শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায় তাদের চেহারা

দিনে শ্রমজীবী রাতে ছিনতাইকারী

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে : | প্রকাশের সময় : ৮ মার্চ, ২০১৯, ১২:৩৮ এএম

পেশায় ওরা কেউ সিএনজি অটোরিকশা চালক, কেউ পোশাক শ্রমিক, কেউ আবার দিনমজুর। দিনে যে যার কাজ করে, অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায় তাদের চেহারা। দিনের শ্রমজীবী মানুষগুলো রাতে হয়ে যায় ছিনতাইকারী। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তৎপর তারা। পুলিশের নিয়মিত অভিযানে ধরাও পড়ছে এদের অনেকেই। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে আবার ছিনতাইয়ে যোগ দেয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় রয়েছে ছিনতাইকারী। কিন্তু এই চক্রগুলোর মূলহোতারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। অভিনব ও নিত্য নতুন কায়দায় একের পর এক ছিনতাই করে যাচ্ছে তারা। ছিনতাইকারীরা ব্যবহার করছে আধুনিক ক্ষুদ্রাস্ত্র। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার মাধাইয়া এলাকায় ছিনতাইকারীর হাতে পুলিশের এক এসআইকে ছুরিকাঘাত করে তার সাথে থাকা একটি হাতব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের শুধু কুমিল্লা অংশে এই রকম ছিনতাই ঘটনা গড়ে প্রতি বছরই প্রায় শতাধিক মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি চুরি বা ছিনতাই হচ্ছে। আর এসব গাড়ির পাঁচ ভাগও উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। সম্প্রতি কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৮টি মোটরসাইকেলসহ আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় চুরি করার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, আলেখারচর, চান্দিনা, মাধাইয়া ও দাউদকান্দিতে গাড়ি চুরি ও ছিনতাইয়ের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছরই এসব উল্লেখিত স্থান ছাড়াও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে গড়ে শতাধিক মোটর সাইকেল, গাড়ি চুরি ও ছিনতাই হয়। পুলিশি তদন্তে দেখা গেছে, চুরি কিংবা ছিনতাই হওয়া অধিকাংশ গাড়িরই আসল চেহারা পাল্টে ফেলা হয়। যে কারণে সিংহভাগ গাড়ি আর উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কুমিল্লা থেকে যেসব গাড়ি চুরি হয়েছে তার বেশিরভাগই কুমিল্লার বাইরের জেলাগুলোতে বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে। বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, খুলনাসহ কয়েকটি স্থানে চোরাই গাড়ি বেচাকেনার হার সবচেয়ে বেশি।

পুলিশি তদন্তে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চুরির সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধচক্র জড়িত। দেশজুড়ে এদের রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কে সক্রিয় রয়েছে দুই শতাধিক দুর্বৃত্ত। এদের নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকজন গডফাদার। গাড়ি চুরি কিংবা ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করে। গাড়ি চুরি ও বিক্রির সার্বিক প্রক্রিয়ায় দুর্বৃত্তদের তিনটি গ্রুপ সক্রিয় থাকে। দ্বিতীয় গ্রুপটি ইঞ্জিন চেসিস টেম্পারিং ও রঙ পরিবর্তন করে বেচাকেনা করে। তৃতীয় গ্রুপটি হচ্ছে গডফাদার। এরা গাড়ি ও অপারেশনে নামার আগে পছন্দের গাড়িটি টার্গেট করে। পরে সুযোগ বুঝে চালককে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। কোনো কোনো সময় চালককে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে কিংবা নিরিবিলি সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ছিনতাই করে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্রের অন্যতম হোতা জেলার বুড়িচং উপজেলা সদরের শাহ আলম মেম্বারের ছেলে মো. সুজনকে (২৫) চুরির সরঞ্জামাদিসহ নগরীর ঝাউতলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে পুলিশের দুটি টিম নগরী ও নগরীর বাইরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য জেলার বুড়িচং উপজেলার শমেসপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে মো. জনি, রামপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. সবুজ, পরিহলপাড়া গ্রামের আব্দুর রবের ছেলে রায়হান ভূঁইয়া ইমন, বাড়িকোঠা গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে মো. জসিম, সিন্দুরিয়াপাড়া গ্রামের অলি উল্লাহর ছেলে মো. ইমরান, চান্দিনা উপজেলার মহারং গ্রামের আব্দুর রবের ছেলে মো. সোহেলকে গ্রেফতার করে। কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, আন্তঃজেলা চক্রের হোতা সুজনের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল চুরি ও ছিনতাইসহ আদালতে ৭টি মামলা বিচারাধীন আছে। চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন