স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির আধুনিকীকরণ হয়নি বরং জনসংখ্যার নিরিখে যে ব্যবস্থাটুকু আছে তা যেমন অপ্রতুল, তেমন শোচনীয়। ‘অসাধারণ’ মানুষের কথা বলছি না, তাঁরা ভাগ্যবান। অর্থ ও পদের জোরে স্বদেশে এবং বিদেশে আধুনিক চিকিৎসার সবটুকুই গ্রহণ করতে পারেন তারা। সাধারণত বাংলাদেশি বলতে যাদের বুঝায়, কী গ্রামে কী শহরে, তাদের জন্য আয়োজিত চিকিৎসা ব্যবস্থা সারাদেশে বিভিন্ন রকম। এ সম্বন্ধে কোনো যোগ্যতা ও পারদর্শিতার মাপকাঠি নেই- ধর্ম, অর্থ থেকে শুরু করে রাজনীতি পর্যন্ত কোনো বিচার বিধান থাকলেও গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্য সম্বন্ধে আমাদের ভাবনা চিন্তা খুবই সীমাবদ্ধ। সুস্বাস্থ্য বলতে শিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত, ধনী থেকে দরিদ্র এবং সচেতন থেকে নির্লিপ্ত মানুষ প্রায় সকলেই রোগ বা অসুখ হলে উপযুক্ত বা সাধ্যমত চিকিৎসার কথা ভাবে।
রোগ প্রতিষেধক বা রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি সরকারি প্রচার অভিযান বা আলোচনাসভাতেই অধিকাংশ সময়ে সীমাবদ্ধ থাকে। সরকারি অর্থ ও বলে বলীয়ান কিছু পন্ডিতের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দেশ থেকে ম্যালেরিয়া, বসন্ত, এইডস বা শিশু মৃত্যুর হার কতটা কমিয়েছে, তার হদিস বা হিসাব মেলা কঠিন। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের জটিল ব্যাধির সমস্যা একমাত্র কপাল নির্ভর! অশিক্ষিত সাধারণ নিম্নবিত্ত, অর্ধশিক্ষিত বা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তের মানুষও রোগ ভোগ বা রোগ-যন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকার বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলে মনে করে না। অসুখ দেহের বা মনের হতেই পারে, যাতে না হয় তার জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যবিধি পালন করা দরকার। অসুখ হলে চিকিৎসার প্রয়োজন। আর তার জন্যও কমবেশি খরচ আছে। একথা আমরা কি মনে রাখি? আমরা ধনী দরিদ্র সকলেই সংসার নির্বাহের জন্য ‘বাজেট’ করি, কিন্তু তার মধ্যে সরকারি বাজেটের মত চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ প্রায় থাকেই না। তাই টিভি থেকে শুরু করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বা খাওয়া-পরা, ফূর্তি আহ্লাদের জন্য ব্যয় বরাদ্দ থাকলেও হঠাৎ অসুখ-বিসুখের খরচ সামলানো কষ্টকর হয়ে উঠে। আবার দেখা যায়, নিজের পাশে অবস্থিত সরকারি হাসপাতালে পাঁচ-দশ টাকা দিয়ে টিকেট করতে হলে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা অথবা ঔষধ কিনতে হলে আমরা রেগে যাই, সরকারের সমালোচনায় মুখর হই। কিন্তু আমাদের অনেকে অন্য দেশে চিকিৎসা করাতে অকৃপণ হাতে খরচ করি। প্রতিবেশী দেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেককেই অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। ওখানে চিকিৎসা সুবিধা ও কর্মীদের ব্যবহার সব সময় যে অনুকূল তা নয়। সে অভিজ্ঞতা কিন্তু অনেকেরই আছে। তবে সে নিয়ে বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষের এখনও অধিকাংশ চিকিৎসককেই তাদের ভরসা বলেই মনে করেন। তাদের চাহিদা বিনে পয়সায় বা কম খরচে চিকিৎসা। আপনারা গরিবকে না দেখলে কে দেখবে, এ ধরনের নির্ভেজাল মনোভাব নিয়েই তারা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। কিন্তু এরাই অন্য কোনো অসুবিধা বা বিপদের সময় উকিল সাহেব থেকে শুরু করে পলিটিশিয়ানদের এ সহজ সরল সত্যটুকু বোঝতে পারে না। এ কথা ঠিক বেশ ক’বছর আগেও অনেক প্রথিতযশা চিকিৎসক বিনা পারিশ্রমিক বা অল্প টাকার বিনিময়ে দুঃস্থ মানুষের চিকিৎসা করত। সত্যি বলতে কি ‘ভোগবাদ’ বা ‘পণ্য মানসিকতা’ তখন সমাজকে তেমন একটা গ্রাস করেনি। আজকের দিনে চাহিদার শেষ নেই। চিকিৎসকরা অন্য কোনো গ্রহের বাসিন্দা না, তারাও রক্ত মাংসের জীব আমাদের সমাজেরই অংশবিশেষ। তাই তাদেরও চাহিদা, আশা আকাঙ্খা বেড়েছে। আর এখান থেকেই শুরু হয়েছে দ্ব›দ্ব। আগেকার দিনে অনেক চিকিৎসক ‘সাধারণ চিকিৎসক’ বা ‘পারিবারিক চিকিৎসক’ হিসাবে পসার লাভ করেছে, তাদের বাবা মায়েরা বলেছে, ‘বাবা গরিব-দুঃখীর বন্ধু হয়ে থেকে তাদের সেবা করবে’। তারা অনেকেই প্রাণপাত পরিশ্রম করে, নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ ভুলে হাটেবাজারের চিকিৎসক হিসেবে নিজের গ্রাম বা শহরতলীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘প্রাণ’ ছিল। কিন্তু আজকের দিনে চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও নতুনত্বের যুগে চিকিৎসা-পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে। আজকাল ‘সাধারণ চিকিৎসক’, ‘গৃহ বা পারিবারিক চিকিৎসক’দের উপর ভরসা উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষেরা করে না। ‘ডিগ্রি ডিপ্লোমা’ বা ‘স্পেশালইজেশন’ নির্ভর মানসিকতা ‘সাধারণ চিকিৎসকদের’ হীনবল বা অনেক সময় ‘দায়সারা’ বিশেষজ্ঞ নির্ভর করে থাকে। একজন চিকিৎসককে অনেকেই ‘পারিবারিক বন্ধু বা ‘শুভানুধ্যায়ী’ হিসেবে পেতে চায়। কিন্তু আজকাল এ ধরনের পারিবারিক চিকিৎসকের বড়ই অভাব।
এ বিষয়ে সতর্ক হবার সময় এসেছে। প্রশংসা, প্রতিপত্তি ও আর্থিক স্বচ্ছলতা অনেকের মাথা ঘুরিয়ে দেয়, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তদের হঠাৎ করে অর্থবান হওয়া বিপদজনক অবস্থার সৃষ্টি করে। ধরাকে সরাজ্ঞান করে তারা বিপদের সৃষ্টি করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যেমন শরীরবিদ্যা, ভেষজবিদ্যা প্রভৃতি শিখতে হয় তেমনি রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আচার-ব্যবহারও শিখে নেয়া অপরিহার্য। অনেক চিকিৎসকের ব্যবহার ও আন্তরিকতা এমনকি উপস্থিতিতেও রোগ-যন্ত্রণার সাময়িক উপশম হয়। একে বলা হয় ‘হিলিং টাচ’। যারা কৃতি ও সুচিকিৎসক তাঁদের এ গুণ থাকে। আগেকার দিনে স্বনামধন্য চিকিৎসকেরা শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের শুধু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি শিখাত না, তাঁরা সত্যিকারের ‘পেশাগত চিকিৎসক’ তৈরি করত। চিকিৎসা শাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলা হলেও বিজ্ঞানের সব ধর্ম বা গুণাগুণ চিকিৎসা শাস্ত্রে থাকে না। একই ঔষধ যার গুণগত মান পরীক্ষিত তা সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য বা একই কাজ করে না। এর জন্য অতি বড় চিকিৎসককে ভাগ্য নির্ভর বা নিয়তির উপর ভরসা করে চিকিৎসা করতে হয়। অধিকাংশ রোগী কিন্তু একথা বোঝে বা জানে। কিছু সংখ্যক অবুঝ রোগী বা আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব এ ব্যাপারে চিকিৎসককে দায়ী করে থাকে। একে পেশাগত অসুবিধা বলে মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্রতিটি পেশাতে কিছু অসুবিধা থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মানুষের মূল্যবান জীবন নিয়ে কাজ সুতরাং সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রবেশের আগে এ বিষয়ে কাউন্সেলিং খুবই প্রয়োজন। চিকিৎসক হতে হলে ছাত্র অবস্থা থেকে মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন। খুব সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি, গাড়ি, প্রচার বাড়ানোর ঝোঁক এ প্রজন্মের কিছু নবীন চিকিৎসককে বিভ্রান্ত করছে। তাদের দোষ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ আদর্শ কোথায়? সহজ বা কঠিন যে রোগ হোক না কেন রোগীর ও আত্মীয় স্বজনের চিকিৎসক ও চিকিৎসার প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় চিড় ধরেছে। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, সহানুভূতি, সেবা ও সামাজিক সম্বন্ধ আইনের চোখ রাঙ্গানি বা কোর্টের নির্দেশ কিংবা মেডিকেল কাউন্সিলের বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসা সেবা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য শোনা যায়।
মানুষের সুচিকিৎসা ও রোগ নিরাময়ের প্রত্যাশা স্বাভাবিক নিয়মে বেড়েছে। অনেক অসুখ আগে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া হত, কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির জন্য দৈব বা ভাগ্যের দোহাই দিয়ে রোগ ভোগের অবসান বা শেষকে মৃত্যু বলে মেনে নিতে মন চায় না। এর জন্য অসুখ বা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক সময় চিকিৎসককে দোষারোপ করা হয়। চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার এখন প্রতিষ্ঠিত। এ সব ক্ষেত্রে মেডিকেল কাউন্সিল চিকিৎসকের চিকিৎসা করার আইনী ছাড়পত্র বাতিল করতে পারে। এ বিষয়ে দ্বিধা বা মতবিরোধ থাকলেও কিছু করার নেই। তবে সাধারণ ও প্রভাবশালী সব মানুষকে এ বিষয়ে সুচিন্তিত ভাবনা-চিন্তা করে তবে মতামত প্রদান বা মন্তব্য করতে হবে। যে কোনো চিকিৎসকই তা সে ডিগ্রিধারী অথবা হাতুড়ে চিকিৎসক যেই হোক না কেন, রোগীর রোগ মুক্তির চেষ্টা করে। রোগীকে মেরে ফেলার বা হত্যা করার কোনো অভিপ্রায় কোনো ডাক্তারের থাকে না। কারণ রোগীকে ভালো করতে পারলে পসার বাড়বে, অর্থ উপার্জন হবে। তবে অজ্ঞতা বা ভুল চিকিৎসার জন্য রোগীর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যর্থতা প্রমাণ হলে শাস্তি কি এড়ানো যাবে? চিকিৎসকেরা তো আর আইনের ঊর্ধ্বে নন। অবশ্য যে কোনো মৃত্যু হলেই চিকিৎসককে হয়রানি বা ভয় দেখালে সংকট বাড়বে, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। যারা অর্থবান ও ক্ষমতাবান তারা এদেশের সর্বোত্তম চিকিৎসা, প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে নেবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? অনেকের আশংকা, মেডিকেল কাউন্সিল বা কোর্টের ভয়ে চিকিৎসকেরা ঝুঁকি নেবে না। কথায় কথায় ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলবে হয়ত কিন্তু সর্বাধুনিক চিকিৎসা আশা করলে কিছু পরীক্ষা, এক্স-রে, সনোগ্রাফী তো করতেই হবে। রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনদেরও বুঝতে হবে প্রথমে রোগ নির্ণয় ও পরে চিকিৎসা নাকি রোগীর রোগ লক্ষণের উপশম, কোনোটা জরুরি। অনেক রোগে প্রাথমিক লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়। আবার কিছু অসুখে বেশ কিছুদিন পর প্রকৃত রোগ ধরা পড়ে। সুতরাং চিকিৎসকদের ‘ক্লিনিক্যাল আই’ ও ভাবনা চিন্তার উপর নির্ভর করতে গেলে রোগ নির্ণয়ের জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতেই হবে। আগেই বলা হয়েছে, অর্থ ব্যয় হবে না অথচ সর্বাধুনিক চিকিৎসা হবে, তা হয় না। চিকিৎসককেও এ ব্যাপারটা রোগী ও তার সঙ্গের লোককে বুঝিয়ে বলে দিতে হবে। এজন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। একথা ঠিক যে সব চিকিৎসক রোগের সব কথা খুলে বলে। শল্য চিকিৎসার ভালো মন্দ দিক বুঝিয়ে দিলে অনেক সময় রোগী ও তার সঙ্গীরা তাতে ভয়ে অন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চলে যায়। তাতে সাময়িক আর্থিক ক্ষতি হয়ত হয়, কিন্তু নিজের কাছে পরিষ্কার থাকা যায়।
চিকিৎসকের মানসিক দৃঢ়তা ও সততা এবং রোগীর প্রতি দায়বদ্ধতা অনেক বড়। এখানে লোভের রাশ টেনে ধরা প্রয়োজন। চিকিৎসা এমন একটি পেশা যেখানে চিকিৎসক ও তার সহকারী, সঙ্গী-সাথীদের প্রভাবিত করার ঝোঁক অনেকের মধ্যে দেখা যায়। অনেক প্রতিভাবান সুচিকিৎসককে এক শ্রেণির মানুষ প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। ব্যবসায়িক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ভেবে ঔষধ প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্মচারী থেকে শুরু করে ল্যাবরেটরি ইত্যাদির কর্মী, এলাকার রাজনৈতিক নেতা বা সরকারী আমলা সকলেই এ সুযোগ নিয়ে থাকে। অর্থ ও প্রতিপত্তির লোভ দেখিয়ে তারা চিকিৎসকদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে থাকে। সহজে উঠতি বা প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকেরা এদের হাতের মুঠোয় চলে যায়। এক চিকিৎসকের কাছে অপর চিকিৎসকের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের কুৎসা রটনা করা খুবই গর্হিত কাজ। পরচর্চা ও পরনিন্দা রোগে অনেক চিকিৎসক, এ ভাবনা ও ধারণা পাল্টাবার সময় এসেছে। সৎভাবে, ভালভাবে পেশাদার চিকিৎসক হিসাবে কাজ করার কিছু অসুবিধা আছে কিন্তু তার জন্য গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না। দুর্বলতার সুযোগ অনেকেই নেবে, এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দুর্ভাগ্যবশতঃ নিজের পদ ও প্রমোশন বজায় রাখার জন্য অনেক সরকারী চিকিৎসক, মন্ত্রী-আমলাদের হাতের ক্রীড়নক হয়ে যায়। এমনকি ‘নন প্র্যাকটিসিং ভাতা’ নিয়ে প্র্যাকটিসও করে। এদের কাছে সরকারি উচ্চাধিকারীরা পর্যন্ত টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে থাকে। সাদা কাগজে ব্যবস্থাপত্র লেখার প্রবণতা, অতিরিক্ত ক্ষমতা ও অর্থের লোভ কিছু চিকিৎসককে স্বার্থান্বেষী ক্ষমতাবান মানুষের হাতে মুঠোয় বন্দী করে ফেলেছে। তাদের অবস্থা সত্যিই করুণ। অবশ্য প্রতিটি পেশাতে ব্যক্তি বিশেষের নিজের মানসিকতা, ইচ্ছা-অনিচ্ছার দাম আছে। সে ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক কীভাবে নিজের জীবন ধারণ করবেন তা তাঁর সম্পূর্ণ নিজের এক্তিয়ার। তবে প্রফেশনালিজম ও কমার্শিয়ালিজমের পার্থক্য মনে রাখা উচিত। চিকিৎসকদের প্রতি সাধারণ মানুষের যেমন শ্রদ্ধা, ভালবাসা আছে তেমনি কৌতূহলও থাকে। তাদের অর্থ উপার্জন, জীবনযাত্রা বা ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে উৎসাহ কখনো এত বেশি হয় যে, অপপ্রচার ও অবিশ্বাস, দ্বিধা ও দ্ব›দ্ব আর যাই হোক চিকিৎসা সেবাকে উন্নত করতে পারে না। এতে হিংসা-বিদ্বেষও তৈরি হয়। নিছক হিংসা বা আক্রোশের জন্য অনেকে একজন সুনামি চিকিৎসককে অপদস্থ ও লোক সম্মুখে হেনস্থা করে থাকে এমন নজিরও আমাদের সমাজে আছে।
এসব কিছুকে সহ্য করে পেশাগত ন্যায়পরায়ণতা ও সততা বজায় রেখে চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যের ভুল বা সমালোচনা থেকে নিজেকে সঠিক রাখার দিকে নজর দিলে উপকার হবে। বর্তমানে চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের এ সাময়িক সমালোচনা ও বিরূপ মন্তব্যে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। দেশ, সমাজ ও কালের পরিবর্তন হচ্ছে। ভোগবাদী ও পণ্যনির্ভর জীবনযাত্রা এবং মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ও উৎকন্ঠাময় জটিল জীবনধারা অনেক কিছুর সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা পাল্টে দিচ্ছে। চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের কাছে স্বাভাবিক কারণে মানুষের প্রত্যাশা, আশা-আকাঙ্খা পরিবর্তিত হয়েছে। চিকিৎসক তার সাময়িক ভুলের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াবে, প্রয়োজনে জেল জরিমানা দুই-ই তার প্রাপ্য। একথা ভাবতে বা মেনে নিতে মন চায় না, কিন্তু চিকিৎসার এ অসুখে মনকে এ নির্মম সত্য মেনে নিতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।