কুমিল্লা উত্তর সংবাদদাতা
আগামী ২৮ মে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রাধানগর, চালিভাংগা ও চন্দনপুর ইউনিয়নের সর্বত্র নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে মূলত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও আ’লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াই হবে। বিএনপি দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের প্রচারণায় তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। তারা নীরবে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে কয়েকজন প্রার্থী দাবি করেছেন। তবে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে প্রচারণায় দেখা গেছে। এখানে আ.লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের পদচারণায় প্রত্যন্ত জনপদ সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রার্থীরা নাওয়াÑখাওয়া ভুলে গভীর রাত পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে, বাড়ি বাড়ি উঠান বৈঠক করছেন। আর দিনে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচারÑপ্রচারণা চালাচ্ছেন, সভাÑসমাবেশ করছেন। তারা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা না পেলেও বিদ্রোহীদের পালে হাওয়া বইছে বেশ জোরেশোরে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলে যোগ্য, ত্যাগী, পোড়খাওয়া ও জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অযোগ্য, জনবিচ্ছিন্ন ও এলাকায় সামান্যতম গ্রহণযোগ্যতা নেই তাদের হাতে নৌকা তুলে দেয়ায় নৌকা ডুবুডুবু অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখানে আসন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় নেতাকর্মী ও আওয়ামী ঘরানার সর্বস্তরের লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। এদিকে নৌকা মার্কার কর্মীরা কেন্দ্র দখলের আগাম হুঙ্কার-হুঁশিয়ারি দিচ্ছে বলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। ফলে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন হবে কিনা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোটাররা। ভোটাররা ও স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে এখানে বিদ্রোহীরা জয়ী হবেন বলে এসব আগাম হুঙ্কার এলাকায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। রাধানগর : এখানে প্রার্থী চারজন আবদুল বাতেন (নৌকা), মজিবুর রহমান বিদ্রোহী স্বতন্ত্র (আনারস), সিরাজুল ইসলাম (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম (চশমা)। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নৌকার টিকিট নেয়ার অভিযোগ ওঠায় দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণ ভোটাররা বিদ্রোহী প্রার্থী বিশিষ্ট সমাজসেবী মেঘনা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মজিবুর রহমানের (আনারস) পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। তারা আনারস মার্কাকে বিজয়ী করতে চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের প্রার্থী মজিবুর রহমান বিজয়ী হবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে আনারস মার্কা প্রচারণায় ও ভোটে এগিয়ে আছেন। চালিভাংগা : এখানে লড়াই হবে আবদুল লতিফ (নৌকা), বর্তমান চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র (আনরস) ও অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামানের (ধানের শীষ) মধ্যে। এখানেও বিপুল পরিমাণের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নৌকার টিকিট কেনা হয়েছে। ফলে নৌকা মার্কার প্রার্থীর প্রতি দলীয় নেতাকর্মীরা যেমন ক্ষুব্ধ হয়েছে, তেমনি আওয়ামী ঘরানার ভোটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির এলাকার একজন জনপ্রিয় ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেতা। তিনি একজন সফল চেয়ারম্যান। তিনি এই ইউনিয়নে গত ৫ বছরে যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছেন। যার কারণে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ এখানকার সর্বস্তরের মানুষ হুমায়ুন কবিরের (আনারস) পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। আনারস মার্কার পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী হুমায়ুন কবির (আনারস) প্রচারণায় ও ভোটে অনেক দূর এগিয়ে আছেন। যুবলীগ নেতা ও সমাজসেবী কাইয়ুম বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হলে আমাদের জনপ্রিয় নেতা হুমায়ুন ভাই বিজয়ী হবেন ইনশা আল্লাহ। চন্দনপুর : এখানে তিনজন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে মূলত নৌকা ও আনারসের মধ্যে। তারা হলেনÑ আহসানউল্লা মাস্টার (নৌকা) ও মিলন সরকার বিদ্রোহী স্বতন্ত্র (আনারস)। আর বিএনপি প্রার্থী মোঃ সেলিম সরকার (ধানের শীষ) প্রচার-প্রচারণা থেকে নীরব হয়ে আছেন। ফলে তার সমর্থিত বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস মার্কার পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। এদিকে এখানকার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধেও মোটা অংকের টাকা দিয়ে দলীয় মনোনয়ন কেনার অভিযোগ উঠেছে। ফলে নৌকা মার্কার প্রার্থীর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী বিশিষ্ট সমাজসেবী মিলন সরকারের (আনারস) পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এই দুই কারণে মিলন সরকার (আনারস) প্রচারণায় ও ভোটে এগিয়ে আছেন। এলাকার মানুষের কাছে মিলন সরকারের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি একজন জনপ্রিয় নেতা। ব্যক্তি উদ্যোগে মিলন সরকার চন্দনপুর ইউনিয়নে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য তিনি এ অঞ্চলে বহু রাস্তা নির্মাণ করেছেন। সামাজিক কর্মকা-ে খুশি হয়ে এলাকাবাসী মিলন সরকারকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে উৎসাহিত করেছেন। তার সমর্থকরা আশা করছেন সুষ্ঠু ভোট হলে আনারস মার্কার বিজয় নিশ্চিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন