যে বীর বাঙালিদের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার আদায় হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। তাদের অন্যতম ময়মনসিংহের গফরগাঁওর আবদুল জব্বার। এই ভাষাশহীদের সন্তানরা ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়ভাবে রাজধানীতে আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না।
আবদুল জব্বারের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, ‘বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন আমার বাবা। অথচ ভাষার মাস ফেব্রæয়ারিতে জাতীয় কোনো অনুষ্ঠানে আমাদের দাওয়াত দেয়া হয় না। ভাষা শহীদদের কারণেই যে বাংলা একাডেমির সৃষ্টি হয়েছে, সেই একাডেমি এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো সম্মাননা দেয়নি। এমনকি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলা বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠানেও দাওয়াত পাই না।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাছে আমরা তো তেমন কিছুই চাই না। প্রাপ্য সম্মানটুকু কি আমরা পেতে পারি না? জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে ডাক পেলে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে, ভাষাশহীদের সন্তান হিসেবে আমাদের মনে শান্তি লাগত।’
ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ৬ নং রাওনা ইউনিয়নের জব্বার নগরে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ি। এই গ্রামে সরকারিভাবে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার কাম স্মৃতিজাদুঘর। সরকারিভাবে একজন কেয়ারটেকার নিয়োগের পর চার-পাঁচ বছর আগে একজন লাইব্রেরিয়ানও নিয়োগ দেওয়া হয়।
পাঠাগারটি অত্যন্ত মনোরম পরিবেশের হলেও প্রচারের অভাবে প্রতিদিন পাঠক সংখ্যা থাকে খুবই কম। পাঠাগারটি চালুর পর নিয়মিত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রাখা হতো। কিন্তু প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে পাঠাগারে কোনো দৈনিক পত্রিকা আসছে না। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ পত্রিকার বিল পরিশোধ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পত্রিকাপাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাঠকরা।
স্থানীয় এমপি ফাহ্মী গোলন্দাজ বাবেল বলেন, ‘শহীদ ভাষাসৈনিক আবদুল জব্বার আমাদের গফরগাঁওবাসীর গর্বের ধন। জস্থান গফরগাঁওয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারিভাবে বড় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা যায় কিনা, সে বিষয়ে আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।’
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন (বাদল) জানান, ‘ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে এত উন্নতমানের পাঠাগার আমি দেখিনি। তবে এখানে বিভিন্ন ধরনের আরো উন্নত মানের বই থাকায় প্রয়োজন।’
গফরগাঁও পোস্ট মাস্টার এবিএম ফজলুল বারী বলেন, ‘বহুদিন পরে হলেও জব্বারের বাড়িতে সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে পাঠাগার করেছে, এর জন্য আমরা গর্বিত।
উপজেলা আ.লীগের সদস্য মাসুদ হোসেন সোহেল বলেন, ভাষাসৈনিক শহীদ আবদুল জব্বারের নিজ ইউনিয়নে সরকারিভাবে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কাজ করা দরকার। জব্বারের জš§স্থান গফরগাঁওয়ে সরকারিভাবে পাঠাগার ছাড়া তেমন কিছু করা হয়নি।
গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব উর রহমান জানান, মহান একুশে ফেব্রুয়ারির মূল অনুষ্ঠান হবে শহীদ আবদুল জব্বারের গ্রামের বাড়িতে। এখানে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সকালে প্রভাত ফেরী, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কতিক অনুষ্ঠান। মহান একুশে ফেবুয়ারি উপলক্ষে আবদুল জব্বারের পাঠাগারে রংসহ ধোয়া মোছার কাজ চলছে পুরো দমে। গত ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা গেছে অনুষ্ঠানে মুল প্যান্ডেলের কাজ চলছে। আবদুল জব্বারের গ্রামের বাড়িতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন এমপি ফাহ্মী গোলন্দাজ বাবেল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন