাদইতো করবে। তবে আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি, যাতে কৃষক লাভবান হন। তবে অনেকেরই অভিযোগ কৃষি বিভাগ শুধু বাহবা নিতেই তৎপর। আসলে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকাজে ব্যাপক গাফিলতি রয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন