অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে জনবল না বাড়ায় এবং কতিপয় চিকিৎসকের অমানবিকতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে একজনও নৈশ প্রহরী না থাকায় অরক্ষরিত হয়ে পড়েছে হাসপাতালটি। গভীর রাত অবধি চলছে মাদকসেবি ও বখাটেদের আনাগোনা। ৯ জন পরিচ্ছনতাকর্মী থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালটিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে মাত্র ২ জন। বাধ্য হয়ে ৫ জন চিকিৎসক তাদের পকেটের টাকায় ৫ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। এদিকে কতিপয় চিকিৎসকদের অমানবিক টেস্ট বাণিজ্যের অভিযোগে শাস্তিমূলক বদলি করলেও ক্ষমতার জোরে তারা স্ব-স্থানে বহাল রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের ২ জন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় কতিপয় নেতার অব্যাহত তদবিরে তাদের বহাল রাখতে বাধ্য হয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সরেজমিনে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি ডাক্তারের চেম্বারের ভেতরে ও বাইরে ৩/৪ জন করে দালাল নিয়োজিত রয়েছে। ডাক্তারদের এ্যাসিস্ট্যান্ট পরিচয়ে এরা হাসপাতালে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যদিও এদের প্রত্যেকে কোন না কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়োগকৃত বলে সূত্র দাবি করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নওয়াপাড়ার ৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রত্যেকটির সাথে একজন থেকে একাধিক ডাক্তার সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। কেউ কেউ হাসপাতালের ডিউটি শেষে এসকল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করেন আবার কেউ কেউ এসকল প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি মালিকানা অংশিদারও রয়েছেন। ফলে রোগীদের ইচ্ছেমত স্ব-স্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনকি একদিনের জ্বর কিংবা ডায়ারিয়ার রোগী হাসপাতালে আসলেও তাদের প্রথমেই ২ থেকে ৪ হাজার টাকার টেস্ট ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। জানা যায়, হাসপাতালের প্যাথলজিতে সরকারিভাবে ২৫ প্রকারের টেস্টের সুযোগ থাকলেও এসকল টেস্ট গুলো করাতেও বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাচ্ছেন কতিপয় চিকিৎসক। এমনকি ভর্তি রোগীদেরও হাসপাতালে টেস্টের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হচ্ছে।
আর এসকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর নির্দিষ্ট কোন রেট চার্ট না থাকায় যে যার ইচ্ছেমত রোগীদের গলা কাটছে। গত ৮ জুলাই ২১ মাস বয়সী মুস্তাকিন নামে এক শিশু জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তার অসহায় মা। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তার চিকিৎসা চললেও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্যাডে লেখা হাসপাতালের জনৈক চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে তার চিকিৎসা চলতে দেখা যায়। ওই চিকিৎসক শিশুটির জন্য এক্সরে, সিবিসি এণ্ড ইএসআর, ইউরিন আর/এম/ই, ওয়াইডাল টেস্টের পরামর্শ দেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় তিনি চারটি পরীক্ষাই প্রেসক্রিপশনের প্যাডে উল্লেখিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করিয়েছেন। যদিও এর মধ্যে তিনটি পরীক্ষার সুযোগ হাসপাতালের প্যাথলজিতে রয়েছে যেখানে তার খরচ হতো মাত্র ২শ’ ৫০ টাকা। অথচ তাকে ২ হাজার টাকা খোয়াতে হয়েছে। এছাড়া তাকে ২শ’৫০ টাকা মূল্যের সেফটন ইঞ্জেকশনসহ অনেক দামি দামি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। তথাপি ৬ দিনেও তার বাচ্চার জ্বর ভালো না হওয়ায় তিনি মনের দুঃখে রিলিজ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি চলে যান। এ অবস্থা মোস্তাকিনের মতো হাজারও রোগীর। যা দেখার কেউ নেই। সার্বিক বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি এসকল অভিযোগ হাসপাতালটিতে বিদ্যমান রয়েছে যার অনেক কিছু তিনি ওয়াকিবহাল বলে স্বীকার করে অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, এসকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কারনে তিনি নানাভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। এবং এখনও তাকে নানামুখি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এক প্রশ্নে এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, তিনি সকল বিষয় জেলা সিভিল সার্জনকে জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন