নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে বিএনপি ও আ’লীগ গোপনে একক প্রার্থী ঘোষণা করলেও উভয় দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তারা লড়ছেন। তবে অধিকাংশ ইউনিয়নের একাধিক আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সেসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা পড়েছেন দারুণ বিপাকে। এসব ইউনিয়নে স্বতন্ত্র অথবা বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপজেলায় প্রতীক বরাদ্দের আগেই ধানের শীষ, নৌকাসহ যাদের প্রতীক আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল সেসব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা অনেক আগেই প্রেসে পোস্টার ও ডিজিটাল ব্যানার ছাপিয়ে নিয়ে প্রতীক বরাদ্দের দিন বিকেল থেকে নিজ নিজ ইউনিয়নের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দড়িতে করে ঝুলাতে দেখা যায় এবং মাইকে প্রচার করতে শুরু করেন। এছাড়া অনেক নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের অনেক আগে থেকেই মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন দোকানে নির্বাচনী ছোট ছোট ব্যানার, প্রতীক সম্বলিত লেমিনেটিং কার্ড বিতরণ করতে দেখা গেছে। প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। ফলে প্রতীক বরাদ্দের প্রথম দিন থেকেই নির্বাচনী মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পোষ্টার, ডিজিটাল ব্যানার, হ্যান্ডবিল, লেমিনেটিং কার্ড নিয়ে ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে প্রচার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের লোকজন। নির্বাচনে ভোটারের মন জয় করতে নানা উপায়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। চলছে নানা রকমের নির্বাচনী চুলছেরা বিশ্লেষণ। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে নানা উৎকণ্ঠা ও চরম সংশয় বিরাজ করছে। অনেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে গত ১৩ মে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৭ জন রিটার্নিং কর্মকর্তারগণ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চৌদ্দ জন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে চৌদ্দ জন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কাস্তে প্রতীকে দুই জন এবং জামায়াতে ইসলামী চশমা প্রতীক ৯ জনসহ স্বতন্ত্র ৫৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের ৪২ ওর্য়াডে সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৭৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং ১২৬ ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ৫৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী ২৮ মে এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন ১নং ভারশোঁ ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোজাম্মেল হক ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সুমন নৌকা, কমিউনিস্ট মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবহান প্রামানিক কাস্তে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আ’লীগ বিদ্রোহী বর্তমান চেয়ারম্যান শারিকুল ইসলাম ঘোড়া, শহিদুল ইসলাম খোন্দকার রজনীগন্ধা, আবদুল মান্নান আনারস। ২নং ভালাইন ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আক্কাস আলী জুয়েল ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইব্রাহীম আলী মন্ডল নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হামিদ চশমা, আবদুল জলিল শেখ আনারস, বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মোটরসাইকেল ও শফি উদ্দিন প্রামাণিক ঘোড়া। ৩নং পরানপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোঃ মোস্তফা সরদার ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান নৌকা, জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রাথী ইলিয়াস খান চশমা, বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মোল্লা আনারস,কাউছার আলী মোটরসাইকেল ও কামরুজ্জামান সরদার ঘোড়া। ৪নং মান্দা সদর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুর রব পিন্টু মন্ডল ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল তোফা নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন চশমা, মাজেদুর রহমান মিঠু ঘোড়া, রেজাউর রহমান ইকবাল আনারস ও বর্তমান চেয়ারম্যান এজাজ আহম্মেদ হিন্দোল মোটরসাইকেল। ৫নং গনেশপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হানিফ উদ্দিন মন্ডল নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে খলিলুর রহমান প্রামাণিক আনারস ও মকলেছুর রহমান ঘোড়া। ৬নং মৈনম ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আফাজ উদ্দিন খান নৌকা, কমিউনিস্ট মনোনীত প্রার্থী সেকেন্দার আলী কাস্তে , স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আ’লীগ বিদ্রোহী সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী মন্ডল (রাজা) আনারস, আনিছুর রহমান মোটর সাইকেল, ফারুক হোসেন রজনীগন্ধা ও মীর মোঃ সুজন আলী ঘোড়া। ৭নং প্রসাদপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আবদুল মতিন মন্ডল ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়েজ উদ্দিন সরদার নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন চশমা, বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন খান আনারস, আ’লীগ বিদ্রোহী উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম মোল্যা মোটরসাইকেল ও যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর বক্স মন্ডল ঘোড়া। ৮নং কুশুম্বা ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক চশমা, মকবুল হোসেন আনারস, আ’লীগ বিদ্রোহী উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন মন্ডল মোটরসাইকেল ও মামুনুর রশিদ ঘোড়া। ৯নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম নাজমুল হক নাজু ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্রজেন্দ্র নাথ সাহা নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মখলেছুর রহমান (কামরুল) চশমা, বিএনপি বিদ্রোহী ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আখেরুজ্জামান মোল্লা সেলিম আনারস ও সাবেক উপজেলা আ’লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান মোটরসাইকেল। ১০নং নুরুল্যাবাদ ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম রফিকুল ইসলাম সরদার ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুর মোহাম্মদ মন্ডল নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াছিন আলী প্রামানিক চশমা, আবদুল খালেক টেলিফোন, মকবুল হোসেন মোটরসাইকেল, জায়দুর রহমান মন্ডল ঘোড়া ও মোহাম্মদ আকবর হোসেন আনারস। ১১নং কালিকাপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আজিজুল হক মন্ডল ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল আলিম মন্ডল নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক (অবঃ) নাজিম উদ্দিন মন্ডল চশমা, মহশীন আলী আহম্মেদ আনারস, বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মন্ডল বাবু মোটর সাইকেল ও আ’লীগ নেতা রেজাউন নবী মন্ডল চঞ্চল ঘোড়া। ১২নং কাঁশোপাড়া ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাইদুর রহমান মোল্লা ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইয়াদ আলী মন্ডল নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আ’লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মোটরসাইকেল, জামায়াত মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফেজ আবুল কালাম আজাদ চশমা, মোজাম্মেল হক প্রামাণিক আনারস ও জনাব আলী ঘোড়া। ১৩নং কশব ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আজিমুদ্দিন সরদার ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তছির উদ্দিন সরদার নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আ’লীগ বিদ্রোহী সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মন্ডল ঘোড়া, বর্তমান চেয়ারম্যান খয়বর আলী প্রামাণিক খয়ের দুটি পাতা, সোলায়মান আলী মন্ডল চশমা, আনিছুর রহমান প্রামাণিক আনারস ও আবদুল্লা আল মাসুদ মোটরসাইকেল এবং ১৪নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান কাজেম উদ্দিন প্রামাণিক ধানের শীষ, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে আলাউদ্দিন মাঝি আনারস, মকলেছুর রহমান মোটর সাইকেল, এস এম মমতাজুল ইসলাম সরদার ঘোড়া এবং মোকলেছুর রহমান মন্ডল চশমা। এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনে সদস্য পদে পেয়েছেন কলম, ক্যামেরা, তালগাছ, বক, মাইক, হেলিকাপ্টর ও বই। সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পেয়েছেন আপেল, ক্রিকেট ব্যাট, ঘুড়ি, নলকূপ, ফুটবল, ফ্যান, ভ্যানগাড়ি, ফুলের টব, লাটিম ও তালা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন