জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা থেকে আখ চাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে। দুই দশকের ব্যবধানে এক সময়ের এই অর্থকরি ফসলটি উৎপাদন কমেছে ৯৬ শতাংশ।
কৃষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আখে ছত্রাক, ডোগা পচা ও লালচে রোগসহ নানা প্রকার সংক্রামক দেখা দিচ্ছে। যে কারণে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আখ চাষ থেকে। তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছেন, শুধু জলবায়ুজনিত কারণেই আখ চাষ কমছে না। এর আরো একটি কারণ হলো চিনিকল না থাকার পাশাপাশি ফসলটি এক বছর মেয়াদী হওয়ায় চাষিরা আগ্রহ হারাচ্ছেন আখ চাষে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দাতপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ জানান, তার গ্রামের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কৃষক দীর্ঘকাল ধরে আখ চাষ করেন। তিনিও প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে আখ চাষ করে আসছেন। কিন্ত গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে তিনি আখ চাষ আর করছেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ২০০০ সালের বন্যা ও পরবর্তী ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলার প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর থেকে আগের মতো আখের ফলন আর ভালো হচ্ছে না। ফসলি জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আখ ক্ষেতে বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। ডগা পচা, ছত্রাক ও লালচে রোগে আখের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি ফসলটির চাষ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আখের বীজ রোপনের পর এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। অথচ এ সময়ের মধ্যে আরো দু‘একটি ফসল চাষ করা যায়। যে কারণে তার গ্রামের কৃষকরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, দুই দশক আগেও এ জেলাতে আখ চাষ হতো ব্যাপক ভাবে। তাদের হিসাব মতে ১৯৯০ সালে সাতক্ষীরা জেলায় আখ চাষ হয়েছে ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। ২০০০ সালে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৯৪৮ হেক্টর। এরপর ২০১০ সালে এ জেলায় আখের আবাদ হয়েছে মাত্র ১৪০ হেক্টর জমিতে। এরপর চলতি মৌসুম ২০১৯ সালে আখ চাষ হয়েছে মাত্র ১২৯ হেক্টর জমিতে। এর ফলে গত দুই দশকের ব্যবধানে আখ চাষ এ জেলা থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন