শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

প্রেরণার বাতিঘর : ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর

শাহেদ নুর | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ৫:৫২ পিএম

পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা আমরা পেয়েছি মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার। এই অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রণী সৈনিকদের একজন হচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল গফুর। শুধু ভাষা আন্দোলনই নয়, পাকিস্তান আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনেও তাঁর অনন্য ভুমিকা ছিলো। স্বাধীনতার পর দেশের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি ১৯৪৭ সাল থেকে অদ্যাবধি সাংবাদিক হিসেবে লেখনীর মাধ্যমে সর্বদা দেশকে দিয়ে যাচ্ছেন সঠিক পথের দিশা।

অধ্যাপক আবদুল গফুর, তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক। ১৯২৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর ফরিদপুর (বর্তমান রাজবাড়ি) জেলার পাংশা থানার দাদপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মরহুম হাজী হাবিল উদ্দিন মুন্সী এবং মাতা মরহুমা শুকুরুন্নেসা খাতুন।

তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরুটা হয়েছিলো পিতার প্রতিষ্ঠিত গ্রামের মকতবে থেকে। ১৯৪৫ সালে ফরিদপুর মইজুদ্দিন হাই মাদ্রাসা থেকে বাংলা ও আসামের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান সরকারি কবি নজরুল কলেজ) থেকে ঢাকা বোর্ডে নবম স্থান লাভ করে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্সে ভর্তি হন।

ছাত্র জীবনে তিনি তমদ্দুন মজলিসের সক্রিয় কর্মী হিসেবে জড়িয়ে পড়েন পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে। মিছিল, মিটিং ও সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতেন। পাশাপাশি লেখনীর মাধ্যমেও তৈরি করতেন জনসচেতনতা। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অসাধারণ মেধাবী এই মানুষটি শিক্ষাজীবনে বিরতি নিতেও কুণ্ঠিতবোধ করেন নি। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন।

তাঁর কর্মজীবনেও রয়েছে অনেক বৈচিত্রতা। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে (১৯৬৩ - ১৯৭০) ও ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজে (১৯৭২-১৯৭৯) অধ্যাপনা করেছেন ১৭ বছর। স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে কাজ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর আদি পূর্বসূরী দারুল উলুম (ইসলামিক একাডেমি)-এর সুপারিন্টেন্ডেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একবছর পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামে জেলা যুব কল্যাণ অফিসার হিসেবে কাজ করে। ১৯৮০ থেকে ৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

তাঁর সাংবাদিকতার শুরুটা হয়েছিলো ১৯৪৭ সালে পাক্ষিক জিন্দেগীতে। এরপর সাপ্তাহিক সৈনিক (১৯৪৮-১৯৫৬) পত্রিকায় প্রথমে সহ-সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সালে দৈনিক মিল্লাত এবং ১৯৫৮ সালে দৈনিক নাজাত-এ সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক আজাদ-এর বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর ইংরেজি ডেইলি পিপল (১৯৭২-১৯৭৫)-এ এবং দৈনিক দেশ (১৯৭৯ - ১৯৮০)-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ফিচার সম্পাদক হিসেবে তিনি কর্মরত আছেন।

এই বিশাল কর্মময় জীবনে তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে অনেক বই লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ইসলাম, বিপ্লবী উমর, কর্মবীর সোলায়মান,Social Welfare, Social Services, কোরআনী সমাজের রূপরেখা, ইসলাম কি এ যুগে অচল, ইসলামের জীবন দৃষ্টি, রমজানের সাধনা, ইসলামের রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, শাশ্বত নবী অন্যতম। তাঁর রচিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, খোদার রাজ্য, স্বাধীনতার গল্প শোনো ও আসমান জমিনের মালিক। এ ছাড়াও তার আত্মজৈবনিক গ্রন্থ আমার কালের কথা-১ প্রকাশিত হয়েছে।

আজ অধ্যাপক আবদুল গফুরের ৯০তম জন্মদিন। একুশে পদক পাওয়া এই মানুষটি ৯০ বছর বয়সে এসেও দৈনিক ইনকিলাবের মত একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিকের ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্পৃক্ত আছেন নজরুল একাডেমি, তমদ্দুন মজলিসসহ দেশের অনেক সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে। নিরলসভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন লেখনী। তাঁর এই বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন আমাদের জন্য প্রেরণার বাতিঘর।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন