কুমিল্লা উত্তর সংবাদদাতা
আগামী ২৮মে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে ঘিরে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা, রাধানগর, চন্দনপুর ও গোবিন্দপুর ইউনিয়নে বহিরাগত এবং স্থানীয় দাগী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরকে সরকার দলীয় প্রার্থীদের সাথে প্রচারণায় দেখে সাধারণ ভোটাররাও স্থানীয় সুশীল সমাজের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এসব সন্ত্রাসীরা নৌকা মার্কার প্রার্থীদের পক্ষে কেন্দ্র দখলের সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আগাম মহড়া-হুঁশিয়ার দিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সেনবাগ বাজারে প্রতিপক্ষের সমর্থক সন্ত্রাসীরা বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল আল বাকির নির্বাচনী ক্যাম্পে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ খবরে পুরা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এদিকে সন্ত্রাসীরা মাতাল অবস্থায় চন্দনপুর ইউনিয়নের তুলাতুলী গ্রামে বিদ্রোহী প্রার্থী মিলন সরকারের সমর্থক লাকী বেগমের ঘরে ঢুকে তাকে আনারস মার্কার এজেন্ট না হওয়ার জন্য মাথায় অস্ত্র তাক করে নানাভাবে শ্লীলনতাহানী করেছে এবং প্রাণনাশ করার হুমকি দিয়েছে। এ বিষয়ে লাকী বেগম বাদী হয়ে এলাকার দাগী সন্ত্রাসী নাসির, মাহফুজ, শাহা, নাজির, রিয়াজুল, ফারুক ও মনিরকে আসামি করে মেঘনা থানায় মামলা দায়ের করেছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে স্থানীয় ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ততই বেপরোয়া হয়ে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে বলে স্থানীয়রা জানান। জানা গেছে এরই মধ্যে সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখলের জন্য সরকারি দলীয় প্রার্থীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গেছে। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন কেন্দ্র দখলে নিতে এলাকা ঘুরে আগাম রেকি করে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে এলাকার ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কেননা সন্ত্রাসীদের এখনই দমানো না গেলে ভোটের দিন বড় ধরনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে সর্বত্র। দাঙ্গা-হাঙ্গামায় প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্থানীয় অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহল। মেঘনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইনকিলাবকে বলেন, নৌকা মার্কার প্রার্থীদের পক্ষে বহিরাগত ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তাতে করে এলাকায় চরম হানাহানি ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখনি তা বন্ধ না গেলে এলাকার রাজনীতি ও সমাজনীতি কুলষিত হয়ে পড়বে। তিনি অবিলম্বে নৌকা মার্কার পক্ষের সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বন্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। রাধানগর ইউনিয়নে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) মজিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় সন্ত্রীদের সাথে অচেনা সন্ত্রাসীদেরকে দেখে ভোটাররা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থীদের নিশ্চিত ভরাডুবি হবে জেনে তারা সন্ত্রাসী ভাড়া করে কেন্দ্র দখলের আগাম মহড়া দিচ্ছেন। চালিভাংগা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র (আনারস) হুমায়ুন কবির বলেন, আমার জনপ্রিয়তা দেখে নৌকা মার্কার প্রার্থী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তার সমর্থিত ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা চালিভাংগা গ্রাম এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে। আমার সমর্থকরা ওই গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেনা। চন্দ্রনপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র (আনারস) মিলন সরকার বলেন, বহিরাগত ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের মাথায় অস্ত্র তাক করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন আর বলছেন ভোটের দিন যেন তারা কেন্দ্রে না যায়, গেলে মরতে হবে। এরই মধ্যে আমার সমর্থিত তুলাতলি গ্রামের লাকী বেগমের ঘরে ঢুকে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে নানাভাবে হেনেস্থা করে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং আনারসের পক্ষে এজেন্ট হলে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া ঘোষণা দেয়। সন্ত্রাসীরা এসময় মাতাল অবস্থায় ছিলেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পুরো মেঘনা উপজেলার ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আব্দুল আল বাকি শামীম বলেন, নৌকা মার্কার প্রার্থীকে ভোটাররা ও এলাকার মানুষ পছন্দ করে না, ফলে নৌকা মার্কা প্রার্থীর ভরাডুবি নিশ্চিত হয়ে পড়ে। যার কারণে এখন তারা সন্ত্রাসীদের ওপর নির্ভর করছে। তবে জনগণ ক্ষেপে গেলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়বে। তাই তিনি এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দাউদকান্দির ৩ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান বিদ্রোহীদের পক্ষে
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সরকার দলীয় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী গোয়ালমারী ইউনিয়নে জসিম হাসান, জিংলাতলীতে মনির হোসেন সরকার ও সুন্দলপুরে মাসুদ আলমকে নিয়ে স্থানীয় আ.লীগের অভ্যন্তরে চলছে তোলপাড়। তৃণমূল নেতাকর্মী ও আ.লীগ ঘরানার সমর্থক ভোটারদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। দলের ত্যাগী, পোড়খাওয়া, বর্তমান চেয়ারম্যান ও জনপ্রিয় নেতাদের বাদ দিয়ে রহস্যজনকভাবে জনবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত নেতাদের আ.লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়ায় উপজেলা আ.লীগ, ইউনিয়ন আ.লীগ ও অঙ্গদলগুলোর নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী সুন্দলপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আসলাম মিয়াজী, জিংলাতলী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন মোল্লা ও গোয়ালমারী ইউনিয়নের আ’লীগ নেতা নূরে আলম ভুলুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা যেকোনো মূল্যে তাদের পছন্দের এই বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে বিজয়ী করার জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে। এদিকে গত ১৯মে ছিল প্রার্থীদের প্রত্যাহারের শেষ দিন। দলের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের উপর চাপ ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ার। কিন্তু ১২টি ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কেউ প্রত্যাহার করেনি। তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী করবে এমন শক্ত অবস্থানেই আছেন। এদিকে নেতাকর্মীরা বলছেন, জনগণের সাথে যাদের সামান্যতম সম্পর্ক নেই এবং দীর্ঘদিন ধরে এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন তাদেরকে দেশের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দল আ.লীগ থেকে কীভাবে, কী কারণে মনোনয়ন দেয়া হল তা আমাদের বোধগম্য নয়। এলাকায় তাদের নানা বদনাম রয়েছে। ফলে এ তিন ইউনিয়নের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধারা হতবাক হয়েছে, বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এদিকে এই তিন ইউনিয়নের দলীয় নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী তিন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারÑপ্রচারণায় নেমেছে। তারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়ায় দলীয় মনোনীত ওই তিন প্রার্থী এক প্রকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। দিন যতই যাচ্ছে ভোটারদের হিসাব-নিকাশ বিদ্রোহী তিন প্রার্থীর পক্ষেই যাচ্ছে। কারণ এই তিন বিদ্রোহী প্রার্থীর এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে যথেষ্ট অবদান রয়েছে। গত ৫ বছরে জিংলাতলি ও সুন্দলপুর ইউনিয়নে আসলাম চেয়ারম্যান ও আলমগীর চেয়ারম্যান আর্থÑসামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ে যে অবদান রেখেছে তা এলাকার মানুষের কাছে প্রশংসার দাবি রাখে। গোয়ালমারীতেও আ.লীগ নেতা বিশিষ্ট সমাজসেবি নূরে আলম ভুলুর আর্থÑসামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান আছে। ফলে এলাকার মানুষ আবারও তাদের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চায়। এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, সরকার দলীয় প্রার্থী মাসুদ আলম ও মনির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে এলাকায় বিদ্যুৎ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জিংলাতলী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, আমি দলের নেতাকর্মী ও জনগণের সুখে-দুঃখে মিশে আছি বলেই তারা আমার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছে। তারা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছে না। দলীয় মনোনয়নে এলাকার জনগণ খুশি হয়নি। তিনি বলেন, দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এলাকার নিরীহ গরিব মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে বিদ্যুৎ দিয়েছে। ওই ক্ষোভেরই বর্হিঃপ্রকাশ নেতাকর্মীদের আমার পক্ষে অবস্থান। সুন্দলপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং বিদ্রোহী প্রার্থী আ.লীগ নেতা আসলাম মিয়াজী বলেন, কি কারণে, কিভাবে একজন জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হল তা আমার বোধগম্য নয়। তবে এ মনোনয়নে এলাকার মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা হতবাক ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে এলাকায় বিদ্যুৎ দিয়ে গরীব ও নিরীহ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাকে মানুষ ভোট দেয়ার কোন কারণ নেই। গোয়ালমারী ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী আ.লীগ নেতা নূরে আলম ভুলু বলেন, আমি গত ৭ বৎসর ধরে এই এলাকার মানুষের খেদমত করেছি। তাদের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। দলীয় মনোনীত প্রার্থী গত সাতটি বৎসর ধরে এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তাকে ভোটাররা অতিথি হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ইউনিয়ন আ. লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থক ভোটারটা আমার পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন