নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ৫টি ইউনিয়নে। সরকারি ৩৩ শতাংশে বিঘা হলেও এখানে ৬০ শতাংশ জমির ধান কেটে শ্রমিকরা সাড়ে ৩ হাজার টাকা পাচ্ছেন। ফলে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন ধান কাটা শ্রমিকরা। অপরদিকে ধান কাটা-মাড়াই করে শুকিয়ে হাটেবাজারে বিক্রি করে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। উপজেলার বাঙালিপুরের কৃষক রেজা, কামারপুরের তোফাজ্জল হোসেন, খাতামধুপুরের জিল্লুর রহমান জানান, বীজ, সার, কীটনাশক, নিড়ানি ও কাটা-মাড়াই ও শুকানোর ফলে এক মন ধানে কৃষকের খরচ পড়ে কমপক্ষে ৩৫০ টাকা ৪শ’ টাকা। আর সেই বোরো ধান হাটেবাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিবস্তা ১ হাজার ২০ টাকা। যা মন হিসাবে মাত্র ৫১০ টাকা। ৬০ শতাংশের এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান ফলছে ২০ মনের মতো। পুরুষ কামলা ৩শ’ টাকা ও নারী শ্রমিক ১৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ একজন পুরুষ কামলার জন্য প্রায় ১ মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষককে। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। এখানকার সবচেয়ে বড় ধানের হাট ঢেলাপীরে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা পাইকাররা প্রতিবস্তা (৭৫ কেজি) শুকনো বোরো ধান ১ হাজার ২০ টাকা ও একটু কাঁচা ধান মাত্র ৯২০ টাকায় কিনে বস্তা ভরছেন। হাটে আসা উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কাদিখোল এলাকার কৃষক হাসান আলী (৫৫) জানান, ধানকাটা শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করতে হবে তাই কাঁচা ধান নিয়েই হাটে এসেছেন। কৃষকদের প্রতি সরকারের একটু নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। শুধুমাত্র ধান কেটে গৃহস্থের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানো পর্যন্ত শ্রমিকদের প্রতিবিঘা জমির জন্য প্রায় ৪ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে কৃষকদের। আর মাড়াই কলে ধান মাড়াইয়ের জন্য আরও ৫শ’ টাকা মেশিনের মালিকের হাতে দিতে হচ্ছে। এছাড়া এলাকার ধানকাটা শ্রমিকরা বেশি লাভের আশায় বাইরের জেলায় চলে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে এখানে। অনেক রিকশা ও ভ্যান চালক কামলা সেজে ধান কাটছেন এবং ছোট ছোট কৃষকরা ঝড় বৃষ্টির আশঙ্কায় পরিবারসহ বোরো ধান কেটে ঘর করছেন। ধানকাটা শ্রমিকরা একদিকে বেশি লাভের আশায় বাইরে চলে যাওয়া এবং এলাকায় ইউপি নির্বাচনের তোড়জোর শুরু হওয়ায় জামাই আদরেও ধান কাটা শ্রমিক মিলছে না। যে বেশি দাম দিচ্ছেন তার ধান আগে কাটা হচ্ছে। এতে করে শ্রমিক ও কৃষকের বাকবিত-াও হচ্ছে। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হোমায়রা মন্ডল জানান, এবছর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৭ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও আবাদ হয়েছে আরও বেশি জমিতে। একের পর এক ফসল আবাদ করে দাম না পাওয়ায় কৃষকদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। ফলে কৃষকরা বিকল্প ফসল আবাদে ঝুঁকে পড়ছেন। সরকারি ধান ও চাল ক্রয় শুরু হলে ধানের দাম কিছুটা বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন