শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ক্রেডিট কার্ডে ছাড়

সীমিত ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের বিশেষ সুযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০২ এএম

মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাপদশ কার্যত অচল। সীমিত পরিসরে চলছে ব্যাংকিং সেবা। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। এ কারণে অনেক গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। এ পরিস্তিতিতে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। তবে অনেকেই আবার এখনও বিষয়টি নিয়ে ভাবেনি। বিশেষ ছাড়ের মধ্যে রয়েছে- সুদবিহীন কিস্তি পরিশোধের সময় বৃদ্ধি, কিস্তি পরিশোধের সীমা কমানো, কিস্তির মেয়াদ বাড়ানো। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা ও ঋণসীমাও বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড থেকে যে কোন বুথ থেকে টাকা উত্তোলনও ফ্রি করে দিয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান তমাল এস এম পারভেজ ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে জানুয়ারি থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি দিতে না পারলে তাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না সুযোগ দিয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরাও সে সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি সরকারের সাধারণ ছুটি চলাকালীন এনআরবিসি ব্যাংকের ডেবিট কার্ড দিয়ে বাংলাদেশের যে কোনো এটিএম বুথ থেকে কোনো রকম ফি ছাড়াই টাকা তোলা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

স্টান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ইনকিলাবকে বলেন, করোনার প্রভাবে দেশে সাধারণ ব্যাংকিং সেবা নেই। সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চলছে। তাই এ সময়ে অবশ্যই গ্রাহকদের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। তাই ইতোমধ্যে কিস্তি পরিশোধের সময় একমাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) যদি এক্ষেত্রে আরও বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাও বাস্তবায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করেন রাশেদ মাকসুদ। ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কার্ড ডিভিশনের প্রধান মাহফুজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান দুর্যোগকালীন স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম না থাকায় ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের কিস্তি পরিশোধের সর্বশেষ সীমা থেকে অতিরিক্ত ১ সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।

এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান সময়ে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যাতে সুযোগ দেয়া হয় সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সূত্র মতে, এনআরবিসি ছাড়াও এই সময়ে যে কোনো এটিএম বুথ থেকে ফি ছাড়াই টাকা তোলার সুযোগ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)।

এদিকে অধিকাংশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ সুযোগ দিলেও ভিন্ন কথা বলছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটি জানিয়েছে, তারা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের দাবি ডিজিটাল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ব্যাংকের শাখা খোলা আছে। তাই চাইলেই কিস্তি পরিশোধ করার সুযোগ থাকছে বলে উল্লেখ করা হয় ব্যাংকটির কার্ড ডিভিশন থেকে।

সূত্র মতে, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের কিস্তি পরিশোধের সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যাংকটির মার্চের কিস্তি পরিশোধের শেষ সময় ছিল ১২ এপ্রিল। ওই সময়ে অনেকের পক্ষে কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এ বিবেচনায় তারা কার্ডের কিস্তি পরিশোধের সময় ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের কিস্তির টাকা অ্যাপসের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক অনলাইনে, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে। ব্রাক ব্যাংক ৭৪টি শাখা খোলা রেখেছে। এগুলোতে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের সুযোগ রেখেছে। এছাড়া তারা এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলার সীমাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এছাড়াও অন্য ব্যাংকগুলোও এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সীমাও বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের বিপরীতে সাধারণত প্রতি মাসের শেষে ৯ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বকেয়া কিস্তির অর্থ পরিশোধ করতে হয়। ব্যাংক ভেদে কিস্তি পরিশোধের সীমা ও কিস্তির পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরবর্তী সময়ে গ্রাহকদের জরিমানা দিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। জরিমানার অঙ্কও ব্যাংক ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে দিতে হয় ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এ হিসাবে ৪৫ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট দিতে হয়।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। এতে কার্যত দেশ অচল। ৪ এপ্রিল প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আরও এক দফা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা আরও বাড়তে পারে। ওই সময়ে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর কিছু শাখা সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকছে।

ওষুধ ও নিত্যপণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সীমা বাড়িয়েছে সব ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এসব পণ্য কিনতে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা খরচ করা যাবে। মাসে করা যাবে ১ লাখ টাকা। এর বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

যেসব আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বিদেশে গিয়ে আটকা পড়েছেন তাদের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সীমা বাড়ানো হয়েছে কোটার চেয়ে বেশি। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ সীমা নির্ধারিত হবে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ভ্রমণ কোটায় বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার নিতে পারেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোটার চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হলেও তা ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডে ছাড় করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ। প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। দেশে প্রায় ৪০ হাজার পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে নিত্যপণ্য ও ওষুধ কেনাকাটা করা যায়। সব পস মেশিনও খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Tafazzal Hossain Hossain ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
করোনার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে ঘরও পরিষ্কার রাখা জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির টেলিভিশন, রিমোট, রান্নাঘর, আলমারি, ফ্রিজ, সমস্ত দরজার হ্যান্ডল, কল, সুইচ বোর্ড, ফোন, চাদর, বালিশের কভার ইত্যাদি পরিষ্কার করার দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া উচিত। ঘর পরিষ্কারের জন্য কিছু বিষয় অনুসরণ করতে পারেন। যেমন- ১. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ঘরে ফিনাইল এবং লিক্যুইড ব্লীচ (সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট) ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য কিছুটা ব্লীচে পরিমাণমতো পানি দিয়ে দুই থেকে চার মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর গ্লাভস পরে যে জায়গাটি পরিষ্কার করতে চান সেখানে এটি ছড়িয়ে দিন। প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর, পরিষ্কার কাপড়ের সাহায্যে জায়গাটি মুছুন। ২. রান্নাঘরের থালা বাসন পরিষ্কার করতে গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। গরম পানি দিয়ে জীবাণু ধ্বংস করা সহজ হয়। রান্নাঘর ব্যবহৃত কাপড় গরম পানিতে পরিষ্কার করা উচিত। এটি সম্পূর্ণ শুকানোর পরে তা ব্যবহার করুন। ৩. বাড়িতে যদি কোনও ব্যক্তি অসুস্থ থাকে তবে তার কাপড়টি আলাদা করে ধোবেন। তার কাপড়গুলি ধুয়ে নেওয়ার পরে সেগুলি ডেটল পানিতে ভিজিয়ে তারপর তা শুকাতে পারেন। ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শুরু করার আগে সবসময় মুখ, হাত এবং মাথা ঢেকে নিন। পরিষ্কার করার সময় আপনার চোখ, নাক এবং মুখে স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন। পরিষ্কারের জন্য যেকোনও কাপড় বা ফেলে দেওয়া কাপড় ব্যবহার করুন। কাজ শেষ হওয়ার পরে এগুলি ভাল করে ধুয়ে শুকিয়ে দিন। কাজ শেষে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
Total Reply(0)
Mohammad Shahajahan ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩৫ এএম says : 0
সীমিত আকারের ব্যাংকিং কিন্তু ব্যপক আকারের অব্যবস্থাপনা। ৮ ঘণ্টার কাজ তিন ঘণ্টায় কিভাবে সম্ভব বাংলাদেশ ব্যাংকের মাথা মোটাদের বোঝা উচিত। তার মধ্যে ক্লিয়ারিং, যানবহনের সমস্যা তো আছেই।
Total Reply(0)
Md Syed Alam ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
ব্যাংকের মধ্যে কি মানুষের ভীড় হবে না?? এখানে যদি করোনার ছড়ায়, এর দায়ীভার কে নিবে?
Total Reply(0)
Babu Ray ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
মার্কিং করে ৬ ফিট দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিটি কাস্টমার অনলাইনে/ফোনে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সেবা চালু করা উচিত আগামী ৩১শে জুলাই পর্যন্ত। নয়তো সেবা না হয়ে সেটা সাজা হয়ে যেতে পারে কাস্টমার/জনগণের জন্য।
Total Reply(0)
Hannan Kabir ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৩৬ এএম says : 0
রাজধানীর শাখাগুলোতে ভিড় না থাকলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভালো গ্রাহক আসছে। কারণ ঢাকার বেশীরভাগ মানুষই তো এখন গ্রামে । টাকা উত্তোলন করছে অনলাইন ব্যাংকিং এ।
Total Reply(0)
Babul ৩ এপ্রিল, ২০২০, ৪:৪১ এএম says : 0
Agami June parjanta credit card interest free kora hok...
Total Reply(0)
SYED ABU YUSUF ৩ এপ্রিল, ২০২০, ৬:২৭ এএম says : 0
City Bank credit card is not good.The people who use it they know it.
Total Reply(0)
Ibrahim khalil ১৭ জুন, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
ইবিএল ক্রেডিট কার্ডের কিস্তির কোন প্রকার সময় বাড়াইনি। বরং ইএমআই বাতিল করে আমার 107000 টাকা মোট বকেয়া যা আরো 52 কিস্তিতে দেওয়ার কথা। কিন্তু ইএম আই বাতিল করে 162000 টা বকেয়া দেখাচ্ছে। যা আদায়ের জন‍্য চাপ দিচ্ছে।
Total Reply(0)
Rajib sarkar ১৭ জুলাই, ২০২০, ৩:১১ এএম says : 0
আমি Credit Card করতে আগ্রহ, যা প্রয়োজন সব ঠিক আছে।নেএকোনা সদর যেকোনো ভালো ব্যাংক। পাশাপাশি মাসিক চার ছয় হাজার টাকার ডিপিএস।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন