শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বগুড়ায় ওষুধ বাণিজ্য

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ এবং অনুমোদনহীন নকল ওষুধ বাজারজাত করণের বড় আড়তে পরিণত হয়েছে বগুড়া। এতে কিছু মানুষ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। স¤প্রতি পুলিশের অভিযানে বিক্রি নিষিদ্ধ সরকারি ওষুধের একটি বড় গোডাউনের সন্ধান মিললে কিছুটা ফাঁস হয় ওষুধ নিয়ে ভয়ঙ্কর বাণিজ্যের চিত্র।
গত ৩১ মার্চ বগুড়া শহরের মফিজ পাগলার মোড়ের একটি বহুতল ভবনে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৫০ লাখ টাকার সরকারি ওষুধের মজুদের সন্ধান পায় পুলিশ। এঘটনায় জড়িত মিজানুর রহমান রবিন নামের এক তরুণ ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। রবিনকে কোর্টে চালান করে ৮দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রবিনকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্ত্তি।
মামলাটির তদন্তে জড়িত পুলিশের সূত্র বলেছে, সরকারি ওষুধের বেআইনী মজুদ ও বিপননের সাথে জড়িত রবিন প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলোর জেলা ও উপজেলার স্টোর, কিছু সংখ্যক নার্স ও সরকারি হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহের সাথে নিযুক্ত ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী স্যালাইন, সার্জিক্যাল সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়। এর ফলে বগুড়ার মেডিকেল কলেজ, সরকারি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ওষুধ পায়না। হাসপাতালের স্টোর গুলো থেকে তাদেরকে জানানো হয় ওষুধের সাপ্লাই নেই। চাহিদার সাথে সংগতিপূর্ণ ওষুধ বেআইনী পাচারের কারণেই সরকারি মেডিকেল ও হাসপাতালে আসলে রোগীরা ওষুধ পায়না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত রবিনের কাছে পাওয়া তথ্য যাচাই বাছাইয়ের পর যেসব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারি এইসব ঘৃন্য কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা ।
৩১ মার্চ সরকারি ওষুধের বিপুল বেআইনী মজুদের সন্ধান পাওয়ার পর বুধবার দুপুরে বগুড়ার ওষুধের পাইকারি বাজার হিসেবে চিহ্নিত খান মার্কেটের ৪র্থ তলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল ইসলাম ও ড্রাগ সুপার আহসান হাবিবের নেতৃত্বে এ´িমপো’ নামের একটি ওষুধ বিপনন প্রতিষ্ঠানের অফিস কাম গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ৮ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের অনুমোদনহীন, আমদানী ও বিক্রি নিষিদ্ধ ওষুধের মজুদের সন্ধান পায়। অভিযানকালে হাতেনাতে ধরা পড়া শফিকুল ইসলাম ও আব্দুল মোমিন নামের ২ জন বিপনন কর্মকর্তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৬ মাসের কারাদন্ড ও ২ লক্ষাধিক টাকার অর্থদন্ড দেয়। তাদের হেফাজত থেকে নকল মেডিকেটেড শ্যাম্পু, ফুড সাপ্লিমেন্ট, যৌন উত্তেজক ওষুধ জব্দ করা হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে মুদ্রিত বিদেশী ওষুধের মোড়ক ও বিএসটিআইয়ের ভুয়া অনুমোদনের কাগজও পাওয়া যায়। এদিকে পাইকারি ওষুধের এই মার্কেটের ৪র্থ তলায় অভিযান চলার সময় পুরো মার্কেটের প্রায় হাজার খানেক ওষুধের দোকানের অর্ধেকরও বেশি বন্ধ করে মালিক কর্মচারীরা চলে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া এই দোকানগুলোতে বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধের মজুদ ছিল। এই মার্কেটে একটি প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন ধরে বেআইনী ওষুধের সংগ্রহ, মজুদ ও বিপননের সাথে জড়িত রয়েছে। অতীতেও বহুবার টাস্কফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হয়েছে। অভিযানে এসে একাধিক ড্রাগ সুপার শারীরীকভাবে লাঞ্ছিতও হয়েছেন । অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র ওষুধ প্রশাসনের সৎ কর্মর্তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে । মন্ত্রনালয়ে তদবির করে অনেককে বদলীও করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন