শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

মাছ সবজি ও ফলে বিষাক্ত ফরমালিন

কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কুষ্টিয়ায় মাছ সবজি ও ফলসহ বিভিন্ন খাদ্যে বিষাক্ত ফরমালিন দেওয়া হচ্ছে। এতে বাড়ছে জটিল রোগ ব্যাধি। হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে জনস্বাস্থ্য।
জানা যায়, কুষ্টিয়ায় ফরমালিন ব্যবসার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। শহরের পৌর বাজার সংলগ্ন বিভিন্ন বাজারসহ বেশ কিছু দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ফরমালিন। ইচ্ছে করলে যে কেউ যে কোনো পরিমাণে এই রাসায়নিক দ্রব্যটি কিনতে পারেন, ব্যবহারও করতে পারেন ইচ্ছে মত। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়িক ফায়দা লুটছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বাজারে মাছ, খাদ্যপণ্য ‘সংরক্ষণ’ করতে নির্বিচারে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছেন এ রাসায়নিকের। ফরমালিনের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। সবজি, মাছ, দুধসহ এমনকি বিভিন্ন ফলের পচন ঠেকাতে জনস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর এ রাসায়নিকের ব্যবহার আশংকাজনকহারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফরমালিন কিভাবে মানুষের পেটে যাচ্ছে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে এ রাসায়নিক পদার্থ স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য ভয়ঙ্কর।

কুষ্টিয়া শহরসহ জেলার ৬টি উপজেলার বাজারে ফরমালিন ব্যবহার করে মাছ সংরক্ষণের অভিযোগ বেশ পুরোনো। ফরমালিনে ডুবিয়ে রাখলে মাছ, পোকামাকড় কিংবা প্রাণীদেহের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বছরের পর বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় থাকে। ফরমালিনের এই বৈশিষ্ট্যই অসাধু ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ করেছে।

কুষ্টিয়ায় ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমান আদালত শহরের বাজারগুলোতে বিভিন্ন পণ্যে ভেজালের দায়ে অনেক ব্যবসায়ীকে শাস্তিও দিয়েছে কিন্তু ফরমালিন ব্যবহারের জন্য কাউকে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হয়নি। ফলে ঠেকানো যাচ্ছে না অসাধু ব্যবসায়ীদের এ অপকর্ম। ফরমালিন কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণের দাবি দীর্ঘদিনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফরমালিন কেনাবেচায় লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা করা হলে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বাংলাদেশে ব্যবহূত ফরমালিনের পুরোটাই বৈধ পথে আমদানির মাধ্যমে আসে। সে কারণে তদারকির ব্যবস্থা নেয়া হলে এ ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা মোটেও কঠিন হবে না। ফরমালিনের অপব্যবহার রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এর সহজলভ্যতা দূর করা। গণহারে বিক্রি বন্ধ করা না গেলে ফরমালিনের অপব্যবহার হবেই।

বিশুদ্ধ খাদ্য (সংশোধন) আইন, ২০০৫ অনুযায়ী খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহারের জন্য গুরুতর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ফরমালিন মেশানোর জন্য সর্বোচ্চ ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে ওই আইনে। দ্বিতীয় দফায় একই অপরাধ করলে শাস্তির পরিমাণ অনেক বেশি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া শহরের পৌর বাজার এলাকার বরফকল, আড়ত, ঔষুধের দোকানসহ বিভিন্ন দোকানগুলোতে তরল বা গুঁড়ো ফরমালিন বিক্রি হয়। এছাড়াও তারা আরো জানায়, দীর্ঘদিন মাছ পচনের হাত থেকে রক্ষার জন্য বড় বড় মাছে ফরমালিন মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। ফলমূলে ফরমালিন মিশিয়ে দীর্ঘদিন রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো বাইরে ভালো দেখা গেলেও ভেতরে পঁচে যায় বলে ক্রেতাদের অভিযোগ।

চিকিৎসকরা জানায়, ফরমালিন মেশানো খাবার দীর্ঘদিন খেলে ফুসফুস, যকৃত (লিভার), বৃক্ক (কিডনি) আক্রান্ত হতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে ডায়রিয়াও হতে পারে। যকৃত মানবদেহের অপ্রয়োজনীয় আমিষ, পদার্থ ও শর্করা দূর করে। কিন্তু যকৃত ফরমালিনযুক্ত কোনো কিছু দূর করতে পারে না। ফলে যকৃতে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাবে লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। কিডনির কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে ফরমালিন । বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশু, ছোট বাচ্চা, হাঁপানি রোগী এবং অ্যালার্জির রোগীদের জন্য ফরমালিন বিপজ্জনক হতে পারে। আগুনের তাপে ফরমালিনের কার্যকারিতা কিছুটা নষ্ট হয়। এরপরও যেটুকু থাকে, তাও শরীরের ক্ষতি করার জন্য যথেষ্ট বলে জানান চিকিৎসাবিদরা।

খাদ্যে মেশানোর সময় ফরমালিনের ঝাঁজালো গন্ধে ফুসফুসের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হাঁপানিও হতে পারে ফরমালিনের প্রভাবে। আরও হতে পারে ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকট্রিভ পালমোনারি ডিজিজ’ (সিওপিডি)। এ ছাড়া ফরমালিনের ঝাঁজে চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, দ্রুত ছানি পড়তে পারে চোখে।
জনস্বাস্থের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে ফরমালিন ব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত। খাদ্যদ্রব্য ফলমূল ও সবজীতে ফরমালিন বন্ধে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করলে কুষ্টিয়া থেকে ফরমালিনের ব্যবহার কমবে বলে জেলার সুশীল সমাজ মন্তব্য করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন