শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে লাখো লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে বৃহত্তম জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও গোটা ইজতেমা ময়দান। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে জুম্মার নামাজ শুরু হয়। জুম্মার নামাজের ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মো. যোবায়ের।
ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুম্মার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা, সাভার, গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমায় যোগ দেন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১১টার দিকে ইজতেমা মাঠ মুসল্লিদের অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের দিকে ছুটে আসেন জুমার নামাজ আদায় করার জন্য। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন পত্রিকা, চটের বস্তা, হোগলা পাটি বিছিয়ে জুম্মার নামাজে শরিক হন। এদিকে রাস্তায় নামাজ আদায়ের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকে।
জুম্মার নামাজে শরিক হন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াইএম বেলালুর রহমান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান জানান, জুম্মার নামাজ আদায় করতে আশপাশের জেলার লাখো মুসল্লিরা এখানে এসেছেন। জুম্মার নামাজ উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যানজটমুক্ত চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ শনিবার মোনাজাত হবে। ইজতেমায় অংশ নেয়া মুসল্লিগণসহ আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এখানে আসবেন। তার জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা বেশ জোরদার করা হয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে টঙ্গী ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরের বাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। ইজতেমা শেষে মুসল্লিরা বাড়ি ফেরার সময় একই ব্যবস্থাপনা অব্যাহত থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে আশা করব তারা যেন সু-শৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখবেন। রাস্তায় যে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে তাদের সহযোগিতা করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ।
বিশ্ব ইজতেমার দায়িত্বশীল মুরুব্বী মো. মাহফুজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বাদ আছর আম বয়ানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা। শনিবার আখেরি মোনাজাতে শেষ হবে প্রথম পক্ষের বিশ্ব ইজতেমা। এরপর দ্বিতীয় পক্ষের আখেরি মোনাজাত হবে সোমবার সকালে। আর এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা। দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীরা বিশ্ব ইজতেমায় ঈমান-আমল, আখলাক, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য-সংহতি ও জীবনের অন্যান্য বিষয়গুলোর উপর বয়ান করবেন। আম বয়ানে আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য কোরআন সুন্নাহর আলোকে প্রত্যেক মুসলমানকে নীতি আদর্শ মেনে চলার হেদায়েতী বয়ান দেয়া হয় এবং ইসলামের ছয় উছুল নিয়ে আলোচনা করা হয়। সকলেই আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নৈকট্য লাভের আশায় দূর দূরান্ত থেকে কষ্ট ত্যাগ করে ইজতেমা ময়দানে জুম্মার নামাজ আদায় করতে অংশগ্রহণ করেন।
কয়েকদিন আগে থেকে দেশের ৬৪টি জেলার তাবলিগ জামাতের মুসল্লিগণ ইজতেমা ময়দানে এসে নিজ নিজ জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্মিত তাশকিল কামরার টিন সেডের কামরায় অবস্থান নেয় বিদেশি মুসল্লিগণ। এর পূর্ব পাশে স্থাপিত হয় মূল মঞ্চ। মূল মঞ্চ থেকেই তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিগণ আরবি, উর্দু ও বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় বয়ান করছেন। তবে মূল বয়ান করছেন উর্দু ভাষায় সেটা বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি বিভিন্ন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
বিশ্ব ইজতেমায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, আহত ৭
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আজাদ মিয়া জানান, বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে রান্না করার সময় একটি গ্যাস সিলিন্ডারের চুলা থেকে বিকট শব্দ হলে আতঙ্কে ছুটাছুটি করতে গিয়ে কমপক্ষে ৭জন মুসল্লি আহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে রান্না করার সময় গ্যাস সিলিন্ডারের চুলা থেকে শব্দ হয়। এ সময় আশপাশে থাকা মুসল্লিরা আতঙ্কে ছুটাছুটি শুরু করে। এতে পড়ে গিয়ে ৭ জন মুসল্লী আহত হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় আহতদের একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মুসল্লীর নাম মো: আমিন উদ্দিন (৭০)। গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলায়।
ইজতেমায় চার মুসল্লীর মৃত্যু
টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমায় যোগদিতে আসা আরো দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। এরা হলেন ফেনী জেলার শফিকুর রহমান (৫৫) ও কুষ্টিয়া জেলার সিরাজুল ইসলাম (৬৫)। এ নিয়ে এজতেমা ময়দানে যোগদিতে আসা মুসল্লির মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ালো ৪ জন। গত বুধবার এবং বৃহস্পতিবারে আরো দুই মুসল্লি হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন। এজতেমার তত্ত্বাবধায়ক আদম আলী জানান, ভোর ৫টার দিকে শফিকুর রহমান এবং গভীর রাতে সিরাজুল ইসলাম নিজ নিজ তাবুতে সাথীদের উপস্থিতিতে মৃত্যুবরণ করেন। এজতেমার চিকিৎসক জানান, তাদের দুই জনেরই হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যান নাটোরের মোহাম্মদ আলী (৫৫) এবং বুধবার দিবাগত রাতে মারা যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুল জব্বার (৪০)।
বিশ্ব ইজতেমার বিদেশী হাজী ক্যাম্পে
একে অপরের মাঝে কুশল বিনিময় হয়নি
ঢাকার অদূরে তুরাগের তীরে বিশ্ব ইজতেমায় আগত বিদেশী মেহমানগণ আশকোণাস্থ হাজী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছেন। ভারত ও পাকিস্তানের মুরব্বীগণ ইতিমধ্যেই হাজী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছেন। হজ অফিসের সহকারী হজ অফিসার আব্দুল মালেক এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাজী ক্যাম্পে অবস্থানকৃত মাওলানা সা’দ গ্রুপের সমর্থনকারী বিদেশী মেহমানগণ আগামীকাল রোববার ভোরের দিকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিবেন। বিবদমান দু’গ্রুপের দু’দিন করে ইজতেমা হওয়ায় প্রথম পর্বে ও দ্বিতীয় পর্বে আগত বিদেশী মেহমানগণের মাঝে এবার কোনো দেখা সাক্ষাত ও কুশল বিনিময় হওয়ার সুযোগ থাকছে না।
মাওলানা যোবায়ের গ্রুপের দাওয়াতে আগত বিদেশী মেহমানগণ আজ শনিবার ইজতের প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে বিকেলের দিকে ইজতেমা ময়দান ত্যাগ করে বিমান বন্দরের পূর্ব পার্শ্বে হাজী ক্যাম্পে গিয়ে অবস্থান নিবেন। মাওলানা যোবায়েরের ছেলে মো. হানজালা এ তথ্য জানান। বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে বিবদমান দু’টি গ্রুপের বিঙ্খলার সৃষ্টি হলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ এডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহর বলিষ্ঠ উদ্যোগে উভয় গ্রুপই শান্তিপূর্ণভাবে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দু’দিন করে ইজতেমা পালনে রাজি হয়। ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেয়া বিদেশী মেহমানদের অনেকেই আজ রাতে ও আগামীকাল স্ব স্ব দেশে চলে যাবেন। তারা আজ বিকেলে অথবা রাতে হাজী ক্যাম্পের ডরমিটরিতে অবস্থান নিবেন। বিদেশী মেহমানদের জন্য হাজী ক্যাম্পের ডরমিটরিগুলো পরিস্কার করা হয়েছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর অনুমতির পরিপ্রেক্ষিতেই বিদেশী মেহমানদের হাজী ক্যাম্পে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন