ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব করা নিয়ে আওয়ামী লীগের অভিযোগ সত্যের দিকেই যাচ্ছে। প্রশাসনের এক কর্মকর্তার ভোটের দিনের এ্যাকশনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান বিজয় সকাল পৌনে ৯টার দিকে চড়াও হন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ওপর।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় কেন্দ্রের সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে কামরুজ্জামান যাও এখান থেকে, যাও এখান থেকে বলে এগিয়ে যেতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গেই বিজিবি লাঠি নিয়ে নৌকার সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের ধাওয়া করে। ভোটকেন্দ্রের সামনে কামরুজ্জামান তখন বলতে থাকেন আরেকবার যদি এদিকে আসছ ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিমু কিন্তু। এরপরই ওই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কেন্দ্রের বাইরে ভোটার ¯øীপ দেয়ার টেবিলের দিকে কোন প্রার্থী, কোন প্রার্থী বলে এগিয়ে যান। বলেন, এখানে নৌকার কেউ থাকতে পারবেনা। আনারস হলে ঠিক আছে। এ সময় ভয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাদের সাথে থাকা নৌকার ব্যাজ-লিফলেট লুকিয়ে ফেলে।
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুজন দত্ত। তিনি বলেন, এমন করার কারণ জানতে চাইলে কামরুজ্জামান আমাকে বলেন এটা নাকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। আমি বেশী কথা বললে আমাকে সে ৩ মাসের সাজা দিয়ে দেবে। সুজন আরো জানান, ভোটের দিন শুধু কেন্দ্র বা এর আশপাশেই দায়িত্ব পালন করে ক্ষান্ত হননি তিনি। শহরের সর্বত্র যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পেয়েছেন তাদের ওপর চড়াও হয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেলের মোড়াইলের বাসায় ভোট চলাকালে দুপুর ১২টা নাগাদ বিজিবির একটি দল নিয়ে চড়াও হন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান। এর আগে শহরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজ কেন্দ্রে রুবেলসহ ছাত্রলীগের ৭/৮জন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন আরো ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এর মধ্যে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজিবি ও পুলিশের মোট ২৪টি ষ্ট্রাইকিং ফোর্সের। ভোট শেষ হওয়ার পরই আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে ১১৪টি কেন্দ্রের সবকটিতে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর বিজিবি-পুলিশের দল নিয়ে চড়াও হয়েছে প্রশাসনের এসব লোকজন। শুধু তাই নয় ভোটের আগের রাত থেকে নৌকা মার্কার অফিস এবং বাসা-বাড়িতে ঢুকে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর কোন কারন ছাড়াই বেপড়োয়া আক্রমণ করেন তারা। ভোটের দিন আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের যেখানেই পেয়েছে সেখানেই বেপড়োয়াভাবে আক্রমণ করে তারা। ভোট শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে এসব অভিযোগ আসতে থাকে। তাদের মারধরে আহত হন দলের কয়েক’শ নেতাকর্মী। এরপরই ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
জেলা ছাত্রলীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে আড়াই ঘন্টা বিক্ষোভ করে। এসময় শহরে যানবাহন চলাচল ছিলো পুরোপুরি বন্ধ। ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই ঘটনার জন্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক জেলা প্রশাসক বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান এবং তার নির্দেশ পালনকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল কবির, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুজ্জামান ও সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) জিয়াউল হককে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়। বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান ভোটের আগের রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে সার্কিট হাউজে গোপন বৈঠক করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ও পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী লোকমান হোসেন ও শামীমা আক্তারের সঙ্গে। নির্বাচনে এই তিনজনই জয়ী হন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, কালো টাকার বিনিময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জিতিয়ে দেয়ার মিশন বাস্তবায়নে তারা এটি করেছে। আর এর মুলে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে ৩ প্রার্থীকে নিয়ে তার বৈঠক এবং প্রশাসনের তান্ডবের বিষয়টি সবার কাছে এখন পরিস্কার। তবে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান ৩ প্রার্থীর সঙ্গে আলাদা করে কোন বৈঠক করেননি বলে দাবি করেন এবং নির্বাচনে কারা প্রার্থী হয়েছে সেটিও জানেননা বলে সাংবাদিকদের জানান।
মন্তব্য করুন