সপ্তাহের ব্যবধানে ফেনীতে ২ ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা কর্তৃক ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় গ্রাহকদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ১৭ মার্চ ঢাকা ব্যাংক ফেনী শাখার কর্মকর্তা গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার খবরে বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের হিসাবে জমাকৃত টাকার খবরাখবর নেন।
এ ঘটনার পর থেকে অনেক গ্রাহকরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিচ্ছে। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। কিছুতেই গ্রাহকদের আস্থায় আনা যাচ্ছে না বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেনীর এক ব্যাংক ম্যানেজার। তিনি বলেন, রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন সাধারণ মানুষের যাবার আর কোন পথ থাকে না। গ্রাহকরা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা যে হারে তুলে নিচ্ছে তাতে ব্যাংকিং কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়বে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
সম্প্রতি ঢাকা ব্যাংক ফেনী শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার ও ক্রেডিট ইনচার্জ গোলাম সাঈদ রাশেব ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি করে প্রায় ৭ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে যায়। এ বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেয় রাশেব। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ব্যাংক ম্যানেজার মো. আকতার হোসাইন সরকার বাদী হয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা রাশেব ও ক্যাশিয়ার আবদুস সামাদকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
এছাড়া অজয় কুমার বণিক নামের শহরের এক ব্যবসায়ী ফেনী মডেল থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আলোচিত ব্যাংক কর্মকর্তা রাশেব তার একাউন্ট হ্যাকড করে ৬৯ লাখ টাকা সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন গ্রাহক ব্যাংক ম্যানেজারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। মামলা ও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ঢাকা ব্যাংকের প্রধান শাখায় গিয়ে ধরা দেয় রাশেব। সেখানে টাকা আত্মাসাতের বিষয়ে তাকে ব্যাংকের উর্ধ্বতনরা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ম্যানেজার মো. আকতার হোসাইন সরকার জানান, ইতোমধ্যে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি টিম ফেনী এসে ঘটনাটি তদন্ত করেছেন। রাশেব ও আবদুস সামাদকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ফেনী শাখার এক কর্মকর্তা গ্রাহকদের একাউন্ট হ্যাক করে এক কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া ঘটনা স্বীকার করে জানান, সাবেক ক্যাশ অফিসার হাসান মোহাম্মদ রাশেদ বেশ কয়েকজন গ্রাহকের একাউন্ট হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে চট্রগ্রামের ব্যাংকের বারইয়ারহাট শাখায় বদলি হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী সদর উপজেলার কাজিরবাগ এলাকার প্রবাসী শাহ আলম জানান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ফেনী শাখায় তিনি ও তার স্ত্রীর দুটি একাউন্ট আছে। শাহ আলমের নামে তার স্ত্রী ১৭ লাখ টাকা এফডিআর করেন।
অপরদিকে স্ত্রী রেজিয়া সুলতানা সেভিং একাউন্টে ২৭ লাখ টাকা আমানত রাখেন। তবে সম্প্রতি ব্যাংকের দুটি একাউন্ট থেকে সব টাকা লোপাট হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরে দেশে ফিরে আসেন। এরপর একাধিক বার ব্যাংকে ধর্ণা দিলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন সদুত্তোর দিতে পারেনি। বরং তাকে বেশ কয়েকবার হয়রানি করেছে।
ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের হোসেন আহমেদ রাসেল জানান, তার বাবা আবদুস সালামের একাউন্ট থেকে ৩৩ লাখ ৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে লোপাট করেছে।
বিষয়টি জানতে পেরে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক কর্মকর্তা টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কোন ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। এদিকে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রেহানা আক্তারকে তার কক্ষে পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যম কর্মীরা তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
ফেনী শাখার অপারেশন অফিসার গোলাম কিবরিয়া জানান, তাদের শাখার সাবেক ক্যাশ অফিসার হাসান বেশ কিছু গ্রাহকের আমানতের টাকা তাদের একাউন্ট থেকে সরিয়ে নিয়েছেন সম্প্রতি এমন কয়েকজন গ্রাহক ব্যাংকে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি উদ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তারা তদন্ত চালাচ্ছে। প্রমাণ পেলে দ্রুত টাকা ফেরৎ দেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন