কুমিল্লা উত্তর সংবাদদাতা
জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত কুমিল্লাÑ১ আসনের দাউদকান্দি উপজেলা। এখানে ১২টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর তিনটি ইউনিয়নে মেয়দপূর্তি না হওয়ার কারণে নির্বাচন হবে না। সবগুলো ইউনিয়নে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চেয়াম্যান পদের জন্য মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। প্রার্থী বাছাই পর্বও শেষ হয়েছে। এই প্রথম তৃণমূলের ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। চলছে হিসাবÑনিকাশ। তবে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনাÑপর্যালোচনা ও সমালোচনা চলছে সর্বত্র। দলীয় টিকিট যারা পেয়েছে তাদের এলাকায় তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই। তারা এলাকার জনগণ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তরুণ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী চেয়েছিলো। কিন্তু যোগ্য প্রার্থীর অভাবে সে আগের পুরনো লোকদের বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে তৃণমূল নেতারা খুশি হতে পারেনি, তারা হতাশ। নির্বাচনে তারা ফলাফলে তেমন একটা সুবিধা করতে পারবে না বলে স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তবে এদের মধ্যে গৌরিপুর ও সুন্দলপুর ইউনিয়নের প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি আবুল হাশেম ও কুমিল্লা উত্তর জেলা জাসাসের সভাপতি আরিফ মাহামুদের এলাকায় মোটামুটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এই দুই মনোনয়নে নেতাকর্মীরা খুশি হলেও গৌরীপুরে আ.লীগের বেশ শক্ত প্রার্থী রয়েছে। ‘এদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে কারো কারো আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত হওয়ার আলোচনা চলছে। সহসা বিএনপির কমপক্ষে ৫ জন প্রার্থী শাসকদলের প্রার্থীরদের গোপনে সমর্থন দিবে। তবে এসব ক্ষেত্রে ভালো লেনদেন হবে বলেও ইতোমধ্যে বড় দুই দলের ভোটারদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে’। এখানে বিএনপির মনোনয়নে যোগ্য প্রার্থীর অভাব একটা রাজনৈতিক ও নেতৃত্বের মহাসংকট বলে মনে করছেন রাজনেতিক বোদ্ধারা। কারণ হিসেবে জানা য়ায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিতি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যেসব নেতা টেন্ডারবাজিÑদখলবাজি আর তদবিরবাজি করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তাদের কারো কারো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমটির সভাপতি আওয়ামী লীগের এমপি সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূইয়ার সাথে গোপন আঁতাত, কেউ কেউ তাদের অসৎ উপার্যিত সম্পদ রক্ষা করতে রাজনীতি থেকে নিজেদের নিস্ক্রীয় করে রেখেছে, দাউদকান্দি পৌর মেয়র আবদুস সাত্তার আ.লীগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান- এসব মিলে দলে চরম বিপর্যয় দেখা দেয়। ভেঙে পড়ে দাউদকান্দি বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো। দলটি কবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সে ব্যাপারে সন্দিহান রয়েছে। এদিকে মেজর জেনারেল (অবঃ) সুবিদ আলী ভূইয়াকে আওয়ামী লীগ থেকে টিকেট দিলে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৩৫ বছর পর এ আসনটি আ.লীগের ঘরে উঠে। ৭৩’র নির্বাচনের পর থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যায়। এখানকার আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ৩৫ বছর আর আলোর মুখ দেখেনি। এমপি নির্বাচিত হয়ে সুবিদ আলী ভূইয়া এলাকার উন্নয়নে এবং রাজনীতিতে নিজেকে মনোনিবেশ করেন। গত ৭ বছরে এখানকার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে তিনি যেমন যুগান্তকারী সাফল্য দেখিয়েছেন তেমনি রাজনীতিতে রয়েছে সাফল্য। এক সময়ের বিএনপির ঘাটি আজ তছনছ অবস্থায় পতিত। দাউদকান্দির রাজনীতির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এখন সুবিদ আলী ভূইয়ার হাতে। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ও এলাকাকে তিল তিল করে সাজিয়েছেন, সাজাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে এখানকার আওয়ামী লীগ দিন দিন চাঙা হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেনÑ গৌরীপুর ইউনিয়নে আবুল হাসেম সরকার (আ’লী) ও আবুল হাসেম (বিএনপি), জিংলাতুলীতে মনির হোসেন সরকার (আ’লী) ও মোস্তাক হোসেন খান (বিএনপি), সুন্দরপুরে আরিফ মাহামুদ (বিএনপি) ও মাসুদ আলম (আ’লী), মারুকায় খলিল তালুকদার (আ’লী) ও সামসুল হক সওদাগর (বিএনপি), বিটেশ্বরে জেবুন্নেছা (আ’লী) ও নুরুল আমীন মীর (বিএনপি), ইলিয়টগঞ্জ উত্তর জসিম প্রধান (আ’লী) ও হুমায়ুন কবির (বিএনপি), গোয়ালমারীতে জসিম হাসান (আ’লী) ও আহমদ হোসেন তালুকদার (বিএনপি), পদুয়ায় বাবুল (আ’লী) ও কামাল হোসেন (বিএনপি), দাউদকান্দি উত্তরে ইঞ্জিনিয়ার সালাম (আ’লী) ও দেওয়ান আব্দুস সাত্তার (বিএনপি), মালিগাঁও নুরুল ইসলাম (আ’লী) ও শাহজাহাল (বিএনপি), মোহাম্মদপুরে দুলাল (আ’লী) ও মজিবুর রহমান (বিএনপি), পাঁচগাছিয়ায় জামাল চৌধুরী (আ’লী) ও শাহজাহান সরকার (বিএনপি)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন