নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ দাখিল মাদরাসা বিলীনের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসি। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও শিক্ষকদের চাকুরী হারানোর ভয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ মাদরাসাটি রক্ষায় ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে।
কারন হিসেবে জানা যায় পূর্বাচল নতুন শহর ৪নং সেক্টর এলাকার পার্শ্ববর্তি পিতলগঞ্জ মৌজায় মেট্টোরেল প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এ জমি অধিগ্রহণের আওতায় রয়েছে পিতলগঞ্জ গ্রামের জনবসতিপূর্ণ বিভিন্ন ঘর বাড়ি, মসজিদ ও মাদরাসা। স্থানীয়দের দাবী মেট্টোরেল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রকল্পের নকশায় জনবসতি,রাস্তা ঘাট, ধর্মীয় , সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় পরিবর্তন করলে বেচে যাবে হাজারো মানুষের নিরাপদ আবাস। একইসাথে পিতলগঞ্জ দাখিল মাদরাসার সাড়ে সাতশো শিক্ষার্থীর ধর্মীয় শিক্ষা ও ২০জন শিক্ষকের কর্মজীবন রক্ষা পাবে। রক্ষা পাবে মাদরাসাটিতে সরকারী অনুদানে করা বহুতল ভবন, গ্রামের ৪টি কবরস্থান ও মসজিদ। সূত্র জানায়, মাদরাসার নামে ৭৬ শতক জমি ওয়াকফ দেয়া হয়েছে। এতে ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে ১৯৮৫ইং সাল থেকে। স্থানীয় বাসিন্দা তাহছিনা নিশাত বলেন, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পাধীন মেগা প্রকল্পের আওতায় মেট্টোরেল স্টেশনটি বিলের মাঝপথ দিয়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হলেও অৎানা কারণে বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দিয়ে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। যা স্থানীয় লোকজনের অপূরনীয় ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াবে। তাই অবিলম্বে নকশা পরির্তনের দাবী করেন তিনি।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাইদুর রহমান বলেন, মাদরাসার পাশ দিয়ে একটি রাস্তা ডেমরা কালীগঞ্জ সড়ক থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাট পর্যন্ত রয়েছে। মেট্টোরেল কর্তৃপক্ষ তাদের নকশা পরিবর্তন করে ওই রাস্তার উত্তর পাশে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে বেচে যাবে গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি ঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
পিতলগঞ্জ দাখিল মাদরাসা সুপারিন্টেন্ডেন মোঃ সালাহউদ্দিন বলেন, মাদরাসাটি বিলীন হলে একদিকে এখানে পাঠদানরত শিক্ষার্থীরা যেমন পড়বে বিপাকে তেমনি শিক্ষকরা হারাবে তাদের চাকুরী। এতে চরম ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই বিভিন্ন দপ্তরে আপত্তি জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক ভুঞা বলেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা অধিদপ্তরের পিতলগঞ্জ মাদরাসার আপত্তির জবাবে তাদের দাবী যৌক্তিক বিবেচনায় একটি প্রতিবেদন দিয়েছি। এ প্রতিষ্ঠান রক্ষায় মেট্টোরেল ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে মেট্টোরেল পূর্বাঞ্চলীয় শাখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম.এন.এ সিদ্দীকি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আপত্তি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন মহলে আলোচনা চলছে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপারা ইউনিয়নের চনপাড়া পূণবার্সন কেন্দ্রের ১নং মহল্লায় থাকেন জীবন নেছা। বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র (৬৭১৬৮৫৫৮২৭৬৪২) সূত্রে ৭৮ বছর। স্বামী হারিয়েছেন ১৫ বছর আগে। এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার তার। অভাব আর হাহাকারে দিনকাটানো জীবন নেছা নামেই যেন জীবন বাঁচিয়ে রেখেছেন। বিধি মোতাবেক বিধবা ভাতা পাবার কথা ছিলো। কিন্তু রাজনীতি বুঝেন না কিংবা রাজনীতি ওয়ার্ড জনপ্রতিনিধিকে খুশি করার সামর্থ নেই। তাই ভাগ্যে জুটেনি বিধবা ভাতা। এতোদিন কোনমতে জীবন পার করলেও স্বামী আব্দুল করিম মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে হাল ধরার কথা। কিন্তু মানষিক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি সেই একমাত্র ছেলেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে তা জানা নেই দীর্ঘ ৮ বছর । তাই মানুষের বাড়িতে কাজের বিনিময় দুমুঠো আহার খেয়ে কোনমতে জীবন পার করছেন নামধারী জীবন নেছা। এতোদিন বয়স ৭৮ ছুঁইয়েছে। বয়সভারে আগের মতো কাজ কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ হয়ে পড়েছে কষ্টসাধ্য।
বিধি মোতাবেক পুরুষদের ৬৫ আর নারীদের ৬২ বছর বয়স হলে বয়স্ক ভাতা পাবার কথা। রূপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৫ হাজারের অধিক নারী ও পুরুষ পাচ্ছেন সেসব বয়স্কভাতা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মদদপুষ্ট, সমর্থক ও আতœীয় স্বজন না হলে দেয়া হয় না বয়স্কভাতার কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। উপজেলা প্রশাসনের লোকজনও তা সঠিকভাবে তদারিক না করায় প্রকৃত গরীব ও অসহহায়রা বঞ্চিত থাকেন সরকারের এ সেবা থেকে। ভেস্তে যায় সোনার বাংলা স্বপ্ন দেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন। তবে জীবন নেছাও ধর্ণা দিয়েছিলেন স্থানীয় মহিলালীগ নেত্রী মনোয়ারা মনুর কাছে। তার দাবীকৃত ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় বয়স্কভাতার কার্ড এনে দিতে পারেনি। স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার কুট্টির কাছেও বয়স্কভাতা চাইতে গিয়েছিলেন একাধিকবার। সেখানেও কোন সুরাহা পাননি জীবন নেছা। স্থানীয়দের প্রশ্ন সরকারের সুবিধাভোগী যারা হওয়ার কথা তারা কেন বঞ্চিত হচ্ছে ? অভিযুক্ত বিউটি আক্তার কুট্টি জানান, জীবন নেছা আমার কাছে সরাসরি আসে নাই তাই বিষয়টা জানতাম না।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোলাইমান হাসানের সঙ্গে তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সভাপতি ও ইউপি সদস্যদের বাছাই কমিটির সদস্য করা হয়। তাদের বাছাইকৃত তালিকার পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বয়স্কভাতার কার্ড দেয়া হয়। কিন্তু চনপাড়ার জীবন নেছাকে কোন তালিকায় রাখা হয়নি। তাই সে কার্ড পায়নি। তবে এখন ভেবে দেখবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, জীবন নেছার মতো আরো যারা প্রকৃত হতদরিদ্ররা কার্ড পাচ্ছেন না তাদের শীঘ্রই সুবিধা ভোগের আওতায় আনা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন