সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ৩৭টি হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বোরো ফসলরক্ষায় বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু‘মাস পেরিয়ে গেলেও কোন প্রকল্পের কাজ এখনও শেষে হয় নি। এসব প্রকল্প এলাকার কৃষকরা বোরোধান গোলায় তোলা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন। জেলায় সামগ্রিকভাবে ৪০ ভাগ কাজও হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসার (এসও) শাখা কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বাঁধের কাজ সময় মতো শুরু করেনি পিআইসি। কৃষকদের অভিযোগে পিআইসি নদীতে পানি আসার অপেক্ষা করে। নদীতে পানির তোড়জোর না থাকলে তারা কাজ শুরু করে দেরীতে। এর কারণ নামমাত্র কাজ করে সমুদয় বিল তোলে নেওয়ার মতলব আটতে থাকে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন ও ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। এ নির্দেশনার বিপরীতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলার ৫৬৫টি পিআইসির ১০ ভাগ পিআইসি হাওরের ফসলরক্ষা বাধের কাজ শুরুই করেনি। কাজ শুরু না করেও প্রকল্প এলাকায় কাজের বিবরণ দিয়ে অগ্রিম কাজ শুরু করার তারিখ লিখে রাখা হয়েছে সাইবোর্ডে। এছাড়াও দিরাই উপজেলার চরনাচর ইউনিয়নের ২৪, ৩৭, ৫০, ৫১ ও ৫৩ নম্বর পিআইসিসহ জেলার বিভিন্ন প্রকল্পে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ায় ও কৃষকরা এ বরাদ্দকে হাওর লুটপাঠের মহোসৎব বলে অখ্যা দিয়েছেন। তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের ৪৯ নম্বর পিআইসির সভাপতি শাহ আলম, একই হাওরের ৫৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি মতিউর রহমান ও ৬০ নম্বর পিআইসির সভাপতি আবুল কালাম স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজ না করে বিল উত্তোলনের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে। সরেজমিনে মটিয়ান হাওরে গিয়ে এসব চিত্র দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জোয়াল ভাঙ্গার হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বোরো ফসলরক্ষায় বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুমাস পেরিয়ে গেলেও ১০ ভাগ প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয় নি। এসব প্রকল্প এলাকার কৃষকরা বোরোধান গোলায় তোলা নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন। এ বছর সদর উপজেলার এ হাওরটিতে আড়াই সহ¯্রাধিক জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। কিন্তু প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি(পিআইসি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসার (এসও) শাখা কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে বাঁধের কাজ সময় মতো শুরু করেনি পিআইসি। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২৪ জানুয়ারি এ হাওরের ১৭ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় ১৫৪ টি হাওরে বোরো ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৭ টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করে। চলতি মওসুমে এ জেলায় ২ লাখ ১৫ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে ।
জেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর পওর শাখা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া জেলার ৩৭টি হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে দাবি করে জানান, এবার ৫৬৫টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৯৭ কোটি টাকা। এর দুই কিস্তিতে ৪৬ কোটি টাকা পিআইসিদের দেয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতি দেখে টাকা পিআইসি অনুকুলো ছাড় দেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন