কিশোরগঞ্জ জেলার দু’টি উপজেলা ভৈরব ও কুলিয়ারচর। এই দুটি উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৬ আসন। ভৈরব-কুলিয়ারচর দু’টি ভিন্ন উপজেলা হলেও চালচলনে মনে হয় সবাই একই উপজেলার বাসিন্দা। কুলিয়ারচর সদর ও ভৈরবের প্রত্যন্তঅঞ্চল মানিকদীর মাঝ পথে মিলনে বাধা শুধু একটি নদী। ওই নদীর নাম কালি নদী। দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলের মানুষজনের যোগাযোগ ছিল খেয়া পাড়াপাড়। যদিও ভৈরব-কুলিয়ারচরে যোগাযোগের একটি সড়ক পথও রয়েছে। তবে খেয়া পাড়াপাড়ের মাধ্যমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৫টি ইউনিয়নের মানুষই পার্শ্ববর্তী উপজেলায় কম দূরত্বের আসা যাওয়ার মাধ্যম ছিল খেয়া নৌকা। দু’পাড়ের মানুষজন সহজ যোগাযোগের জন্য দুই উপজেলার মিলনস্থলে কালি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মিত হবে, এমন স্বপ্ন ছিল ভৈরবের কৃতীসন্তান, মরহুম প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের। সেতু নির্মাণের দাবি ছিল দুই উপজেলার মানুষেরই। শেষ পর্যন্ত কালি নদীর উপর এই সেতু নির্মাণের ফলে ভৈরব-কুলিয়ারচর মানুষের মাঝে নতুন করে তৈরি হলো সেতুবন্ধন।
জানা যায়, এলাকাবাসীর দাবির দীর্ঘ ৪৬ বছর পর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের অধীনে গত ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব শহরের ১২ কিলোমিটার দূরে মেঘনার শাখা গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পুরানগাঁও এলাকায় কালিনদীর উপর ৫২০.৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্ভোধন করা হয়। জিল্লুর রহমানের ছেলে স্থানীয় এমপি বিসিবি সভাপতি আলহাজ নাজমুল হাসান পাপন সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্ভোধন করেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপ অব কন্সট্রাকশনের তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেতুর উভয় প্রান্তে চলছে সংযোগ সড়ক ও গাইড ওয়াল ব্লক বসানোর কাজ। আগামী ২৬ মার্চই নবনির্মিত সেতুটির উদ্ভোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপ অব কন্সট্রাকশনের সহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল ইসলাম। ২৬ মার্চই নবনির্মিত সেতুটির উদ্ভোধন হলেই এলাকাবাসীল দীর্ঘদিনের দাবি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের স্বপ্ন পুরণ হবে বলে দুই অঞ্চলের মানুষেরই অভিমত। এসেতু চালু হলে কৃষি নির্ভর ওই অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহণে গতি বাড়বে, বাড়বে জীবনযাত্রার মান।
গজারিয়া ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি ফরিদ উদ্দিন খান জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এ এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল কালী নদীর উপর একটা সেতুর। নদী পাড় হতে বিভিন্ন সময়ে ১৯ জন লোক নৌকা ডুবিতে মারা গেছে বলেও জানান তিনি। এই এলাকার মানুষের কষ্ট দুর করতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ১৯৯৬ সালে কালি নদীতে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়। পিতা মারা যাওয়া পর নাজমুল হাসান পাপন এমপির চেষ্টায় ব্রিজটি অনুমোদন হয়। বর্তমানে ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ায় এলাকাবাসী অনেক আনন্দিত বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী আবু ইউসুফ জানান, ভৈরব-কুলিয়ারচর কালি নদীর উপর ৫২০ মিটার সেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে নিচে থেকে পাইলিং, পায়ার, গার্ডার, ক্লাবের কাজ চলছে। চলতি বছরের ৩ মার্চই সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে। ২৬ মার্চ সেতুটি উদ্বোধনের মাধ্যমে জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন