বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উপ সম্পাদকীয়

নির্যাতন ও অপবাদ দিয়ে ইসলামী সংস্কৃতি মুছে ফেলা যাবে না

প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল আউয়াল ঠাকুর
কথাটা বলেছিলেন ভারতের চিত্রাভিনেত্রী শাবানা আজমী। বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পর হিন্দুত্ববাদীদের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের শিকার হওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, এই প্রথম আমি টের পেলাম আমি একজন মুসলমান। এই দাঙ্গার  বিবরণ ও বিশ্লেষণ দিতে গিয়ে ভারতীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছিল, দাঙ্গার ধরণ দেখে মনে হয় এটি কোন দক্ষ সার্জেনের অপারেশন। পাশের মুসলিম পরিবারটি আক্রান্ত হলেও হিন্দুুবাড়িতে সামান্য আঁচড়ও লাগেনি। এই দাঙ্গা নিয়ে পরবর্তীতেও অনেক আলোচনা হয়েছে। সে সময়ে যারা এই দাঙ্গার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারা তখন ভারতের ক্ষমতায় ছিলেন না। যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা টিকতে পারেননি। বাবরী মসজিদ অর্থাৎ ভারতে মোগল সা¤্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা স¤্রাট বাবরের প্রতিষ্ঠিত মসজিদটি যাতে টিকে না থাকে সেজন্যই এ দাঙ্গা করা হলেও এর তাৎপর্য অনেক গভীরে। অযোধ্যায় রামের জন্মভূমির প্রসঙ্গ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না হলেও এটা ঠিক যে, বাবরী মসজিদ এখন আর চালু নেই। স¤্রাট বাবরের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের উপর যে পরিকল্পিত হামলা হয়েছিল তা যে মূলত ভারত থেকে মুসলিম সংস্কৃতি বিদায় করার জন্যই সে কথাই ফুটে উঠেছিল শাবানা আজমীর কথায়। পারিবারিক নামের সংস্কৃতি ছাড়া শাবানা আজমী কতটা মুসলিম ছিলেন সে নিয়ে মূলত তিনি নিজেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তার ভাষাতেই। মসজিদ মুসলিম সংস্কৃতির অংশ। মুসলমানদের জন্য মসজিদ হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান। সে বিবেচনায় স¤্রাট বাবর এবং মসজিদ দুটো একত্র করলে প্রকৃত অবস্থা এই দাঁড়ায় যে, ভারত থেকে মুসলমানদের বিদায় করা তথা মুসলিম সংস্কৃতি রুখে দেয়াই হয়ত মূল লক্ষ্য ছিল। বর্তমান শাসকরা সেটাই করতে চাচ্ছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলমানরাই ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। আজ গরুর মতো একটি নির্বোধ প্রাণীকে দেবতা বিবেচনায় সেখানে মুসলমানদের উপর যে ধরনের অকথ্য নির্যাতন হচ্ছে সে বিবেচনায় শত শত বছর যে মুসলমানরা ভারত শাসন করেছেন তারা যদি চাইতেন বা ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন তাহলে হয়ত আজকের ভারতে কোন অমুসলিমই খুঁজে পাওয়া যেত না। যে সব প্রাণী মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ সেগুলো জবাই দেয়াকে কেন্দ্র করে যদি কোন ধরনের সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করতেন তাহলে হয়ত ভিন্ন বাস্তবতার সৃষ্টি হতো। কার্যত ইসলামে যেমনি এর অনুমোদন নেই তেমনি মুসলমানদের সংস্কৃতিতেও এর কোন উদাহরণ নেই। আর নেই বলেই দুনিয়াব্যাপী ইসলামী সংস্কৃতি মানুষের মুক্তির সোপান হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। আজকের দিনেও তার কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। এই বাংলাদেশের ইতিহাস খুঁজলেও যেমনি এর সূত্র-উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে তেমনি দুনিয়ার সর্বত্রই এর নজির বিদ্যমান। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে এ পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্যাতন করে বা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ইসলামের এতটুকু ক্ষতি তো করা যায়ইনি বরং তাতে ইসলামের প্রচার-প্রসারই ঘটেছে। দ্বীন ও সত্যের আহ্বান জানাতে গিয়ে নিজের জন্মভূমিতেই নির্যাতিত হয়ে আল্লাহর হুকুমে প্রিয় বন্ধু ও দোস্ত হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)কে সাথে নিয়ে  জন্মভূমি ত্যাগ করেছিলেন আল্লাহর নবী (সা.)। আবার যখন ফিরেছিলেন তখন মক্কা জয় করে ফিরেছিলেন। যারা এক সময় তাঁর বিরোধিতা করেছিলেন তারা পদানত হয়েছিল। আজও সে সব উদাহরণই ফিরে ফিরে আসছে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টিকে দলের অভ্যন্তরে ইসলাম বিদ্বেষের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে ব্রিটিশ মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সংগঠন মুসলিম কাউন্সিল  অব ব্রিটেন। সদ্যসমাপ্ত লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খানকে উদ্দেশ্য করে চালানো  বিদ্বেষমূলক প্রচারণার নিন্দা জানিয়ে ওই প্রচারণা  মুসলিম সম্প্রদায়কে আঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি। বলা প্রয়োজন নির্বাচনী প্রচারণায়  ইউরোপের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হওয়া সাদিক খানের বিরুদ্ধে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে তাকে বর্ণবিদ্বেষি এবং মৌলবাদের  সহযোগি হিসেবে উল্লেখ করে তার অধীনে লন্ডন নিরাপদ নয় বলে প্রচারণা চালায় কনজারভেটিভরা। এদিকে নির্বাচনী প্রচারণায়  দক্ষিণ লন্ডনের একজন ইমামকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী  আইএসের সমর্থক দাবি করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। মুসলিম কাউন্সিল অব  ব্রিটেনের সেক্রেটারি জেনারেল ডক্টর শুজা শফি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, দলের মধ্যে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে  দলটির একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা প্রয়োজন। ড. শুজা  প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে একইরকম পার্লামেন্টে  ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ড. শুজা বলেছেন ইমাম গনি চলমান ইসলাম বিদ্বেষের শিকার। এ ধরনের ঘটনা আমাদের রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমে একটি ক্যান্সার হিসেবে দেখা দিয়েছে -যা সরকারের কর্মকা-েও সংক্রামিত হয়েছে। উল্লেখ্য, এপ্রিলে  প্রশ্নোত্তর কালে  ক্যামেরুন বলেছিলেন, সাদিক খান নয়বার সুলায়মান গনির সাথে প্লাটফর্মে উঠেছেন। সুলায়মান গনি আইএসকে সমর্থন করেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ক্যামেরুন। ক্যামেরুনের ক্ষমা চাওয়াটা অনেকটাই অপরিহার্য করে দিয়েছে লন্ডনের ভোটাররা। তারা প্রধানমন্ত্রী বা তাদের অনুসারিদের কথা বিশ্বাস করেনি বরং বলা যায় এ প্রচারণা হয়ত সাদিক খানের পক্ষেই গিয়েছে। কারণ, সাদিক খান কে তা হয়ত স্পষ্ট হয়েছে। ক্যামেরুন যা বলেছেন তা যেমনি নতুন কিছু বলেননি তেমনি ভোটাররা যা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাকে সময়ের বিবেচনায় দায়িত্বশীলও সঠিক  সিদ্ধান্ত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্তের নির্মোহ বিশ্লেষণ খুবই  জরুরি হয়ে উঠেছে। লন্ডনের মেয়র পদে সাদিক খান নির্বাচিত হলেন এমন সময়ে যখন বিশ্বের কোন কোন মহলের মধ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে এমন ধারণা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যে মুসলমান নাম শুনলে বা আরবি ভাষায় কথা বলতে শুনলেও কারো কারো গাত্রদাহ শুরু হয়। ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে এ ধরনের অপপ্রচারের মূলে যারা রয়েছেন কার্যত তারাই এখন বিশ্ব সামাজে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে চলছেন। আজ লন্ডনে যা ঘটেছে তার শুরুটা কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছে। ব্যক্তিগত রোষকে রাষ্ট্রীয় রূপ দিতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা ইহুদিদের সমর্থনে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ আক্রমণ করেছিলেন ইরাকÑআফগানিস্তান। এ আলোচনা দীর্ঘ করার কোন প্রয়োজন এখন আর নেই। শুধু এটুকু বলা যে, ইরাক আক্রমণের জন্য যে মৌলিক উপাদানকে সাবেক প্রেসিডেন্ট পুঁজি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন মার্কিনী ও তাদের মিত্রদের ইরাক অগ্রাসনের পর প্রমাণিত হয়েছে তাদের বক্তব্য অসত্য। দুনিয়া প্রত্যক্ষ করেছে সাদ্দাম হোসেন সত্যি ছিলেন। এই যে সত্য-অসত্যের লড়াই এর প্রধান মাশুল কিন্তু দিচ্ছে মার্কিনীরাই। কার্যত মার্কিন অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। বিশ্বে মার্কিনীদের প্রভাব-প্রতিপত্তির মূলে যে অর্থনৈতিক জাল বিস্তৃত ছিল সে জায়গা ইতোমধ্যেই অন্যরা দখল করে নিয়েছে। সে কারণে সেখানকার নির্বাচনেও ইহুদি ইস্যু এখন অনেক বড় আকার ধারণ করেছে। এটা বলা অপ্রাসঙ্গিক নয় যে, সাদ্দাম হোসেন স্বাধীন প্যালেস্টাইনের আপোসহীন সমর্থক ছিলেন। ইসরাইল হয়ত মনে করেছিল সাদ্দাম হোসেন বা ৯/১১-এর ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্বে মুসলিম বিরোধী নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করা যাবে। এখন দেখা যাচ্ছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ইহুদী বিরোধিতা যেমনি উঠে আসছে তেমনি স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা উঠছে। ঐতিহাসিক নজির থেকে বলা যায়, ভারতবর্ষে স¤্রাট জাহাঙ্গির ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতির  আলো নিভিয়ে দিতে গ্রেফতার করেছিলেন জামানার মোজাদ্দেদ আলফেসানী (র.) কে। তার সমর্থকরা স¤্রাট জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তিনি তাদের নিবৃত্ত করেছিলেন। বাস্তবতা হল একদিকে স¤্রাট জাহাঙ্গির যেমনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তেমনি মুজাদ্দেদ যে কারাগারে ছিলেন সেখানকার লোকেরা ইসলামে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তার চেয়েও বড় কথা সেই মোগল পরিবারেই জন্ম নিয়েছিলেন স¤্রাট আওরঙ্গজেব। যিনি একজন সাচ্চা মুসলিম ছিলেন। এই যে পরিবর্তন এটা প্রমাণ করে যেখানে আক্রমণ এবং ইসলামের বাতি নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে সেখানেই ইসলামের আলো আরো বেশি প্রজ্বলিত হয়েছে। এর কারণ ইসলামের অভ্যন্তরেই রয়েছে। ইসলামের সাম্যবাদী ধারণা  কোন তাত্ত্বিক বিষয় নয়।
এ অঞ্চলে ষষ্ট শতকের দিকে বর্ণবাদ ও ব্রাহ্ম্যণ্যবাদের উদ্যোগে ব্যাপকহারে যে  নিধনযঞ্জ শুরু হয়েছিল তার পরিণতিতে এ অঞ্চলে ধর্মীয় বিশ্বাসের আস্থাহীনতার সংকটের যে যুগ শুরু হয়েছিল তার অবসান ঘটেছিল ইসলামের আবির্ভাবে। এ দেশের সাধারণ মানুষ স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিল কিভাবে একপাত্রে সকলে খানা খায়, কিভাবে সকলে একত্র হয়ে ধর্ম পালন করে। মুসলিম সংস্কৃতির এই বাস্তবতা যে সে সময়ের মানুষের মনে কত গভীর রেখাপাত করেছিল তার বিবরণ সে সময়ের ইতিহাসেও লিপিবদ্ধ রয়েছে। আজো সে উদাহরণ বিদ্যমান। দুনিয়াব্যাপী মুসলমানদের যে তাবলীগ জামায়াত কাজ করছে সেখানে কিন্তু একপাত্রেই সকলে খানা খাচ্ছে। আমন্ত্রিত-অনামন্ত্রিত সকলেই একপাত্রে এক সাথে বসে খানা খাচ্ছেন। এই যে একপাত্রে খানা খাওয়া এটা যে নিজেদের মধ্যকার সৌহার্দ্য স্থাপনে কতবড় তাৎপর্যপূর্ণ তা লিখে বা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। অনেকে একে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। আজকে যারা হাত দিয়ে খান খেতে পছন্দ করেন না তাদের কথা না হয় থাক। যারা হাত দিয়ে খানা খান তাদের অনেকেও নানা অভিমত ব্যক্ত করেন। বাস্তবতা হলো এই যে, একত্রে বসে খানা খাওয়া এবং জামায়াতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করার সংস্কৃতি এটার সুফল কিন্তু দুনিয়াব্যাপী দেখা যাচ্ছে। সারা দুনিয়াতে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। দুনিয়াব্যাপী মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধিকে কেবল পরিবারভিত্তিক মনে করার কোন কারণ নেই বরং ধর্মান্তরিতকরণের কারণেই এটা হচ্ছে। খুব ছোট একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যে মার্কিন ও তার মিত্রশক্তিরা আফগানিস্তান ও ইরাক আগ্রাসণে সৈন্য পাঠিয়েছে তাদের হাতে যারা ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে ঐ সব দেশের নাগরিক। সহজ বিবেচ্য, অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত দেশগুলো নিয়ে  না হয় এক ধরনের অভাব তত্ত্বের কথা বলা হয়, ঐসব দেশের নাগরিকরা কেন লড়াই করতে এসেছিল। নিশ্চতভাবেই এটা বলা যায়, সামাজিক বৈষম্য যেমন তাদের ঐ সমাজের প্রতি ক্ষুব্ধ করেছে তেমনি ইসলামের সৌন্দর্য্য তাদের মুগ্ধ করেছিল। ঠিক যেভাবে এ অঞ্চলে নিপীড়িত সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল এক্ষেত্রেও হয়ত এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি। আজো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর আসছে প্রতিদিনই বিশ্বের অনেকেই ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকেই সে কারণে মনে করছেন যেভাবে পাশ্চাত্য বিশ্বে ইসলাম গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে তাতে ভোগবাদী সংস্কৃতি নতুন হুমকির মুখে পড়েছে। এ ধারণা হয়ত একেবারে অমুলক নয়। পর্দা মুসলিম সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। এই পর্দাকে যারা সহ্য করতে চান না তারা প্রত্যক্ষ করছেন পাশ্চাত্যের নারীরাই এখন ইসলামী সংস্কৃতি পর্দাকে পছন্দ করছেন এবং মুসলিম হচ্ছেন। মূলত পর্ণোগ্রাফির মত নারী নির্যাতনের বাস্তবতা প্রমাণ করছে সেখানকার নারীরা নামে স্বাধীন হলেও প্রকৃতপক্ষে ভোগ্যপণ্য। সে কারণেই ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতি হয়ত তাদের মন জয় করেছে, আকৃষ্ট করেছে এবং করছে। হতে পারে সে কারণই অনেকের আলোচনায় মুসলিম বিষয়টি দিন দিন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
মানুষের জ্ঞান যতই বিকশিত হচ্ছে মানুষ ততই ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। দার্শনিকভাবে ভোগবাদ এবং প্রকৃত জবাবদিহিতার মধ্যে যে চেতনাগত বিষয় রয়েছে সেখানে এখনো এতকিছু জানার রয়েছে যেখানে ভোগবাদীরা পৌঁছতে পারেনি। জীবন জিজ্ঞাসার অনেক প্রশ্নের এখনো সমাধান করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। প্রকাশ্যত সত্যবাদী বলে তারা দাবি করলেও প্রকৃত বিবেচনায় মিথ্যার উপর ভিত্তি করে চলা তাদের জীবনাচারে শূন্যতাই দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। মুসলিম সংস্কৃতি রক্ষার লড়াইয়ে কোন জঙ্গিত্বের অস্তিত্ব নেই। আল্লাহর রাসূলের প্রাথমিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত কোথাও এর নজির পাওয়া যাবে না যে ধর্ম প্রচারে যুদ্ধের কোন প্রয়োজন হয়েছে। একজন প্রকৃত ধার্মিকের প্রধান শক্তি হচ্ছে তার আত্মবিশ্বাস, সততা, উন্নত নৈতিক আদর্শ। সে হচ্ছে পরশপাথর যার সংস্পর্শে এলে সবকিছু খাঁটি সোনায় রূপান্তরিত হয়ে যায়। বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি রক্ষায় বড় ধবনের আঘাত আসে সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়ার মধ্যদিয়ে। এরফলে দিন দিন সমাজ এক চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলতার দিকে যাচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যেন ইসলামের পক্ষে কথা বলাটাই একটা অপরাধের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসী নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করে এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যেখানে  সাধারণ জীবন-যাপনও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাসঙ্গিকতায় নারায়ণগঞ্জের কথাই বলা যায়। একজন  শিক্ষকের কান ধরার বিষয় শেষ পর্যন্ত উচ্চতর আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। অবশ্যই একজন প্রধান শিক্ষকের অপরাধের বিচার কি হবে কেমন হবে তার জন্য আইন-আদালত রয়েছে। তবে একথা কোন বিবেচনাতেই বলা যাবে না যে, একজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তির অনুমতি রয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে বিবিসির প্রতিবেদনে অন্য বিষয়ের সাথে এটাও স্পষ্টভাবেই উঠে এসেছে যে তিনি মহান স্রষ্টা আল্লাহকে নিয়ে দায়িত্বহীন উক্তি করেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য যিনি এ আলোচনায় রয়েছেন তিনিও বিষয়টি  স্পষ্ট করেছেন। এটাও বিবেচ্য বিষয় হতে হবে। ধর্মীয় সংস্কৃতি রক্ষার অধিকার জাতিসংঘ সনদে স্বীকৃত। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা যেকোন বিবেচনাতেই অমার্জনীয় অপরাধ।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট  রিসেপ তাইয়েব এরদোগান সম্প্রতি এক আলোচনায় একটি চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন আমি সিয়া-সুন্নী নই আমি একজন মুসলমান। কিছুদিন আগে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীও সারা দুনিয়ার বিশেষ করে পাশ্চাত্য বিশ্বকে চলমান বিপর্যয় থেকে আত্মরক্ষার জন্য ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রকৃত বিবেচনায় এটা এখন বোধহয় প্রমাণের সময় এসছে যে, একজন মুসলমানই একজন উত্তম মানুষ। লন্ডনের মেয়র পদে সাদিক খানকে বিজয়ী করে লন্ডনবাসী যেভাবে একজন উত্তম মানুষকে বেছে নিয়েছে তেমনিভাবে আজ যদি সমাজ রাষ্ট্র উত্তম মানুষদের হাতে পরিচালিত হতে পারে বা পারত তাহলে বোধকরি সমাজের বিদ্যমান সংকটের অর্ধেকেরও বেশি সমাধান এমনিতেই হয়ে যেত। গত কয়েকবছর ধরে আমাদের সমাজে কোন কোন মহল যেভাবে ইসলাম বিদ্বেষকে প্রধান উপজীব্য হিসেবে গ্রহণ করেছে তাতে বোধকরি ইসলামের প্রচার ও প্রসার বেড়েছে বৈকি কমেনি। মানুষ বর্তমান দুনিয়ায় যে শান্তির প্রত্যাশি তা কেবলমাত্র ইসলামী সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব। ড. শুজা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীকে যে পদ্ধতিতে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন এটা ইসলামী সংস্কৃতির অনুরূপ। এটা বোধহয় বলার সময় এসে গেছে যে যারা ইসলাম ও মুসলমানদের অবদমিত করতে অথবা অপমান করতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে তাদেরও প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার সময় এসে গেছে। শেষ করার আগে সদ্যসমাপ্ত পশ্চিমবাংলার নির্বাচনের দিকে একটু দৃষ্টি দিতে চাই। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেখানে জয় পেয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। এই জয়ের পেছনে মূলত কাজ করেছে সেখানকার মুসলিম ভোটার যারা মূলত তথাকথিত বাম প্রগতিশীল ও কংগ্রেস  সরকারের ভ-ামীর শিকার। সিঙ্গুরের ঘটনার জের কতটা তা বোধকরি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন সাবেক নেতারা। ভোট কমছে বৈকি বাড়ছে না। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে পশ্চিমবাংলা পর্যন্ত কার্যত একই চিত্র। এর পরেও যারা দেশের হালচাল  বুঝতে চান না বোধকরি তাদের চোখ থাকলেও তা দিয়ে দেখার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। ‘প্রবল প্রমাণকে অবিশ্বাস করে মিথ্যা আশাকে দুই বাহু পাশে’ জড়িয়ে রেখেছেন।

awalthakur@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন