শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঝালকাঠিতে সেচ সঙ্কটে বোরো আবাদ

ঝালকাঠি থেকে মু. আব্দুর রশীদ | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ঝালকাঠিতে সেচ সঙ্কটে পড়েছে চলতি মৌসুমের বোরো আবাদ। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সেচ প্রকল্প ও খাল খনন কর্মসূচিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও সেচ সুবিধা পাচ্ছেনা কৃষক। প্রকল্পে দুর্নীতি, প্রকল্প সম্পন্ন না হওয়া, সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা, খালে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া এবং কৃষকদের সাথে বিএডিসি’র সমন্বয়হীনতার অভাবে প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।

জানা যায়, প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড় সিডরে প্রচুর ক্ষতি হয় দক্ষিনাঞ্চলের কৃষকদের। তাই শুকনো মৌসুমে যাতে কৃষক সেচ সুবিধা নিয়ে চাষাবাদ করতে পারে তার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, খাল খনন করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা। সেই পানি ব্যবহার করে কৃষিজমিগুলো সেচ সুবিধার আওতায় আনা। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯৭ কিলোমিটার খাল খনন করার কথা জানায় জেলা বিএডিসি অফিস। কিন্তু খাল খনন কাগজে-কলমে হলেও এর প্রকৃত সুবিধা পায়নি কৃষক।

এ ছাড়া বিএডিসি’র সেচ প্রকল্পের জন্য ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকার খরচ হলেও সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকা অধিকাংশ কৃষকের ক্ষেতে পানি পৌঁছায়নি। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
জেলার রাজাপুর উপজেলায় ২০১০-১১ অর্থ বছরে ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি সেচ প্রকল্প সম্পন্ন করে বিএডিসি। প্রতি প্রকল্পের জন্য ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এরমধ্যে ৪টি প্রকল্প কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। শুধু উপজেলা সদরের দক্ষিন চর রাজাপুর ও মানকি-সুন্দর গ্রামের ২টি প্রকল্প চালু হয়েছিল। যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএডিসি’র সেচ প্রকল্পে আওতায় জেলার চার উপজেলায় ৭২টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬ হাজার মিটার সেচ নালা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর কৃষিজমি সেচের আওতায় এসেছে। তবে চলতি বোরো মৌসুমে মাত্র সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। সেখানেও নানা সঙ্কটের কারণে বোরো আবাদের সেই লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবে না বলে মনে করেন কৃষকেরা।
রাজাপুরের দক্ষিন চররাজাপুর সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের এখানে সেচের আওতায় ৬০ একর জমি রয়েছে। পানির পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ডিজেল দিয়ে পাম্প চালাতে হয়। তাই অনেকেই বেশি খরচের জন্য জমি আবাদ করছেন না। এ ছাড়া জেলা বিএডিসি অফিস থেকে বারবার বিদ্যুৎ সংযোগসহ নানা সুবিধার নিশ্চয়তা দিয়েও তারা কথা রাখেনি। তাই বর্তমানে উপজেলার সবগুলো সেচ প্রকল্পই বন্ধ রয়েছে।’

অপরদিকে প্রকল্পের আওতায় থেকেও সেচ সুবিধা বঞ্চিত উত্তর চর রাজাপুর কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল হক হাওলাদার বলেন, ‘এখানে সেচ প্রকল্পের আওতায় ৬০০ মিটার সেচ নালা করার কথা থাকলেও ঠিকাদার ৪০০ মিটার নালা করেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করায় ঠিকাদার বাকি কাজ সম্পন্ন করেননি। তাই আমরা সেচ সুবিধা পাচ্ছি না।’
নলছিটি উপজেলার ষাটপাকিয়া ইউনিয়নের কাঠিপাড়া গ্রামের কৃষক মো. খলিলুর রহমান জানান, ‘এই এলাকায় গত বছর বিএডিসি’র সেচ নালা স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু পানির পাম্প আর আসেনি। পাম্প না আসলে এগুলো দিয়ে আমরা কি করব?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএডিসি’র সহকারি প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যেসব ব্লকে পানির পাম্প পৌঁছায়নি সেখানের চাষি ভাইদের নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে পাম্প নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব সেচ পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা চলছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, এ বছর আমাদের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর। আশাকরি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। সেচ কমিটির মাধ্যমে তালিকা করে ইতোমধ্যেই ২৬ কিলোমিটার খাল খননের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খালগুলো খনন করা হলে সব কৃষকই পূর্নাঙ্গ সেচ সুবিধা পাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন