গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচনে ভোট গণনায় অনিয়মের অভিযোগে পরাজিত দু’ স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা দ্বিতীয় দিনের মতো গোপালগঞ্জ-টেকেরেহাট ও গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেছে। এ সময় র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সাথে দু’ প্রার্থীর সমর্থকদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সেখানে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ২১০ রাউন্ড গুলি, টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহামুদ হোসেন মোল্লার সমর্থকরা গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কের মাঝিগাতী থেকে কাঠি পর্যন্ত ৬ কিঃ মিঃ এলাকায় সড়কের পাশের গাছ কেটে সড়কে ফেলে অবরোধ শুরু করে। এছাড়া আন্দোলনকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। সড়কে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আন্দোলনকারীদের সাথে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পুলিশ ২১০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ, টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আন্দোলণকারীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বেদগ্রামে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে। মহাসড়কের দু’ পাশে দূরপাল্লার বাসসহ বেশ কিছু যানবাহন আটকা পড়ে। পরে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের ব্যারিকেট তুলে দিলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
এছাড়া গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর থেকে বৌলতলী পর্যন্ত ৫ কিঃ মিঃ সড়ক পরাজিত অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী এস.এম শাহআলমের হাজার হাজার সমর্থক সকাল থেকে অবরোধ করে। তারা রাস্তার পার্শ্বের অসংখ্য বড় বড় গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখে। পাশাপাশি টায়ার জ্বালিয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ প্রদর্শণ করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ,বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই দু’ সড়কে অবরোধ অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার রাত ৮ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই দু’ সড়কের ৪টি স্থানে পরাজিত ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করে।
পরাজিত দু’ চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহামুদ হোসেন মোল্লা দিপু ও এস.এম শাহআলম জানান, প্রশাসন ভোট গণনার সময় অনিয়ম করে ফলাফল পাল্টে দিয়েছে। পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানিয়ে তাদের সমর্থকরা সোমবার থেকে সড়ক অবরোধ করেছে।
উল্লেখ্য গত রোববার ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু ৩৭৬৫০ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহামুদ হোসেন মোল্লা দিপু পান ৩৭৬২০ ভোট। অপর প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এস.এম শাহআলম পেয়েছেন ৩৪৫৯৪ ভোট । গোপালগঞ্জের ৫ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কাউকে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তবে নির্বাচিত চেয়রম্যানের ৫ জনই আওয়ামী লীগ নেতা।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ২১০ রাউন্ড গুলি, টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য কাজ করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন