শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে মাদারীপুরের শিবচর। পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের ওই মহাসড়ক দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। ২০১২ সালে পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবহিকতায় ফুল, ফল আর বনজ গাছ শুধুই সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করছে না। সে সঙ্গে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার ঢাল হিসেবে বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে।
মহাসড়কের দুই দিকে সবুজ ঘাসের বুকে উঁকি দিচ্ছে দিগন্ত বিস্তৃত সাদা ঘাসফুল। এমন দৃশ্য পদ্মা সেতুর দক্ষিণ পাড়ের অঞ্চলকে এক অপূর্ব সৌন্দর্যে সাজিয়ে তুলছে। এ অঞ্চলটি ২০২২ সালের মধ্যেই সবুজ বেষ্টনিতে পরিণত হবে বলে আশা করছেন জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দাসহ মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন (আরএস) এলাকা সবুজায়নের ফলে পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে ছায়া ঘেরা পরিবেশ। এপ্রোচ সড়কও আগামী দুই বছরের মধ্যে সবুজে বেষ্টিত হবে। ইতোমধ্যে সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন (আরএস) এলকাজুড়ে খোলা আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, কাঞ্চন, সোনালু, মহুয়া, বহেরা, অর্জুন, পলাশ ও শিমুলসহ প্রায় ৮০ হাজার ফলদ ও ঔষধি গাছ।
আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলটি সবুজের ছায়াঘেরা একটি মনোরাম পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে বলে আশাবাদি সংশ্লিষ্টরা। এতে করে গত তিন দশকের গাছশূন্য এ চর রূপান্তরিত হবে গ্রীণ হাউজে। যা ক্ষতিকর জলবায়ুর প্রভাব থেকে এই অঞ্চলকে রক্ষা করতে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর গোলচত্বর পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেস হাইওয়ের মাঝখানের অংশে লাগানো হয়েছে পাতাবাহার, মশুন্ডা, সোনালু বন্দুন, বোতল ব্রাশ, এরিকা পাম্প, উইপিং দেবদারু ও রঙ্গনসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারি ফুলের ৬ হাজার গাছ সহ ৫৬ প্রজাতির প্রায় দেড় লাখ গাছ রোপণ করা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মীদের পরিচর্যা আর প্রকৃতির মহিমায় সড়কের ঢালে ফলজ ও বনজ গাছের চারাও বেড়ে উঠছে।
শরীয়তপুর থেকে ঢাকা যাবেন গণবিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুর খান। তিনি মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে এসে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না, মহাসড়কটি ফুলের গাছ দিয়ে এমনভাবে সাজানো হয়েছে। মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছি। দুই পাশের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মন ভরে যাচ্ছে।’
শরীয়তপুরের জেলার নড়িয়া উপজেলার ইতালি প্রাবাসী খোকন বেপারী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর এপ্রোচ সড়কের আইল্যান্ডে যে গাছ লাগানো হয়েছে, তা সত্যি অসাধারণ। মহাসড়কের এই ১০ কিলোমিটার পথে চলার সময় মনে হয় না বাংলাদেশে আছি। উন্নত বিশ্বের কোনও দেশে আছি বললেও ভুল হবে। কারণ মহাসড়কের মাঝে আইল্যান্ডে ফুলের গাছ। দুই পাশে ফলের গাছ। এমন সৌন্দর্যময় প্রকৃতির ছায়ায় সাজানো দৃশ্য আমার চোখে পড়েনি।’
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ইনকিলাবকে বলেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে জাজিরা তীরে বনায়ন হচ্ছে। এই বনায়নের ফলে এলাকায় প্রাকৃতিক নৈস্বর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এলাকায় পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এখনই যে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে তাতে ভ্রমণ পিয়াসীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সরকারের এ উদ্যোগকে পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের জাজিরার মানুষ অভিনন্দিত করেছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের ইনকিলাবকে বলেন, পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের জাজিরা অংশে বন বিভাগের মাধ্যমে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ গত বছর থেকে সবুজায়নের প্রকল্প হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে ফুল, ফল ও ঔষুধি গাছের চারা লাগানো হয়। ইতোমধ্যে এলাকাটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ভ্রমণ পিয়াসু দর্শনার্থীদের ভিড় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামীতে এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক পর্যটন এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন