আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : ১২ হাজার লোকের কর্র্মসংস্থানের উৎস খুলনা টেক্সটাইল পল্লী স্থাপন প্রক্রিয়াটি মামলা জটের কারণে অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও আইনি জটিলতার কারণে হাজার হাজার শ্রমিকদের আশা আকাক্সক্ষা বালির বাঁধের মত তছনছ হয়ে যাচ্ছে। তবু এটি মহাজোট সরকারের ওয়াদা। তাই তীর্থের কাকের মত চেয়ে আছে অসহায় শ্রমিক কর্মচারীরা। কবে মিল চালু হবে তা নিয়ে দারুণ সংসয়ে রয়েছে তারা। অথচ কথা রাখছে না কেউ। গত ৭ বছরে আশ্বাসের বাণী দিলেও কথা রাখেনি সরকার। তথাপি বুক বেঁধে আছে শ্রমিক পরিবারগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ১৯৯৩ সালে খুলনা টেক্সটাইল মিলটি বন্ধের পর ১২ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মিলের জমিতে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে ওই প্রকল্পটি তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেন। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও স্বাধিনতা পূর্বে ব্যাংক ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে রূপালী ব্যাংক একটি মামলা দায়ের করে। এতে বন্ধ হয়ে যায় টেক্সটাইল পল্লী স্থাপন কাজ। পরে মিলের সাথে রূপালী ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে চুক্তির মাধ্যমে সেটি নিষ্পত্তি হয়। এরপর বর্তমান সরকার আমলে আবারও প্রকল্পের কার্যক্রেম শুরু হয়। ওই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে একাধিকবার টেন্ডার দিয়ে মিলের মূল ভবন, মেশিনারীজসহ গাছপালা বিক্রি করা হয়। মালামাল বিক্রি করে সরকার এই মিল থেকে ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সেই সাথে ইতোমধ্যে মিলের সর্বমোট ২৫.৬৩ একর জমিতে ৪০টি প্লট করে ৩৭টি বরাদ্দ দেয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয়। বাকি তিনটি প্লটে টেক্সটাইল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এভাবে যখন কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যয়ে পৌঁছে তখন মাহমুদ আলী মৃধা নামের জনৈক ব্যক্তি পাওনার দাবিতে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নম্বর ৯৮৮০/২০১০। ওই রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের এক নির্দেশনায় খুলনা টেক্সটাইল মিলের সম্পত্তি এবং শেয়ার হস্তাস্তর করা থেকে সরকারকে বিরত থাকার অন্তর্বর্তী আদেশ দেয়া হয়। সম্প্রতি হাইকোর্ট ওই আদেশ দিলেও তার আগেই প্লট বরাদ্দ দেয়া ছাড়া সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার আলোকে এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি সম্প্রতি বৈঠক ডেকে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী স্থাপন প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন বিটিএমসি’র একটি সূত্রমতে, মামলাটিতে লড়ার জন্য ইতোমধ্যে এ্যাড. ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি মামলায় সরকারি পক্ষকে বিজয়ী করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন শুনানী শেষে আদালতের আদেশের পরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের এবং বিটিএমসির আন্তরিকতা সত্ত্বেও বার বার নানা কারণে হোচট খেতে হচ্ছে। মিলটি চালু থাকাবস্থায় পাকিস্তান আমলে তিনি শেয়ার কিনেছিলেন। কিন্তু ওই শেয়ার পরে তিনি রেজিস্ট্রি করেননি। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মিলটি রাষ্ট্রয়ত্ত করার পর আন্যান্য শেয়ার হোল্ডারদের পাওনা পরিশোধ করা হলেও মাহমুদ আলী মৃধার টাকা পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। রেজিস্ট্রিবিহীন শেয়ার হওয়ার মালিকানা না থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ওইসময় বিষয়টি মীমাংসা হলেও দীর্ঘদিন পর মালিকানার দাবিতে হাইকোর্টে রিট করার বিষয়টি নিয়েও অনেকের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনাকে বঞ্চিত রাখার জন্য এটি একটি ষড়যন্ত্র মাত্র। দীর্ঘদিন আগের এসব বিষয় আমলে আনা উচিত নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বঞ্চিত খুলনাবাসীর সাথে বার বার এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা হলে তার পরিণাম মোটেই শুভ হবে না। এজন্য তিনি সরকারের কড়া নজরদারি দাবি করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায়ের চেষ্টায় খুলনা নিউমার্কেটের পশ্চিম পার্শ্বের ২০৫.৯৯ একর জমিতে ১৯৩১ সালে এ মিলটি স্থাপন করা হয়। প্রথমে এ মিলের নাম ছিল এপিসি কটন মিল। প্রথমে লাভজনক থাকলেও ১৯৮৬ সাল থেকে লোকসানের দিকে ধাবিত হতে থাকে এ মিলটি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন