সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এবং এমজিএস প্রজেক্টের মাধ্যমে কুমিল্লা নগরীর ফুটপাতগুলো নান্দনিক হয়ে উঠলেও পথচারীদের নির্বিঘেœ ও ঝুঁকিমুক্ত চলাচলের সুযোগ নেই। হকারদের দোকানপাট পথচারীদের সহজে চলাচলের জায়গায় থাবা বসিয়ে দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়েছে। কেবল তাই নয়, ফুটপাতের জায়গা নিয়ে হকারদের কাছে চাঁদাবাজির বাণিজ্যও এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ফুটপাতে দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ দোকানপাটে নগরীর সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে। দিনদিন কুমিল্লা নগরীতে বাড়ছে লোকসংখ্যা, নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। আর তাই কর্মব্যস্ত নগরীতে লোকজনের স্বস্তিতে চলাচলের মাধ্যমই হলো ফুটপাত। যা নাগরিক সুযোগ-সুবিধার একটি অন্যতম অংশ। ফুটপাতে হকারদের দোকানদারির পাশাপাশি নতুন ভবন নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী রাখার কারণে লোকজনের হাটাচলা দায় হয়ে পড়েছে। এক সময় নগরীর চকবাজার থেকে শাসনগাছা পর্যন্ত ফুটপাতের বেহালদশা ঘিরে পথচারীদের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। নগরীর কিছু ফুটপাত সংস্কার না করায় মিশে গিয়েছিল রাস্তার সাথে। গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে নগরীর চকবাজার, ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, পোস্ট অফিস, সার্কিট হাউজ, ফৌজদারি মোড়, জেলা পরিষদ, পুলিশ লাইন, ঝাউতলা, বাদুরতলা এলাকার ফুটপাত দৃষ্টিনন্দন করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর দিক-নির্দেশনায় নগরীর ফুটপাতগুলো প্রাণ পেতে শুরু করে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় মিউনিসিপাল্ট গভর্নেন্ট এন্ড সার্ভিসেস প্রজেক্টের (এমজিএসপি) আওতায় সিটি কর্পোরেশন ওইসব এলাকার ফুটপাত সংস্কারের কাজ বাস্তবায়ন করেছে। মিরপুর সিরামিকের ইট ও টাইলসের সমন্বয়ে সংস্কারকৃত ফুটপাতের বর্তমান দৃশ্য নগরবাসীর নজরও কেড়েছে। কিন্তু নান্দনিক ফুটপাতে নির্বিঘেœ চলাচলের সুযোগ নেই পথচারীদের। সম্প্রতি ব্যস্ততম এলাকা কান্দিরপাড়ের ড্রেনের ওপর থেকে হকারদের স্থাপনা অপসারণ করে সেখানেও নির্মাণ করা হয়েছে কিছুটা উঁচু ফুটপাত। এসএস পাইপের রেলিংসহ টাইলস বসানো হয়েছে। আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। কান্দিরপাড়ের হকারদের বসার বিকল্প ব্যবস্থা করে দেয়ায় হয়তো এই ফুটপাতটি দখলমুক্ত থাকবে। কিন্তু নগরীর অন্যসব ফুটপাতগুলো কি বছরের পর বছর হকারদের দখলে থাকবে? এমন প্রশ্ন নগরবাসীর। অন্যদিকে নগরীর কিছু এলাকায় ড্রেনের উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে সø্যাবে টাইলস বসিয়ে তাও ফুটপাত হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ড্রেনের উপরের এসব ফুটপাত, পান-সিগারেট ও চা দোকান দিয়ে দখল হয়ে গেছে। নগরীর ঈদগাহের উত্তর দিকে নির্মিত ড্রেনের উপরের ফুটপাত ইতোমধ্যে ভাসমান দোকানিদের দখলে চলে গেছে। লোকজনের চলাচলের কোন সুযোগ নেই। এছাড়াও নগরীর আরেক ব্যস্ততম এলাকা রাজগঞ্জের ট্রাফিক পয়েন্টের দক্ষিণ দিক থেকে শুরু হওয়া ফুটপাত চকবাজার ফয়সাল হাসপাতাল পর্যন্ত অংশ ফুটপাত সংলগ্ন দোকানিরা তাদের মালামাল রাখছে। আবার বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে হকাররাও দখলে নিয়েছে। ফৌজদারি সড়কের অ্যাডভোকেট নেয়ামত উল্লাহর বাড়ির সামনে থেকে সাব রেজিস্ট্রি অফিস পর্যন্ত ফুটপাতে চলে যানবাহন মেরামতের কাজ। সশস্ত্র বাহিনীর অফিস থেকে সমাজকল্যাণ অফিস পর্যন্ত ফুটপাত থাকে মৌসুমি ফল বিক্রেতাদের দখলে। এদিকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ফুটপাত হকাররা দখলে নিয়ে যে যার মতো বাঁশ, কাঠ, রেক্সিন বা পলিথিন দিয়ে স্থাপনা তৈরি করে নানা পণ্যের পসরা খুলে বসছে। যেখানে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ জোরেশোরে চলছে সেখানে ফুটপাতের এসব দোকান নগর সৌন্দর্যকে ম্লান করে দিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবসায়িক কাজে ফুটপাত ব্যবহার নিয়েও চলে ব্যাপক চাঁদাবাজি। হকারদের কেউ কেউ প্রতিদিন কেউবা সপ্তাহ হারে একটি মহলকে চাঁদা দেয়। এ চাঁদা আদায়ের জন্য লাইনম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। কারা চাঁদা নেয় তা বলতে নারাজ সব হকাররাই। তবে বিকেল থেকে লাইনম্যানরা চাঁদা তোলা শুরু করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন