শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সাতক্ষীরায় আবাদি জমিতে ইটভাটা!

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:১১ এএম

আবাদি জমিতে একের পর এক ইটভাটা গড়ে ওঠায় শংকিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার কৃষকরা। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে ফসলহানির আশংকা করছেন তারা। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইটভাটার কারণে দীর্ঘমেয়াদে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যেতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বসতি ও আবাদি জমির আশপাশে ইটভাটা করা নিষিদ্ধ হলেও আবাদি জমিতে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভাটার লাইসেন্স আছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্রও নিয়েছে তারা।

তবে আশার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব ভাটা উচ্ছেদে উদ্যোগ নেয়া হবে। উদ্ধার করা হবে কৃষিজমি। পরবর্তী সময়ে আবাদি জমিতে ইটভাটার অনুমোদন না দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশঘাটা গ্রামে এবিবি ব্রিকস নামের ইটভাটাটির চারপাশে সবজি ক্ষেত। স্থানীয় কৃষকদের আপত্তি উপেক্ষা করে ভাটাটি নির্মাণ করেছেন সাতক্ষীরা শহরের লস্কারপাড়া এলাকার শোকর আলী।
ইটভাটা সংলগ্ন সবজিক্ষেতের মালিক চাষী আবুবকর সিদ্দিক বলেন, গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ভাটা নির্মাণে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী ওই লোক পরিবেশ অধিদপ্তরকে ‘ম্যানেজ’ করে ভাটা নির্মাণ করেন।

তিনি আরো বলেন, ভাটাটির চুল্লি জ্বালানো হলে আশপাশের মাটি গরম হয়ে যায়। চিমনি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে ছাই বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ফসলের মারাত্মক ক্ষতির আশংকা করছেন এ কৃষক।

কৃষকদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এবিবি ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলী বলেন, লাইসেন্স যখন দেয়া হয়েছে তাহলে ভাটার মালিকের দোষ কোথায়! আপনারা প্রশাসন ও খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরে বলেন। তারা ভাটা বন্ধ করে দিলে আর ইট পোড়াব না।
একই গ্রামে অবস্থিত বিএস ইটভাটাটি আবাদি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদেরও ছাড়পত্র দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এসব ভাটায় আবাদি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি দিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে ইট।

বিএস ব্রিকসের সত্ত্বাধিকারী রফিকুল হাসান বলেন, আবাদি জমিতে ইটভাটা আমি তো একা করিনি! এখানে আরো অনেক ভাটা আবাদি জমির ওপর। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রশাসন আমাদের অনুমোদন দিয়েছে বলেই আমরা ইট পোড়াচ্ছি।
সাতক্ষীরার প্রায় সব উপজেলাতেই একই চিত্র। সরকারি হিসাবে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় নিবন্ধিত ইটভাটার সংখ্যা ১১৮টি। যার অধিকাংশই আবাদি জমিতে।
বাংলাদেশ কৃষক আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী বলেন, ইটভাটাগুলো থেকে কয়লা পোড়ানো ধোঁয়ার সঙ্গে ছাই চারদিকে ছড়িয়ে ফসলের পাশাপাশি গাছপালা ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। জেলার আবাদি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান তিনি।

এদিকে ফসলের ক্ষতি করছে এমন ইটাভাটা সরিয়ে নিতে এরই মধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস। তিনি বলেন, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। ফলে ক্রমান্বয়ে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমি উদ্ধারে অচিরেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।

আবাদি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এমএম মোস্তফা কামাল। পাশাপাশি জেলায় অন্যান্য নিয়মবহির্ভূত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন