বনানী অগ্নিকান্ডে নিহত আহম্মেদ জাফরের গ্রামের বাড়ী নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে চলছে শোকের মাতম চলছে। উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের নবীনগরে গ্রামবাসী শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। নিহত আহম্মেদ জাফর প্রায় ৩০ বছর পূর্বেই সোনারগাঁওয়ের বাড়ী ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু সোনারগাঁওয়ের শম্ভপুরা ইউনিয়নের নবীনগর ও আশেপাশের কোন ব্যক্তি মারা গেলে এবং কারো কোন সমস্যায় সবসময় পাশে থাকতেন আহম্মদ জাফর। সোনালি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার থাকাকালীন এবং বর্তমানে বেসরকারি চাকরি করা অবস্থায় সরকারি বন্ধ পেলেই চলে আসতেন সোনারগাঁওয়ে। খোঁজ নিতেন এলাকার লোকজনের। নিজ গ্রামের অবহেলিত মানুষের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন ছিলো আহম্মদ জাফরের। তার মৃত্যুর সাথে সাথে তার বুনো স্বপ্নগুলো শেষ হয়ে গেছে নবীনগর গ্রামবাসীর।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে শম্ভপুরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আহম্মদ জাফরের পরিবারের লোকজন বাড়িতে আসলে তার গ্রামবাসী বাড়ীতে ভিড় করে। আহম্মদ জাফরের মৃত্যুর পর যেন তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারছেন না। গ্রামের কারো কোন বিপদ হলেই চলে আসতেন আহম্মদ জাফর। জাফরের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেন গ্রামবাসী। এসময় গ্রামবাসী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অনেকেই আবেক আপ্লুত হয়ে আহম্মেদ জাফরের জন্য দোয়া কামনা করেন।
কথা হয় আহম্মদ জাফরের চাচী বর্তমান শম্ভপুরা ইউনিয়নের সংরক্ষিত সদস্য শাহনাজ বেগমের সাথে। তিনি জানায়, নবীনগর গ্রামের সাথে তার আত্মার সম্পর্ক ছিলো। গ্রামের কারো কোন বিপদে চলে আসতেন আহম্মদ জাফর। যে কোন ভালো কাজে গ্রামবাসী তাকে কাছে পেতো। তাই আমরা তাকে ভ‚লতে পারছি না। সবাই আহম্মদ জাফরের জন্য দোয়া করবেন। এখন আমাদের এতটুকো চাওয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাকরির সুবাধে আহম্মেদ জাফর ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সোনারগাঁওয়ের নবীনগর গ্রাম ছেড়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের মোহম্মেদীয়া হাউজিংয়ে স্ব-পরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সোনারগাঁওয়ে নবীনগরে তাদের পৈত্রিক ভিটা থাকলেও এখানে কেউ থাকেননা।
তিনি এলাকায় বসবাস না করলেও কারো মৃত্যু সংবাদ শুনলে এলাকায় ছুটে আসতেন। তাছাড়া বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানেও নিয়মিত আসতেন। ব্যক্তি জীবনে আহম্মেদ জাফর অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী ছিলেন। আহম্মেদ জাফরের একমাত্র সন্তান সোহেব আহামেদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে পড়াশোনা করছেন।
অগ্নিকান্ডে নিহত আহম্মেদ জাফরের ভাতিজা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তার চাচা সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে চলে যান। বর্তমানে তিনি এলপিআরে রয়েছেন। মাত্র তিন মাস আগে তিনি হাসিফ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারী সংস্থায় ট্রান্সপোর্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। বনানীর এফ আর টাওয়ারের ৮ম তলায় তার অফিস ছিলো। অগ্নিকান্ডের সময় তিনি ওই অফিসেই অবস্থান করছিলেন। আমরা টিভি স্কলে অগ্নিকান্ডের সংবাদ দেখে আহম্মদ জাফরের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা তাকে ফোনে পাননি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ সনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা। সবাই আমার চাচার জন্য দোয়া করবেন।
আহম্মেদ জাফরের আরেক ভাতিজা জাকির হোসেন জানান, সাদা মনের মানুষ আহম্মদ জাফর চাকরি জীবনে একজন সৎ ও মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন।
আহম্মদ জাফরের স্ত্রী শম্পা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। কোন কথা বলতে পারছিলেন না। তিনি আহম্মদ জাফরের জন্য দোয়া চান। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বড় একটি বিল্ডিংয়ে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নেই, সরকার তখন কি করলো। নিউজ করে কি হবে, প্রধানমন্ত্রীতো আমাদের কোন সাহায্য করবেন না। আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনদিন পূরনের নয়।
উল্লেখ, গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত হয় সোনারগাঁওয়ের নবীনগর গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে আহম্মদ জাফর। তিনি ওই ভবনের ৮ তলায় হাসিফ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারী সংস্থায় ট্রান্সপোর্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে চাকুরিতে কর্মরত ছিলেন।
এফআর টাওয়ারে তদন্ত প্রতিবেদন দিল ত্রাণ মন্ত্রণালয়
বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আজ সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রতিবেদন নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। দেখার পরে আমরা এটা প্রকাশ করা হবে।
গতকাল রোববার বিকেলে সচিবালয়ে কমিটির সদস্য সচিব ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মাহবুব আলম তালুকদার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামালের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র শাহ কামাল ইনকিলাবকে তথ্য জানান।
সচিব বলেন, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আমি তদন্ত প্রতিবেদনটি পেয়েছি। শাহ কামাল বলেন, আমরা এটা পড়ে ব্যবস্থা নেব। আজ সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রতবেদন নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে। পরে প্রকাশ করব।
গত ২৮ মার্চ দুপুরে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন এবং ১৩০ জন আহত হন। ওই দিনই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফয়জুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
কমিটির আহ্বায়ক ফয়জুর রহমান বলেন, ৩ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্যই আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু সচিব বিদেশে থাকায় আমরা প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করতে পারিনি। সচিব আজই অফিসে যোগ দিয়েছেন, তাই তাকে আজই প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করা হয়েছে। আমি ঢাকার বাইরে থাকায়, কমিটির সদস্য সচিব এটা হস্তান্তর করেছেন।
অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান বলেন, প্রতিবেদনে কী আছে তা জানানোর দায়িত্ব সচিবের। আমাদের দায়িত্ব ছিল তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রস্তত করা। এর আগে গতকাল আরো একটি তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন