শরীয়তপুরে ভিজিডি কার্ডধারী প্রত্যেকের কাছ থেকে সঞ্চয় হিসেবে প্রতি মাসে ২২৫ টাকা করে জমা রাখা হয়। মাদারীপুর নারী উন্নয়ন সংস্থা (মানুস) সঞ্চয় হিসেবে এ টাকা সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা করে। ভিজিডি প্রকল্পের মেয়াদ শেষে এ সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ দেয়ার নিয়ম রয়েছে।
গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ দেয়ার কথা ছিল। কথা অনুযায়ী ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ড থেকে সুবিধাভোগীরা মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ভীড় করে। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের ক্রেডিট সুপারভাইজার মহসীন উদ্দিন ও ট্রেড ইন্সট্রাক্টর ইলিয়াস হোসেন ১০টা থেকে সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ দিতে শুরু করে। ২৬১ জনের মধ্যে ৭২ জনকে টাকা ফেরৎ দিতেই সুবিধাভোগীরা ব্যাপক অনিয়ম লক্ষ করেন।
সুবিধা ভোগীরা বুঝতে পারে ২৪ মাসে তারা ৫ হাজার ৪ শত টাকা সঞ্চয় করে কেউ কেউ তিন হাজারের চাইতেও কম টাকা ফেরত পাচ্ছেন। তখন সুবিধাভোগীরা প্রথমে মানুস নামে এনজিও কর্মী ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। কোন সুবিধা না পেয়ে তারা সংবাদকর্মীদের বিষয়টি অবগত করেন। সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হয়ে পাহাড় সমান অনিয়ম লক্ষ করে।
পরিলক্ষিত হয়, ভিজিডি কার্ড ও এনজিওর সঞ্চয় জমা কার্ড একই সময়ে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিবার চাল সংগ্রহের সময় সুবিধাভোগীরা ২২৫ টাকা জমা করেছে। সেই ভিজিডি কার্ড পুরাতন, ছেড়া ও ময়লা হয়ে আছে কিন্তু এনজিও থেকে দেয়া সঞ্চয় কার্ড অব্যবহৃত ও নতুন চকচকে মনে হচ্ছে। ভিজিডি কার্ড ও এনজিও সঞ্চয় কার্ডের মধ্যে সঞ্চয়ের টাকার অংকে ৫ শত থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত হেরফের রয়েছে।
এনজিও কর্মী সাদিয়া জানায়, সে একা সঞ্চয়ের টাকা তোলেনি। এ টাকা সাবেক ইউপি সচিব জুয়েল পারভেজ ও বর্তমান সচিব আলী আহম্মেদও তুলেছেন। এ বিষয়ে জুয়েল পারভেজের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সে ১৪ মাস পূর্বে আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চলে গেছে। তখন বর্তমান সচিবকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। তার কোন দায়-দায়িত্ব নাই। বর্তমান সচিব আলী আহম্মেদ বলেন, সে অল্প কিছুদিন এ দায়িত্ব পালন করেছে। তখন ইউপি মেম্বাররাও টাকা তুলছে। কোথা থেকে কোন অনিয়ম হয়েছে তা সে বলতে পারবে না।
সুবিধাভোগী চর নিয়ামতপুর গ্রামের মজিদ খার স্ত্রী পারভীন জানায়, সে ৫ হাজার ৪ শত টাকা সঞ্চয় জমা করেছে। সঞ্চয়ের টাকা তুলতে এসে সে ৩ হাজার ৫৭০ টাকা ফেরত পেয়েছে। চর জাদবপুর গ্রামের রাজ্জাক খার স্ত্রী ফাহিমা, চর নিয়ামতপুর গ্রামের সিরাজ খার স্ত্রী রেনু একই অভিযোগ করেন।
সংবাদ পেয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খাদীজাতুস আসমা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সে এনজিওর সঞ্চয় বই ও ভিজিডি কার্ড কব্জা করেছে। এ বিষয়ে এনজিওর নির্বাহী পরিচালক, এনজিও কর্মী ও দায়িত্বরত উভয় ইউপি সচিব জড়িত আছে বলে জানান। মোট কত টাকা হেরফের হয়েছে তা নির্ণয় করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান। এ সময় শাহানাজ বেগমের ২৩৬ নম্বর ভিজিডি কার্ডের সাথে এনজিওর টাকা সঞ্চয়ের কার্ড তুলনা করা হয়। তখন প্রায় ৫ শত টাকারও বেশী হেরফের লক্ষ করা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন