গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইলিশকোল গ্রামের যুবক সাইদের আম বাগান গত বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এবার তার আম বাগানে ফলন অধিক পরিমাণে এসেছে। চলছে পুরোদমে পরিচর্যার কাজ। ফলে এবার সে বিগত বছরের লোকশান কাটিয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন। বালিকান্দির বহরপুর ইউনিয়নের ইলিশকোল গ্রামের মৃত বাহাদুর আলী খানের ছেলে মো. সাইদুল ইসলাম খান সাইদ। ছোটকাল থেকেই গাছ-গাছালি রোপণের ওপর ঝোঁক ছিলো তার। সে জন্য বাড়ির ওপর ছোট্ট পরিসরে আম, লিচু আর মেহগুনির নার্সারি করে টুকটাক চারা বিক্রি করতো। এরই ভেতরে দেশের একমাত্র এক্রোবেটিক সেন্টারে কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হলে সে এক পর্যায়ে নিজ দক্ষতার বলে সেন্টারের ক্যাপটেন হয়ে যায় এবং ভালো স্যালারি পেয়ে সুন্দর জীবনযাপন করতে থাকে। সাথে কর্মচারীদের দিয়ে চালানো নার্সারির পরিসর বৃদ্ধি করে। হঠাৎ করে সেন্টারের সদস্যদের সম্মানী দেয়া সরকার থেকেই বন্ধ হয়ে গেলে সকল সদস্য বেকার হয়ে হতাশায় পড়লেও সাইদ কিন্তু বসে থাকেনি। সে নেমে যায় তার নার্সারির কাজে। সাইদ জানায়, বেকার হবার আগে যখন রাজশাহীসহ সারা দেশে এক্রোবেটিক শো করতাম তখন বড় বড় ফলজ-বনজ বাগান দেখে সেখান থেকেই বাগান করার চিন্তা মাথায় ঢোকে। তাই বেকারত্ব ঘোচাতে মাঠে নামা। প্রথমে সে ৫০ শতাংশ জমিতে শতাধিক আম, ৮টি লিচুসহ ২/১টি করে কতবেল, জামরুল ও চারপাশে মেহগুনি আর নিমের গাছ লাগায়। পরের বছর সব আম গাছে মুকুল আসলে এগুলো ভেঙে দেয়। এর পরের বছর সামান্য আম আসলে তা আত্মীয়-স্বজন মিলে খেয়ে ফেলে। এর পরের বছর ১৮/২০ মণ আম ধরলে তা বেচে ২৫ হাজার টাকা কামাই করে আর ১২/১৩ মণ আম নিজেরা খায়। এর পরের বছর থেকে আম উৎপাদন দ্বিগুণ হয়। এর পরের বছর থেকে একে একে দেড় একর জমিতে ২০০টি আম্রপালি, হীম সাগর ইত্যাদি উচ্চ ফলনের আম গাছ পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়েছে তার বাগানে। তার পরিসংখ্যান মতে ১৩ সালে ২ লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি করে সকলে খাবার পরেও। তবে গত বছর ফলনের শেষ দিকে একটানা দশ দিনের বৃষ্টিতে অতিরিক্ত বাতি হওয়া আমগুলো ফেটে যায়। যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২শ’ মণের অধিক। সে বছর স্থানীয় কৃষি অফিস পর্যন্ত কোনো সহায়তা দিতে পারেনি। এর পরেও প্রায় ১লাখ ৩৫হাজার টাকার আম বাজারে বা বাগান থেকে বিক্রি করেছে। সাইদ জানায়, এবছর তার এলাকার উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলীর ব্যাপক সহায়তা নিয়ে সে ছত্রাকনাশক, কীটনাশক, চুন ও তুতের মিশ্রণ, শুকনা নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি স্প্রে করেছে। আবার মাছি পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে ২৫টি বয়েমে সেক্সফেরোমন ফাঁদ বানিয়ে তা গাছগুলোতে ঝুলিয়ে দিয়েছে। সাইদ আরো জানায়, এবার প্রথমে খরায় আম ঝড়ে যায় এরপর ঝড়েও অনেক আম পড়ে যায়। আমগুলো এখন রং আসতে শুরু করেছে, সেই সাথে বেড়ে চলছে মাছি পোকার তা-ব। এবারের আম গতবারের চেয়ে কম হলেও সাইজ ভালো আর দেখতে সুন্দর হয়েছে। দুর্যোগমুক্তভাবে আম পাকাতে পারলে সকলে খেয়েও ৩ লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি করতে পারবে। এদিকে বাগানটিতে সার্বক্ষণিক ১জন এবং কখনো কখনো ৫/৬জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। স্থায়ী কর্মচারী মো. হাসান মোল্লার সাথে কথা হলে সে জানায় ১২মাস বাগানে কাজ করি। আমরা বাগানের আমে কোন মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ স্প্রে করি না বলে বেশির ভাগ আম বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। সারা বছর প্রতীক্ষার পর যখন আম পাকে তখন প্রাণ ভরে মন ভরে আম খাই আর বাড়িতে নিয়ে যাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন