সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অর্থনৈতিক অর্জন ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গত এক দশকে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে ও অভাবনীয় সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। দেশের কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সাথে সাথে গড় আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তানের মত প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্য আয়ের দেশে পদার্পণ করতে চলেছে। উন্নয়নের সুদুরপ্রসারী রোডম্যাপ অনুসারে অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় শামিল হওয়ার প্রত্যাশা পুরণ হওয়া অসম্ভব নয়। এ লক্ষ্যেই এখন দেশের সামগ্রিক অবকাঠামো, বিদ্যুত ও জ্বালানী খাতের উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরীর কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অতীতে মাঝে মধ্যে যে সব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও সাহসী ভ’মিকায় তা উত্তরণ করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। কথিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিলের পরও পদ্মাসেতুর মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আত্মনির্ভরতার অনন্য নজির স্থাপন বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ও উন্নয়নের ধারাক্রম এখন আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচ্য বিষয়ে পরিনত হয়েছে। বৃটিশ পত্রিকা স্পেক্টেটরের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে গত ৫ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি চীন ও ভারতের সমানতালে এগিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত অর্থবছরের মাঝামাঝি থেকে চলতি অর্থবছরের এ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে সব সম্ভাবনার কথা আলোচিত হয়েছে সউদী আরবের বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে এখন তা আরো জোরদার হয়েছে। চীন, ভারত, কোরিয়া, জাপানের মত এশীয় অর্থনৈতিক শক্তিগুলো ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ৪৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। বিনিয়োগের পাইপলাইনে থাকা এসব প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরকার নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে সউদী সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিদের আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের খরা কেটে গিয়ে নতুন গতি লাভ করতে পারে, যা’ উন্নত বাংলাদেশের প্রত্যাশার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। আর মাত্র দু’ বছর পর বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী পালন করবে। এক অমিত সম্ভাবনাময় ও সমৃদ্ধির সোপানে আরোহী বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁঁচু করে দাঁড়াতে যা কিছু করতে হয় বর্তমান সরকার তার সবই করার দৃঢ় অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছে। সরকারের তৃতীয় মেয়াদের ধারাবাহিকতা এবং নতুন মন্ত্রী পরিষদে ব্যাপক রদবদল ও নবীন-প্রবীনের মেলবন্ধনে সেই অঙ্গিকারের প্রত্যয় দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান এবং অর্থমন্ত্রণালয়ে দক্ষ ও সুযোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়নের শুভ লক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দেখা যাচ্ছে। তবে দেশের অর্থনীতিতে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি সত্তে¡ও গত এক দশক ধরে যে সব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতাগুলোর কথা বার বার উঠে এসেছে এখন সে সব বিষয়ের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
গত এক দশকে দেশের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়েছে সত্য, সেই সাথে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভ’রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটির প্রতিবন্ধকতা ও সিদ্ধান্তহীনতার নিগড় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন ও বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, দফতর ও সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও অস্বচ্ছতার যে ধারাবাহিক নজির গড়ে উঠেছে তা থেকে বেরিয়ে আসার দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল, গতিশীল নেতৃত্বের পাশাপাশি মন্ত্রী ও আমলাদের সমন্বিত উদ্যোগ থাকতে হবে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক সক্ষমতা ও সদিচ্ছা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। সময়ের প্রত্যাশার সাথে তাল মিলিয়ে দেশের সামগ্রিক প্রশাসন ও আমলাতন্ত্রে নতুন চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার উন্মেষ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের পরিবর্তন হলেও আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশের উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের আমলাতন্ত্রকেই কার্যকর ভ’মিকা পালন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের মেধা ও যোগ্যতাকে প্রধান্য দিয়ে সরকার ও প্রশাসনের নীতি নির্ধারকদের দলনিরপেক্ষ হওয়া খুবই জরুরী। বিশেষত: বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং মানুষের সামাজিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। যে প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, তা যেন শুধু কথার কথা না হয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীরা এখনো নানা রকম মামলা ও দুদকের হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং বৃহত্তর স্বার্থেই এসব বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে জাতীয় লক্ষ্য অজর্নের দিকে নিয়ে যেতে হলে দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, মূল্যবোধ ও সামাজিক-রাজনৈতিক নিরাপত্তার দিকগুলো অগ্রাহ্য করে উন্নত ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন