ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
আমাদের দেশে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান ধারা হচ্ছে, সাধারণ শিক্ষা বা জেনারেল এডুকেশন। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা মুসলমানদের হাত থেকে ভারতবর্ষের রাজত্ব কেড়ে নিয়েছিল ১৭৫৭-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। এ দেশবাসীর ওপর ইংরেজ কর্তৃত্ব স্থায়ী করার লক্ষ্যে তারা এই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিল এবং সেই সূত্রে এটি ইংরেজি শিক্ষা বলেই অধিক পরিচিত। পাশাপাশি চালু আছে মাদ্রাসা শিক্ষা। মাদ্রাসা শিক্ষার দুটি ধারা আলিয়া নেসাবের মাদরাসা ও কওমি মাদরাসা। আমাদের আজকের আলোচনা জেনারেল শিক্ষায় ইসলামী শিক্ষা কীভাবে চালু করা যাবে, তার মধ্যেই আবর্তিত থাকবে।
স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সাধারণ শিক্ষা গোলামী যুগে ইংরেজদের দ্বারা প্রবর্তিত হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এই শিক্ষাই এখন আমাদের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের দেশে প্রতি দশজন ছেলেমেয়ের মধ্যে ৯ জন লেখাপড়া করে এই শিক্ষাব্যবস্থায়। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আকারে প্রচলিত এই শিক্ষায় শিক্ষিতরাই মূলত দেশ-চালায়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, আর্মি অফিসার এখান থেকেই তৈরি হয়। কাজেই এই শিক্ষাব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই।
যারা মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে জীবনভর সাধনায় নিয়োজিত বা অতিশয় ধর্মপ্রাণ, তাদের অনেকের মধ্যে জেনারেল শিক্ষার প্রতি একটি ঔদাসীনতা দেখা যায়। তারা মনে করে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মুসলমানি শিক্ষা নয়; এমন কি মুসলমানি থেকে খারিজ করার শিক্ষা। এই ধারণা আত্মঘাতী। কেউ যদি বলে, সহায়-সম্পত্তি বলতে আমি বাড়ির পাশের মসজিদ, মাদরাসার জায়গা বা কবরস্থানকেই মূল্যবান মনে করি, বাদবাকি জমিজমা দুনিয়াদারি এবং পরিত্যাজ্য, তাহলে দশাটা কী হতে পারে এবং এমন ধারণা তার জীবনে কিরূপ দুর্দশা ঢেকে আনতে পারে, যুক্তি দিয়ে বুঝানোর দরকার হয় না। আমার এ কথায় যারা একমত তাদের বলব, যে শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের শতকরা ৯০ ভাগ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে ও দেশ চলে, তাকে ইসলামবিরোধী না বলে কীভাবে মুসলমানি শিক্ষার আওতায় আনা ও রাখা যায়, সে কর্মপন্থাটি ভেবে দেখুন।
আমাদের সমাজের আরেকটি প্রান্তিক ধারণা হচ্ছে, জেনারেল শিক্ষার অতি ভক্ত লোকেরা যখন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার দাবি শুনে, তখন নাক ছিটকায় যে, এবার বুঝি স্কুল-কলেজগুলোকে মাদরাসা বানানোর মৌলবাদী ফন্দি-ফিকির হচ্ছে। অথচ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায় এ ধরনের কোনো আশংকা সম্পূর্ণ অমূলক। বরং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে মাওলানা হওয়ার পরিবর্তে মুসলমান হওয়ার কথাই এখানে বলা হচ্ছে। কাজেই বিষয়টি নিয়ে তাদেরও চিন্তাভাবনা করা জরুরি মনে করি। কারণ আমাদের শতকরা ৯০ জন লোক তো মুসলমান। বাকি ১০ ভাগও স্ব স্ব ধর্মের প্রতি আস্থাবান।
জেনারেল শিক্ষায় প্রধানত চারটি স্তর প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চতর। প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই স্তরগুলো বিন্যস্ত। প্রাইমারিতে ৫ বছর, হাইস্কুলে ৫ বছর, কলেজে ২ বছর, তার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ বছর, মোট ১৮টি বছর শিক্ষাবর্ষে লেখাপড়া করে আমাদের ছেলেমেয়েরা সর্বোচ্চ ডিগ্রি বা মাস্টার্স পাস করতে পারে। তারপরে এম. ফিল, পিএইচডি গবেষণার জন্য অবারিত সময় থাকে।
দেখা যাক এই চারটি স্তরে ইসলামী শিক্ষার কতুটুকু ব্যবস্থা আছে বা প্রস্তাবিত ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় আর কতটুকু যুক্ত করলে মুসলমানিত্বের জন্য পর্যাপ্ত হবে।
প্রাইমারি স্তরের ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণীতে ইসলামিয়াত বা আরবি পড়ানো হয় না। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীতে নামকাওয়াস্তে ধর্মশিক্ষা দেওয়া হয়।
আমাদের মতে, মানুষের জীবন গড়ার এই মৌলিক স্তর থেকেই ইসলামী শিক্ষার বীজ বপন করতে হবে। হাদিসের নির্দেশ অনুযায়ী ১০ বছরে শিশু যাতে নামাজ আদায় করতে পারে সে লক্ষ্যে তাকে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য প্রচলিত বাংলা, ইংরেজি, অংক, ভূগোল ও সমাজ পাঠের পাশাপাশি ১০০ নম্বরের পরীক্ষার আন্দাজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা একান্ত জরুরি। আর অন্যান্য ধর্মাবলম্বী শিশু তাদের নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে মৌলিক-জ্ঞান আহরণ করবে। মুসলমান ঘরের ছাত্র-ছাত্রীদের পাকি-নাপাকির বিচারবোধ, অজু, নামাজ, সালাম বিনিময়, কিছু দোয়া-কালাম প্রভৃতির ব্যবহারিক তালিম এই স্তরে দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। নামাজে পাঠ্য সূরাগুলো ও কোরআন মাজিদ স্বাধীনভাবে পড়ার মতো আরবি জ্ঞান, আল্লাহ, রাসূল (সা.), ফেরেশতা, পরকাল সম্পর্কিত ধারণা, নৈতিকতা, পবিত্রতা ও পরস্পরের সাথে সুন্দর ব্যবহারের সুফল সম্পর্কিত খুব হালকা ধরনের বই কোরআন হাদিস থেকে চয়ন করে পড়ালে প্রত্যেক শিক্ষার্থী আশাকরি সুন্দর মন ও চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠতে পারবে।
হাদিস শরিফে প্রত্যেক শিশুকে ৭ বছরে নামাজ পড়তে আদেশ দেয়া ও ১০ বছরে প্রয়োজনে নামাজের জন্য শাসন করার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই ছেলেমেয়েরা ১০-১১ বছর বয়সে প্রাইমারি শিক্ষা শেষ করে বিধায় এর মধ্যে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাতে অবশ্য সাধারণ বিষয়ে পড়াশোনায় মোটেও চাপ পড়বে না; বরং ছেলেমেয়েদের মন, চরিত্র ও মেধা বিকাশে একটি পবিত্র চেতনার অনুরণন হবে।
পরবর্তী ৫ বছর অর্থাৎ হাইস্কুলের শেষ পর্যায়টি হচ্ছে ৯ম-১০ম শ্রেণী। ১০ শ্রেণীর পাঠ শেষেই পরীক্ষা হয় মেট্রিকের। বর্তমানে এসএসসি বলা হয়। ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমল হতে নিয়ে এ পর্যন্ত এসএসসিতে পরীক্ষা দিতে হয় মোট ১০০০ নম্বরে। দুই একশ নম্বর হেরফের হলেও তা অতিরিক্ত সাবেজক্ট নিয়েই হয়। এই এক হাজার নম্বর পরীক্ষার মধ্যে শতকরা ১০ ভাগ বা ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয় ইসলামিয়াত নিয়ে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীরা তাদের ধর্ম সম্পর্কে পাঠ গ্রহণ ও পরীক্ষা দেয়।
এখন যদি হাইস্কুল স্তরকে মুসলমান বানাতে হয় তাহলে কী কী দরকার? অতিরিক্ত কিছুই দরকার নেই। এই ১০০ নম্বরই যথেষ্ট। তবে ইসলামিয়াত শিক্ষাকে একটু অবহেলিত অবস্থা থেকে টেনে তুলতে হবে। বইগুলো সুলিখিত হতে হবে আর পাঠদানের ঘণ্টাগুলো ক্লাসের সর্বশেষ ৭ম ঘণ্টায় না নিয়ে আগে-মাঝে স্থান দিতে হবে। হাইস্কুলের ৫ বছরের মধ্যে ১০০ নম্বরের বাধ্যতামূলক পরীক্ষার সুযোগটা হাতে রেখে এমনভাবে পাঠ্যক্রম সাজাতে হবে, যাতে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জন্য ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল, কোরআন, হাদিস, মাতা-পিতা, প্রতিবেশীর হক, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত প্রভৃতির মৌলিক জ্ঞান সহজ ভাষায় লাভ করার সুযোগ থাকে। বিশেষ করে, নামাজে পাঠ্য সূরাগুলো ও ৪০টি ছোট ছোট হাদিসের অর্থ নিজে নিজে বোঝার মতো আরবি ভাষাজ্ঞান আয়ত্ত করতে পারে। এর বেশি দরকার নেই।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, যারা চায় না যে, আমাদের সমাজে মুসলমানিত্ব বজায় থাকুক, কিংবা অন্য ধর্মাবলম্বীরা ধর্মপ্রাণ হয়ে জীবনযাপন করুক, তারা বারবার এই ১০০ নম্বরের ওপর খড়গ চালানোর চেষ্টা করেছে। ২০০১ সালে যখন মাত্র ৩ মাসের জন্য তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, তখনই এই ১০০ নম্বর কর্তন করে ৫০ নম্বরে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়। অথচ অন্তর্বর্তী একটি সরকারের এমনটি করার কথা ছিল না। করেছে জাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের জায়গায় ঘাপটি মারা নাস্তিক চক্রটি। তবে তখন রাজপথে তাওহিদি জনতার প্রতিরোধের মুখে তা কার্যকর করতে পারেনি। এখন এই বাধ্যতামূলক ১০০ নম্বরের ইসলামিয়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতলবে নাম দেয়া হয়েছে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’। শোনা যাচ্ছে, যে কোনো সুযোগে এই ১০০ নম্বরের পরীক্ষাকে ঐচ্ছিক করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে আমরা দেশ, জাতি ও সরকারকে সতর্ক করতে চাই।
এখন যদিও আওয়ামী লীগের সরকার চলছে; কিন্তু অনেকের মতে বামপন্থি হিসেবে পরিচিত নাস্তিকরা সরকারের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। তারা প্রথম চোটেই ৯ম ও ১০ম শ্রেণীসহ প্রাইমারি ও হাইস্কুল থেকে যৎকিঞ্চিত ইসলামী শিক্ষার বিদ্যমান ব্যবস্থা বিদায় দেয়ার আয়োজন করেছিল। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভয়ে একটু সংযত হলেও কৌশলে নাম পাল্টিয়ে ফেলেছে। বলেছে ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’। ব্যাকরণ যারা পড়েছি, অন্তত এতটুকুন বুঝি যে, বাক্যে ‘ও’ এর আগের ও পরের জিনিসটি ভিন্ন হয়। কাজেই ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বলে দুটির মধ্যে একটি বিরোধ বোঝানোর প্রচ্ছন্ন কুশলতা কাজ করেছে। প্রশ্ন হলো, আগের মতো ইসলামিয়াত ও হিন্দুধর্ম শিক্ষা বা খ্রিস্টান ধর্ম শিক্ষা নাম রাখলে আপত্তি কী ছিল? এর সৎ জবাব তারা দেবেন না, দিতে পারবেন না। এর মধ্যে কী কুটিলতাটি কাজ করেছে তার একটি নমুনা সংবাদপত্রের পাতায় প্রতিবাদ আকারে আমরা দেখেছিলাম। তা ছিল ৯ম ও ১০ শ্রেণীর পাঠ্যবইতে মুদ্রিত হয়েছে ‘আল্লাহর নামে ও দেবদেবির নামে জবাইকৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া বৈধ’। এমন শিরকী কথার প্রতিবাদে দেশ যখন গর্জে উঠছিল, তখন প্রতারকরা তড়িঘড়ি লেজ গুটিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভুল সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
মোটকথা হাইস্কুল পর্যায়ে ১০০ নম্বরের ইসলামিয়াত শিক্ষা বহাল রাখা এবং তাকে আরো সুলিখিত ও সমৃদ্ধ করা আমাদের প্রাণের দাবি। কারণ, আমরা মুসলমান আমাদের ছেলেমেয়েরা ইসলাম, নামাজ, কালাম, ইহকাল-পরকাল সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও আচরণবিধি শিক্ষালাভ করতে পারলেই সুন্দর চরিত্রবান সুনাগরিক আশা করা যায়। আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা নামাজ-কালাম পড়–ক। পিতামাতা প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে সচেতন হোক। আল্লাহর ভয় ও রাসূলের মহব্বত নিয়ে সুন্দর মনের অধিকারী হোক। তাহলেই তো কোনো পাপ, চরিত্রহীনতা সহজে তাদের জীবনকে স্পর্শ করতে পারবে না।
ইসলামের ধর্মীয় অনুশাসন বা আচরণগত দিক ছাড়াও জ্ঞানগত প্রয়োজনেও এই শিক্ষা দরকার। স্কুলে সমাজ, ভূগোল, ইতিহাস কেন পড়ানো হয়। নিজের পরিবেশ ও অতীতকে জেনে ভবিষ্যতের পথ চলা সহজ হওয়ার জন্যই তো এসব শিক্ষা দেয়া হয়। পরিবেশ ও ইতিহাসকে জানতে হলে তো অবশ্যই সমাজের মানুষকে জানতে হবে। মানুষকে জানতে হলে তাদের চিন্তা, মনমানসিকতা, রুচি-প্রকৃতি জানতে হবে। মানুষ কোন কাজকে বৈধ-অবৈধ মনে করে বা ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা সাব্যস্ত করে, সমাজে প্রচলিত ধর্মীয় প্রথা ও আনুষ্ঠানিকতাগুলোর পেছনে দর্শন, ইতিহাস ও শিক্ষা কী কী আছে অবশ্যই জানতে হবে। নচেৎ নিজ দেশের মানুষকে ও সমাজকে জানা হলো না। এর জন্যই দেশবাসীর আচরিত ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এগুলো বাদ দিলে সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস ও ভুগোল তো পুঁথি মুখস্থ করার সমতুল্য হবে।
কোনো দেশের ব্যবসায়ীরা যদি নিজ দেশের উৎপন্ন পণ্য অন্য দেশে বাজারজাত করতে চায়, তাহলে প্রথমেই অনুসন্ধান করে ওই দেশের লোকদের আচার-আচরণ, রুচিবোধ, পছন্দ-অপছন্দ ধর্মীয় স্পর্শকাতরতা বা সহজে জনপ্রিয়তা লাভের বিষয়গুলো। কাজেই প্রাইমারি ও হাইস্কুল লেভেলে ইসলামিয়াত শিক্ষা বহাল রাখার বিষয়টি সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিতেও একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশাকরি, যারা সমাজ ও মানুষ নিয়ে ভাবেন, তারা বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করবেন আর যারা মাদরাসা অঙ্গন নিয়ে মশগুল আছেন, তারাও জেনারেল শিক্ষায় ইসলামিয়াত শিক্ষার গুরুত্বটি অনুধাবন করবেন। তখন যারা অতি সপ্তর্পণে গোটা জাতিকে নাস্তিক বানানোর কৌশল হিসেবে স্কুল-কলেজ থেকে ধর্র্মীয় শিক্ষা মুছে দিতে বা বিকৃত করতে চানÑ ইনশা আল্লাহ তারাই দৃশ্যপট থেকে মুছে যাবেন। হেফাজতে ইসলামের ডাকে সর্বপ্লাবী ইসলামী জাগরণের যে দৃশ্য আমরা ঢাকার বুকে ও সারাদেশে দেখেছি, তা একথা প্রমাণ করে যে, জনগণের ধর্মীয় চেতনাকে দমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে তা হঠাৎ গণবিস্ফোরণের রূপ নিতে পারে। কাজেই ধর্মীয় শিক্ষাকে সঠিক খাতে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়াই দেশ ও জাতির জন্য নিরাপদ ও বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
বিশ্বের দিকে দিকে মানুষ ধর্মের জন্য জাগছে, লড়ছে। এটি মানুষের সহজাত প্রবণতা। এ অবস্থায় কিছু লোক শতকরা ৯০ জন মুসলমানের এ দেশে মৌলবাদ তাড়ানোর খোয়াব দেখে ইসলাম খেদানোর আয়োজন করবেন, এ কেমন যুুক্তি ! তাদের ক্রিয়াকর্মই তো প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসছে। যদি ধর্ম সম্পর্কে জাতিকে অন্ধ বানাতে চান, তাহলে ধর্মান্ধতা আসবে। কারণ, ধর্মের সঠিক শিক্ষা ও চর্চার অভাবে এক শ্রেণীর লোক সহিংসতাকে ধর্মজ্ঞান করবে। অতীতে সুফি-দরবেশগণ এখানে ইসলামের সুন্দর শিক্ষা, আচরণ ও আদর্শ তুলে ধরেছেন। তাদের আমন্ত্রণে দলে দলে লোকেরা ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। কোথাও ধর্মীয় সম্প্রীতির ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা সুফিদের আচরিত সেই প্রেমময় ইসলামের চর্চা চাই স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, মাদরাসা-মসজিদে সমাজের সর্বত্র। কারণ এর অন্যথা হলে ধর্মান্ধতার প্রসার ঘটবে। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত হবে। আর আমরা কেউ তা চাই না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন