শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

কাজিপুরের চরাঞ্চলে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে দেড় লাখ মানুষ

প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে

যমুনা নদীবেষ্টিত সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের চরাঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষ মারাত্মক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ঝুঁকিতে বসবাস করছে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনরকম জানমাল নিয়ে বেঁচে আছে চরাঞ্চলের মানুষ। বন্যা, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড়ে এরা সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে জীবন সংগ্রামে কোনরকমে বেঁচে থাকে। জরুরি দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে চরাঞ্চলের মানুষকে উদ্ধার করার জন্য কাজিপুর উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারি বেসরকারি কারও কোন উদ্যোগ নেই। যমুনা নদী ঘিরে রেখেছে পুরো কাজিপুর উপজেলাকে। মূল ভূখগু ছাড়াও উপজেলায় প্রায় ২২টি চর রয়েছে। এর মধ্যে মনসুরনগর, চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর, তেকানী, নাটুয়ারপাড়া, শুভগাছা, মাইজবড়ী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। মূল ভূখগু থেকে এসব চরে যেতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় এক থেকে আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধকরে যমুনার করাল গ্রাস থেকে বেঁচে থাকে। খাসরাজবাড়ীর এলাকার গোলাম রব্বানী, বেলাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম বিএসসি, কাজিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বকুল সরকার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা হকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চরের মানুষগুলো প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। চরাঞ্চলগুলোতে কোন উঁচু পাকা বিদ্যালয় বা আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের সময় নিজ উদ্যোগেই জীবন রক্ষা করতে হয়। প্রতিবছর ভয়াবহ বন্যাসহ নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রকৃতিক বিপর্যয়ে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে এ সব চরাঞ্চলের মানুষ। তাদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেয় হয় না। অনেক জাগায় নেই কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসা ব্যবস্থা। বিনা চিকিৎসায় অকালেই জীবন দিতে হচ্ছে গর্ভবতী মায়েদের। অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে গিয়ে পথেই মারা যায়। এর পাশাপাশি অনেক সময় দুর্যোগ আবহাওয়ার সংকেত পর্যন্ত তাদের কাছে পৌঁছায় না। দুর্যোগের সময় এ সব মানুষের উদ্ধারের জন্য নেয়া হয় না সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে নদীতে প্রচ- ঢেউ থাকায় জরুরি দুর্যোগ মুহূর্তে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য কোন নৌকা বা ট্রলার নদী পার হয়ে চরে পৌঁছতে পারে না। বাঁচার জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া কোন উপায় তাদের থাকে না। উপজেলার ফুলজোর মাঝেরচরের দুলাল মিয়া ও সোবাহান সরকার, আসলাম, মুকুল, আলী হোসেন বলেন, ‘দুর্যোগের সময় পলিথিন পেঁচাইয়া ছলপাল নিয়া কোনরকম ঘরের মাচাঁয় পইড়া থাহি,। মরই থাহি না বাঁইচা থাহি তা কেউ দেখতে আহে না। ঝড়ের পরেও কেউ খোঁজ নিতে আহে না।’ যুক্তিগাছা, মাইজবাড়ী চরের রহিমা, খোকন, খোকা, দুদু, চাঁন মিয়া, ভোলা সরকার, রফিকুল ইসলাম, আলআমিন, হবিবার রহমান বলেন, ‘আমাগো চরে কোন আশ্রয়কেন্দ্র নেই, উঁচু জায়গাও নেই। বন্যা ও নদী ভাঙনের সময় সবকিছু ভাসাইয়া লইয়া যায়। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জড়িত সূত্রগুলো জানায়, প্রতিবছর বন্য, ঝড় ও নদী ভাঙনে প্রায় ১ হাজার থেকে দেড় জাহার পরিবার গৃহহারা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ও নদীগর্ভে বিলীন হয় শত শত একর জমি। দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কোন ব্যবস্থা উপজেলার দুর্যোগ ও ত্রাণ কার্যালয়ের নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের নিজস্ব উদ্যোগে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে হয়। ফলে চরাঞ্চলের মানুষ চরম দুর্যোগ ঝুঁকিতে বসবাস করে। উপজেলা ত্রাণ কার্যালয় ও বেসরকারি সংস্থা সূত্রে জানা যায়, কাজিপুরের ২২টি চরের প্রায় দেড় লাখ মানুষের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে আশ্রয়ের জন্য খাসরাজবাড়ী ও তেকানীতে ২টি ফ্লাড সেন্টার রয়েছে। যা যমুনার পানি বৃদ্ধি পেলেই তলিয়ে যায়। এছাড়া কেয়ার বাংলাদেশ বেসরকারি সংস্থা চরাঞ্চলে ৫টি ফ্লাড সেন্টার নির্মাণ করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন