শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনে অস্পষ্টতা

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সার্কুলার সীমা উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

অনলাইনে বিদেশ থেকে পণ্য ও সেবার বৈধ কেনাকাটার বিপরীতে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড (আইসিসি) ব্যবহারে জুরি নেই। চলমান করোনা মহামারিতে এর ব্যবহার আরও বেড়েছে। কারণ হাতে নগদ টাকা না থাকলেও এই কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যায়। নির্দিষ্ট সময় পর তার ওই টাকা পরিশোধ করা যায়। বাংলাদেশেও বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা দীর্ঘদিন থেকে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নানা প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ক্রয় করছেন। নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থেকে মুক্তি এবং অধিকতর নিরাপদ হওয়ায় প্রতিদিনই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রেডিট কার্ড। তবে বিশ্বব্যাপি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডধারীরা লেনদেনের অবারিত সুযোগ ভোগ করেন। কিন্তু বাংলাদেশের গ্রাহকদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। প্রয়োজন হলেও নির্দিষ্ট সীমা ৩শ’ ডলারের বাইরে বিদেশি উৎস থেকে অনলাইনে পণ্য ও সেবা ক্রয়ের সুযোগ থাকছেনা। আর এ নিয়েও একেক সময় একেকভাবে সার্কুলার দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।

যদিও এবার এই ৩০০ ডলার খরচের ৬টি খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, গাইডলাইনস ফর ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন্স-২০১৮, খন্ড-১, অধ্যায়-১৯, অনুচ্ছেদ-১৭ অনুযায়ী অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের কার্ডধারীরা বিদেশি স্বনামধন্য ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পণ্য ও সেবা ক্রয় যেমন- ডাউনলোডযোগ্য অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার, ই-বুক এবং ম্যাগাজিন ও নিউজপেপার সাবস্ক্রিপশন ফি পরিশোধে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের জন্য প্রাধিকারপ্রাপ্ত। এসব পণ্য ও সেবা ছাড়াও বেসিসের সদস্যভুক্ত তথ্য ও প্রযুক্তি বা ফার্মের অনুমোদনযোগ্য পেমেন্ট, মেম্বারশিপ ফি, তথ্য ও প্রযুক্তি খরচ, ভিসা প্রক্রিয়া ফি, হোটেল বুকিং ও মোবাইল ফোনের রোমিং বিল পরিশোধ করা যাবে। আর এসব পণ্য ও সেবার সবই ওই ৩০০ ডলারের মধ্যেই হতে হবে। আর এ নিয়েও গ্রাহকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

একই সপ্তাহের শেষ দিন গত বৃহষ্পতিবারে আবার আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে ঘরে বসে বিদেশি এয়ারলাইন্সের টিকিট কেনার ব্যবস্থা করার সার্কুলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে বিদেশ যাওয়ার আগে বাংলাদেশ থেকে বিদেশের গন্তব্য যেমন- নিউইয়র্ক থেকে ফিলাডেলফিয়া কিংবা সিঙ্গাপুর থেকে কুয়ালালামপুরের জন্য এয়ারলাইন্সের টিকিট কেনা যাবে। এ সিদ্ধান্তকে গ্রাহকরা সাধুবাদ জানালেও দু’দিন পর পর এভাবে সার্কুলার দেয়া, পরিবর্তন করা এবং এসব সার্কুলার নিয়ে ব্যাংকার ও গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরণের অস্পষ্টতা রয়েছে। কারণ সার্কুলারে সঠিকভাবে কোন কিছু পরিস্কার করা হয়নি। এক্ষেত্রে সার্কুলার জারি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

সূত্র মতে, এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পণ্য ও সেবামূল্য পরিশোধে এবং ৩শ’ ডলারের অতিরিক্ত খরচ রোধে ‘সতর্ক’ থাকার নির্দেশ দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সতর্ক শব্দ নিয়েও দীর্ঘদিন গ্রাহক ও ব্যাংকারদের মধ্যে এক ধরণের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে বিপরীতমুখী অবস্থানেরও উদ্ভব হয়েছে। কারণ সতর্ক বলতে কি বোঝানো হয়েছে তা নিয়েও অষ্পষ্টতা ছিল।

অপরদিকে এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ ও অস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েই দায় শেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। যদিও শুধু দেশি গ্রাহকরা বিপদে পড়ছে তা নয়। বাংলাদেশে যেসব বিদেশি অবস্থান করছেন তারাও পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। কারণ আইফোন, দামি ব্রান্ডের ঘড়িসহ একটু দামি পণ্য ক্রয় করতে গেলেও বারবার অনুমতি নিতে হয় ব্যাংকের। আর এক্ষেত্রে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। অথচ সরকার উদার বিনিয়োগ নীতিকে উৎসাহিত করছে।

গতকাল কথা হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধানের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সামিট গ্রæপের একজন পরিচালকের চিকিৎসা বিল ১৪শ’ ডলার এসেছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের চিকিৎসা বিল নিয়ে কোন ধরণের নির্দেশনা না থাকায় ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ই বিপাকে আছে।

মোহসেনা নামে এক ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক বলেন, একটি দামি ব্রান্ডের ঘড়ি বা আইফোন কি কোনভাবে ৩শ’ ডলারের মধ্যে সম্ভব। তাই অনেক সময় বাধ্য হয়েই প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের চিন্তাও বাদ দিতে হয় জানালেন তিনি। তবে এটা শুধু মোহসেনার ক্ষেত্রেই নয়; তার মত অনেক গ্রাহকই প্রতিদিন এভাবে বিপাকে পড়ছেন। সুযোগ থাকা স্বত্তে¡ও ক্রয় করতে পারছেন না প্রয়োজনীয় পণ্যটি।

কার্ড শাখায় কাজ করা একাধিক ব্যাংকার বলছেন, নির্দেশনায় কোন কিছুই স্পষ্ট করা হয়নি। নির্দেশনায় অসঙ্গতি থাকায় গ্রাহকরা প্রয়োজন হলেও ৩শ’ ডলারের বেশি একাকালীন লেনদেন করতে পারছেন না। ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অনুমোদন দিলেও পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জেরা ও হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে। আর তাই উপায় না পেয়ে ব্যাংকাররা গ্রাহকদের সাহায্য করছেন না। কারণ তাহলেই হয়তো তাকে বিপাকে পড়তে হবে। একাধিক ব্যাংকার বলেন, তাদের হাত বাঁধা। নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয় তাদের। তাই এ ধরণের নীতিমালা থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন গ্রাহকসহ সেবা প্রদানকারী ব্যাংকগুলো।

সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক পণ্য কেনাকাটায় কার্ড ব্যবহারকারী গ্রাহকদের লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপ করে ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে কার্ড ব্যবহারকারী গ্রাহকের এককভাবে কোনো পণ্য বা সেবামূল্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩শ’ ডলার পর্যন্ত পরিশোধের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বছরে তা কোনো অবস্থাতেই এক হাজার ডলারের বেশি হবে না।

এককালীন ৩শ’ ডলারের বেশি দামে পণ্য বা সেবা ক্রয়ে সতর্কতার নামে গ্রাহক হয়রানির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, অনলাইন কেনাকাটার নামে যাতে কোনভাবে অর্থ পাচার না হয় সে দিকটা নজর রাখবে ব্যাংক। তার মানে এই না পণ্য ক্রয় ও সেবা ৩শ’ ডলারের বেশি করা যাবে না। কারণ এখন অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যের দামই ৩শ’ ডলারের বেশি। তিনি বলেন, ক্রেডিট কার্ড লেনদেন সীমা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যয় উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত। কারণ যারা অর্থ পাচার করবে তারা এই সীমার মধ্যেও করবে। তাই উন্মুক্ত করে নজরদারি বাড়াতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বৈদেশিক লেনদেন ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত সময়োপযোগী করা হচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে সার্কুলার পরিবর্তন করা হয়। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে বিদেশের টিকিট এবং হোটেল বুকিং স্থানীয়ভাবে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার ফলে বিদেশগামী যাত্রীরা ভ্রমণ স্বস্তির সঙ্গে করতে পারবেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন