শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রহসনের সরকারকে গ্রহণযোগ্য করতেই চা-চক্রের আয়োজন

আলোচনা সভায় ড. মঈন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত প্রহসনের সরকারকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করতেই গণভবনে চা-চক্রের আয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। তার মাধ্যমে এদেশে একটি প্রহসনের সংসদ হয়েছে এবং যে সংসদের মাধ্যমে এদেশে একটি নতুন করে সরকারও গঠিত হয়েছে।
সেই সরকারের সত্যিকারের অবস্থান কোথায়- সেটা আমরা যদি নাও জানি, সরকার নিজে কিন্তু ঠিকই জানে। আর নিজে ঠিকই জানে বলেই আজকে সরকার ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে কিভাবে তাদের এই যে প্রহসনের সরকার, সেই সরকারকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই চা-চক্রের (গণভবনে) আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল (রোববার) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে কোকোর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মঈন খান বলেন, ২৯ ডিসেম্বর রাতে ও ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে কী নাটক ঘটেছিলো সেটা সম্পর্কে দেশের মানুষ অবহিত আছেন। তারা জানে কিভাবে একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রসহনের সরকার গঠিত হয়েছে। আর সেই সরকারকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করতেই চা-চক্রের আয়োজন বলে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচনের ভোট কারচুপির সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এটা কোনো নির্বাচন হয়নি, এটা হচ্ছে একটা প্রহসনের নির্বাচন, একটা ভূয়া নির্বাচন। সেই ভূয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ আজকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে সেই সংসদ বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। কার প্রতিনিধিত্ব করে সেটা আপনারাই বুঝে নিতে পারেন, আমার অধিকতর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নাই।
তিনি বলেন, এই সংসদ আজকে প্রতিনিধিত্ব করে সন্ত্রাসীদের, যে সন্ত্রাসীরা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে সারা বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা ভোট জালিয়াতি করে নিজেদের বিজয়ী বলে ঘোষণা করেছে। মঈন খান বলেন, আমাকে কয়েকজন রাষ্ট্রদূত প্রশ্ন করেছিলেন আচ্ছা বিএনপির তো পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছেন, পরে আরেকজন নির্বাচিত হয়েছেন। আমাকে যখন রাষ্ট্রদূতরা জিজ্ঞাসা করেছেন তখন ৫জন নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাহলে সেই পাঁচজন কী সংসদে যাবে না। আমি বললাম, কেউ যদি নির্বাচিত হয় সংসদে যাবে না কেনো? কিন্তু আপনারা (রাষ্ট্রদূত) কী জানেন না। বিএনপির পাঁচজন তো নির্বাচিত হয়নি, তাদেরকে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। যাদের নির্বাচিত দেখানো হয়েছে তাদের সংসদে যাওয়ার কি রাইট রয়েছে- সেই প্রশ্নের জবাব দেন তাহলে নিশ্চয় বিএনপির পাঁচজন সংসদে যাবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আসলে এই নির্বাচনে কে জয়ী, কে বিজয়ী সেটা কোনো প্রশ্নই নয়। নির্বাচনে যাদেরকে জয়ী দেখানো হয়েছে তারা জয়ী হয়েছেন, এই নির্বাচেন যাদেরকে পরাজিত দেখানো হয়েছে তারা পরাজিত হয়েছেন এবং সেটা করা হয়েছে শুধু ভোট রিগিংয়ের মাধ্যমে নয়, এটা করা হয়েছে সন্ত্রাসের মাধ্যমে।
১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রচারণার প্রথম দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তার ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার ওপরে, মহাসচিবের ওপরে এভাবে বাংলাদেশে যে কত জায়গায় আক্রমণ হয়েছে এবং সেই আক্রমণ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অব্যাহতভাবে চলেছে। এখানে কোনো নির্বাচন হয়নি বাংলাদেশে। এভাবে কোনো দেশে নির্বাচন হতে পারে না। শুধু বিএনপি নয়, যারা বিএনপির সমর্থক তারা নয়, আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে জিজ্ঞাসা করুন তাকে বলুন আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলুন দেখি- এটা কেমন নির্বাচন হয়েছে। তারা নিজেরাই উত্তর দেবে গোপনে আপনার কানে কানে বলবে, প্রকাশ্যে বলবে না। প্রকাশ্যে বলবে চমৎকার নির্বাচন। চমৎকার নির্বাচনে কী ধারা আপনারা দেখেছেন ১৯৭৩ সালে ২৯৩টি আসন পেয়েছিলো এবং পরবর্তিতে আমরা দেখলাম এই ৩০ ডিসেম্বরের তথাকথিত নির্বাচনে আবারো ২৯৩টি আসন। চমৎকার। এই ধরনের সমীকরণ বিএনপির করার যোগ্যতা নাই, আমরা এসব ভোট জালিয়াতির দক্ষমতায় পারদর্শি নই, আমরা এটা কখনো করিনি।
সরকারের সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী মঈন খান বলেন, আজকে যত উন্নয়নের কথা বলা হোক না কেনো, উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, এই নতুন সরকারের বয়স চার সপ্তাহ হয়েছে। সংসদ এখনো বসেনি। দুইটি মন্ত্রিসভার বৈঠক সম্ভবত হয়েছে। কিন্তু দেখুন- এই ৪ সপ্তাহের ভেতরে ১০/১৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিভাবে হলো, কারা নিলো, কোনো দায়িত্বে নিলো? উত্তর হচ্ছে- মেগা প্রজেক্ট, মেগা দুর্নীতি।
সকলকে সংগঠিত হওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, যেখানে অলিখিত বাকশাল চলে সেখানে সুশাসনের কথা, মায়া-মমতার কথা, হৃদয় বেদনার কথা বলে কোনো লাভ নেই। অনেক বক্তা বলেছেন, যে আমাদের এখন নতুন করে ভাববার, নতুন করে কৌশল নেওয়ার সময় এসেছে। আমি বলতে চাই, অন্যায়-নির্যাতন করে কোটি কোটি মানুষকে হয়ত সাময়িকভাবে স্তব্ধ করে রাখা যাবে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে চিরকালের জন্য কোনো অপশক্তি স্তব্ধ করে রাখতে পারবে না।
মরহুম আরাফাত রহমান কোকো ‘ক্রীড়া সংগঠক’ হওয়া সত্বেও তার ওপর ১/১১ এর সরকারসহ পরবর্তি সরকারের নির্যাতনের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্মৃতি সংসদের শামীম তালুকদার, আলমগীর হোসেন, শাহিন খন্দকার, রেজাউল করীম রেজাসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন