শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

লালপুরে কৃষিক্ষেতে গরুর লাঙ্গল

লালপুর (নাটোর) থেকে মো. আশিকুর রহমান টুটুল | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম


‘চাষী খেতে চলাইছে হাল, তাঁতি বসে তাঁত বোনে, জেলে ফেলে জাল, বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার, তারি পরে ভর দিয়ে চলিতেছে সমস্ত সংসার’ বিশ্ব কবির এই অমর পঙক্তিটি বাঙালির জীবনে আবার ফিরে এসেছে।
উত্তরাঞ্চলের পদ্মানদী বিধৌত নাটোরের লালপুরে আদ্যিকাল থেকে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো হাল, লাঙ্গল ও মই। এই অঞ্চলের বাংলা গৃহবধুরা লালপেড়ে শাড়ি পরে কোমরে খাবারের গামলা আর হাতে পানির ঘটি নিয়ে সকাল হলেই মাঠের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ ধরে খাবার নিয়ে যেত কৃষকের নিকট। কৃষকরা কাক ডাকা ভোর থেকে মাঠের প্রান্তরে হালচাষ করতো, কেউবা জমিতে বীজ বপন করতো। জমির চাষের ক্ষেত্রে গরুর হাল ও মই ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ থাকতো। এসবই বইয়ের পুথিগাথা গল্পের মতো শোনায়।
কালের আবর্তে আধুনিকতার যুগে যান্ত্রিকতা নির্ভর যন্ত্রদিয়ে জমি চাষের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে দিন-দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বংলার ঐতিহ্যের ধারক গরুর লাঙ্গল। তবে এ যুগেও লালপুর উপজেলা জুড়ে ফুরায়নি গরুর লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিলুপ্তপ্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর লাঙ্গল দিয়ে একজন কৃষক জমি চাষ করছে। তার নাম হাবিল আলী। তিনি ইনকিলাব কে বলেন, ‘হাল চাষের জন্য এক জোড়া বলদ গরু, লাঙ্গল-জোয়াল, মই, ছড়ি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখের টোনা (মুকির) লাগে। পাওয়ারট্রিলারে আগমনে গরু দিয়ে হালচাষ হয়না বললেই চলে। গ্রামীণ সমাজের অনেকেই গরু পালন ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকেই বাব-দাদার সেই পুরনো স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে সময় পার করছে’।

তিনি আরো বলেন, ‘বলদ দিয়ে প্রতিদিন তিন-চার বিঘা জমি চাষ করা যায়। গরুর লাঙ্গল দিয়ে মাটির গভীরে গিয়ে মাটি তুলে উল্টিয়ে রাখে। উপরের মাটি নিচে পড়তো আর নিচের মাটি উপরে। এতে জমিতে ঘাস কম হতো, আর হাল চাষের সময় গরুর বিষ্টা সেই জমিতেই পড়তো এতে একদিকে যেমন জমিতে জৈব সারের চাহিদা পূরণ হতো তেমনি ফসলও ভালো হতো। পাওয়ারটিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হাল চাষের কদর কমে গেছে। কম সময়ে বেশি জমিতে চাষে সক্ষম হওয়ায় জমির মালিকরা পাওয়ারট্রিলার দিয়ে জমি চাষ করছে। যে কৃষকরা গরু দিয়ে হাল চাষ করে জীবীকা নির্বাহ করতো কালক্রমে তারা পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

জানাগেছে, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এই দেশের প্রায় ৮০% লোকের জীবিকা কৃষি কাজের উপর নির্ভর। তবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাঙ্গল-জোয়াল, ফাল, দা, কাস্তে, খুনতি, মই, গরু ও মহিষ এখনো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে হালের গরুও লাঙ্গল অন্যতম।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন