শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে
দারিদ্র্যকে জয় করে সেরাদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন কুড়িগ্রামে ভূমিহীন ভ্যানচালকের মেয়ে মৌলি। কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠার কারণে কোন বাধাই তার সাফল্যেকে থামাতে পারেনি। তার ধারাবাহিক সাফল্যে সবাই খুশি। কিন্তু আনন্দ নেই শৌলীর। ভবিষ্যৎ লেখাপড়া কিভাবে চলবে এ দুশ্চিন্তা তাকে গ্রাস করছে। মোছা. মৌলি আক্তার এবছর এসএসসিতে রাজারহাট উপজেলার সিংহীমারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার বাবা মফিজুল ইসলাম পেশায় একজন ভ্যানচালক। নিজের জমি নেই। প্রতিবেশীর জমিতে মাথা গুঁজে আছেন। দৈনিক গড়ে ২০০ টাকা আয়ে ৪ সদস্যের পরিবারের নুন আনতে পান্থার অবস্থা। মৌলির মা আইভি বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসারে কিছু সহায়তা করেন। রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের প্রত্যন্ত দেবালয় গ্রামে তাদের নিবাস। মৌলি জানান, ছোটবেলা থেকে সে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। পঞ্চম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছিল। কিন্তু তার স্বপ্নযাত্রার পথ ছিল কণ্ঠকাকীর্ণ। দারিদ্র্যতার কারণে শতেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। তার ওপর এসএসসি টেস্ট পরীক্ষার সময় এক বখাটে তার স্বপ্নভঙ্গের কারণ হতে যাচ্ছিল। এ নিয়ে থানায় মামলাও হয়। তবে ভেঙে পড়েনি সে। পরীক্ষায় ভালো ফল করে গ্রামবাসী ও শিক্ষকদের চমকে দিয়েছেন। মৌলি বলেন, ‘টাকার অভাবে টিউশনি পড়তে পারিনি। ড্রেস বানাতে পারিনি। অনেক দিন না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। ভালো খাবারও মুখে ওঠেনি। তা সত্বেও কখনও ভেঙে পড়িনি। আশা ছিল ভালো ফলাফল করলে সব ঠিক হয়ে যাবে’। তবে এখন মৌলির মনে হচ্ছে তার চিকিৎসক হবার স্বপ্নটা অনেক কঠিন। মৌলির বাবা মফিজুল বলেন, ‘মেয়েটা অনেক কষ্টে ভালো ফল করেছে। আমার সাধ্য-সামর্থ্য নেই। হৃদয়বান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে মৌলি পড়াশুনাটা চালিয়ে নিতে পারবে। তা না হলে ইতি টানতে হবে।’ সিংহীমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সুফিয়ান জানান, ‘ছোটবেলা থেকে মৌলী ক্লাসে মেধার পরিচয় দিয়েছে। আমরা সাধ্যমত সহায়তা করেছি। প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে সে অনেক ভালো করবে’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন